জিডিপি বৃদ্ধি-মাথাপিছু আয়ের সরকারি হিসাব শুধু কাগজে কলমে!
- আপডেট সময় : ০১:১১:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
বিগত সরকারের আমলের সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ, সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার মন্দ ঋণ, রিজার্ভ ঘাটতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা। এর উপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয়ের সরকারি হিসাব শুধু কাগজে কলমে। তবে, গোড়া থেকে পুরো পদ্ধতি ও আইন পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ সম্ভব- মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেট নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। সে সময় জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হয় ৬.০৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর সবশেষ এ সরকারের পতনের আগে ২০২৪-২৫ বাজেট নির্ধারণ করা হয় ৭ লাখ ৯৭ কোটি টাকা এবং জিডিপির হার ধরা হয় ৬.৭৫ শতাংশ।
এদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.৮ শতাংশ। সে সময় মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৩ ডলার। আর শেখ হাসিনা পতনের আগে সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪.১০ শতাংশ এবং এসময় মাথাপিছু আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। মাথাপিছু আয় এত বেশি বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে টাকার বিপরীতে ডলার দাম বৃদ্ধি। গত ১৫ বছরে প্রতি ডলারের দাম ৪৯ শতাংশ বা প্রায় ৩৯ টাকা বেড়েছে।
এদিকে গত ১৫ বছরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখে দেশ থেকে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই বছর বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বা মাথাপিছু আয় যেভাবে বেড়েছে, তা শুধু কাগজে কলমে বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতিবিদ এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে জিডিপি গ্রোথের সুবিধা বেশিরভাগ মানুষ পায় না সে জিডিপি অর্থপূর্ণ না। আমরা তো দেখেছি দেশের অর্থনীতিতে মানুষের যে আর্থিক অবস্থা, তাদের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। তাই এটা অর্থপূর্ণ না, এটা সংখ্যা মাত্র।’
এদিকে ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। সেটা সবশেষ চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এতে ১৫ বছরে এই ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। আর ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের বড় ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের তথ্য জানা গেছে। একই সাথে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৭.৪৭ বিলিয়ন। পরে তা ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও ঋণ পরিশোধ এবং অর্থপাচারের কারণে তা এক সময় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।
গত ১৫ বছরে যে দুর্নীতি হয়েছে তা সংস্কারে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে সময়ের প্রয়োজন। তাই, এখন থেকেই সেই পদক্ষেপগুলো নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুর্নীতি হওয়ার একটা বড় কারণই হলো কাজগুলোর ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। এ অভাবকে তাড়ানো সম্ভব যদি এই সমস্ত কার্যক্রম ট্রান্সপারেন্ট করা যায়। অর্থঋণ আদালতকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অর্থঋণ আদালতকে শক্তিশালী করতেই হবে। দেখা যাচ্ছে অর্থঋণ আদালতকেও অনেকসময় ব্যবহার করা হয় খেলাপি ঋণকে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার উপায় হিসেবে।’
অপরদিকে অর্থনীতি সচল রাখতে যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কাজ করে সেগুলো গত ১৫ বছরে দুর্নীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান অর্থনীতিবিদ এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘পলিসিতে রিফর্ম আনতে হবে। যেমন দুর্নীতি ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এই দুর্নীতিটা কমিয়ে আনতে হবে। এটার জন্য যে বডিগুলো থাকা দরকার সেগুলো চেক এবং ব্যালেন্স থাকতে হবে। যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা নিজেদের স্বার্থে এগুলো করতে দেননি।’
সংস্কারের সাথে সাথে একাধিক পর্যায়ে এর নজরদারি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে কঠিন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পরামর্শ বিষেশজ্ঞদের।