ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ সাত জেলায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পানিবন্দি আছেন প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মাইলের পর মাইল ছুটছেন বন্যা দুর্গতরা। দুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না অনেকেই। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সেনাসদস্যদের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট আর ফসলি জমি। অনেকেই জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির ছাদে আর ঘরের চালে। যতদূর চোখ যায় শুধুই পানি আর পানি। ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁঞাসহ প্রায় সব উপজেলায় পরিস্থিতি একইরকম। এতে পানিবন্দি হয়ে আছে লাখো মানুষ।
জেলায় সব থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া, মির্জানগর, বসুরা, আনন্দপুর, কালিকাপুরসহ বেশ কিছু এলাকার। ঘরবাড়ি সব তলিয়ে যাওয়ায় নি:স্ব হয়ে পড়েছেন মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। গলা অবধি পানিতে নেমে দলে দলে দুর্গতরা ছুটে আসছেন জেলা শহরের দিকে।
স্পিডবোট নিয়ে দুর্গতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংগঠন। তবে চাহিদার তুলনায় সাহায্য অপ্রতুল। জেলা শহরের সঙ্গে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে সড়ক যোগাযোগ। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না দুর্গতরা। ধারণার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়ে আছে ফেনীর।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমার স্বামী পরশুরামে চাকরি করে। তিনি সেখানে একা আটকা পড়েন। আজ চারদিন হচ্ছে তার কোনো খোঁজখবর পাইনি। যারা মেইন রোডের আশেপাশে আছে তারা বাঁচতেছে, আর যারা গ্রামের দিকে আছে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।'
একজন উদ্ধারকারী বলেন, 'ঢাকা সদরঘাট থেকে আমরা একটা বোট ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। সেই একটা বোট দিয়েই আমরা এই পুরো এলাকায় উদ্ধার কাজ চালাচ্ছি।'
গত ৪০ বছরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি চট্টগ্রামের মানুষও। হালদার বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। সহায় সম্বল নিয়ে কোমর আর গলা সমান পানি মাড়িয়ে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এখন হাজারও মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধদের কোলেপিঠে করে নিয়ে আসছেন স্বজনরা। ঘর, বাড়ি, দোকানপাট, বাজারসব ডুবেছে পানিতে। চট্টগ্রামে পানিবন্দি হয়ে আছে দুই থেকে তিন লাখ মানুষ। সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান ও মীরসরাইয়ের।
এদিকে, ভারি বৃষ্টি ও ফেনীর মুহুরি নদী থেকে নেমে আসা পানিতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে জেলার নয়টি উপজেলা। সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, সদর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্নচর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে, শুক্রবার সকাল থেকে রোদের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা বের হচ্ছি না আজ প্রায় এক সপ্তাহ। ঘর-দুয়ারে পানি উঠে গেছে। খাওয়া-দাওয়ার খুবই অসুবিধা হচ্ছে।'
কিছুটা স্বস্তি মিলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত থেকে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে, এখনও পানিবন্দি ৪০টি গ্রাম। আখাউড়া স্থলবন্দরে পানি কমলেও স্বাভাবিক হয়নি পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী পারাপার।
এদিকে হবিগঞ্জে পাঁচটি উপজেলায় পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে দুর্গতরা জীবন বাঁচাতে ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেও নেই পর্যাপ্ত খাবার সহায়তা। গত তিন মাসে চতুর্থ বারেরমতো প্লাবিত হওয়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিম্নঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে ৩০টি গ্রাম। পানি বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ডুবে বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।