১১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারী বৃষ্টি-ঢলে আখাউড়ায় পানিবন্দি ৫ শতাধিক পরিবার

ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। তীব্র পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে স্থলবন্দর। ফসলি জমি ডুবেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা তীব্র ঢলের পানি। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের জাজিরা খালে, ঢলের পানিতে বেইলি সেতু তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মোগড়া, মনিয়ন্ধ ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, বুধবার সকাল থেকে তীব্র বেগে ভারত থেকে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এতে দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামে পানি উঠেছে। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে গেছে। কৃষি জমি ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। আব্দুল্লাহপুর প্রাইমারী স্কুলে ১৫ থেকে ২০টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার এখন পানিবন্দি।

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, ‘মঙ্গলবার রাতে বাড়ি-ঘর সব ফেলে উঠে এসেছি আব্দুল্লাহপুর স্কুলে। এখানেই ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছি। কবে বাড়ি ফিরব জানি না।’

উজানের ঢলে উপজেলার তিনটি বাঁধ ভেঙেছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামতের চেষ্টায় শেষরক্ষা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাঁধ ঘুরে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। কর্মকর্তারা এসে যে তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে সেগুলো পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া আমাদের উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি যেমন মোগড়া, মনিয়ন্ধ, দক্ষিণ আখাউড়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’

উজানের ঢলে আখাউড়ায় তিন হাজার একরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, ভেসে পুকুরের মাছ।

এদিকে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। টানা তিন দিনের বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা থেকে ঢলের পানি মিলে গোমতীর এই ভয়ঙ্কর রূপ গত ২০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রচণ্ড স্রোত আর পানির অস্বাভাবিক উচ্চতায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে হয়েছে সহস্রাধিক পরিবারকে। অন্তত ৪ হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় গোমতীর দু-কূল ছাপিয়ে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। চরের হাজার একর সবজি খেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবনের তোড়ে পানি উপচে আশপাশের এলাকা ডুবে যাবার শঙ্কায় অনেকেই বাঁধ দেখতে ভিড় করেছেন নদীর তীরে।

গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত ২০ বছরের বেশি সময় পর এ বছরই গোমতীর পানি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরের ভেতর বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার দুপুরে বেড়িবাঁধের ভেতরের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে পানের নিচে। নদীর বাঁধের কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করতে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে।

ভারী বৃষ্টি-ঢলে আখাউড়ায় পানিবন্দি ৫ শতাধিক পরিবার

আপডেট : ০১:১৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। তীব্র পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে স্থলবন্দর। ফসলি জমি ডুবেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা তীব্র ঢলের পানি। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের জাজিরা খালে, ঢলের পানিতে বেইলি সেতু তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মোগড়া, মনিয়ন্ধ ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, বুধবার সকাল থেকে তীব্র বেগে ভারত থেকে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এতে দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামে পানি উঠেছে। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে গেছে। কৃষি জমি ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। আব্দুল্লাহপুর প্রাইমারী স্কুলে ১৫ থেকে ২০টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার এখন পানিবন্দি।

বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, ‘মঙ্গলবার রাতে বাড়ি-ঘর সব ফেলে উঠে এসেছি আব্দুল্লাহপুর স্কুলে। এখানেই ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছি। কবে বাড়ি ফিরব জানি না।’

উজানের ঢলে উপজেলার তিনটি বাঁধ ভেঙেছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামতের চেষ্টায় শেষরক্ষা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাঁধ ঘুরে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। কর্মকর্তারা এসে যে তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে সেগুলো পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া আমাদের উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি যেমন মোগড়া, মনিয়ন্ধ, দক্ষিণ আখাউড়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’

উজানের ঢলে আখাউড়ায় তিন হাজার একরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, ভেসে পুকুরের মাছ।

এদিকে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। টানা তিন দিনের বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা থেকে ঢলের পানি মিলে গোমতীর এই ভয়ঙ্কর রূপ গত ২০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রচণ্ড স্রোত আর পানির অস্বাভাবিক উচ্চতায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে হয়েছে সহস্রাধিক পরিবারকে। অন্তত ৪ হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় গোমতীর দু-কূল ছাপিয়ে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। চরের হাজার একর সবজি খেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবনের তোড়ে পানি উপচে আশপাশের এলাকা ডুবে যাবার শঙ্কায় অনেকেই বাঁধ দেখতে ভিড় করেছেন নদীর তীরে।

গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত ২০ বছরের বেশি সময় পর এ বছরই গোমতীর পানি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরের ভেতর বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার দুপুরে বেড়িবাঁধের ভেতরের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে পানের নিচে। নদীর বাঁধের কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করতে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে।