উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে দেশের ১২টি জেলায়। বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ফেনীতে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল স্রোতের কারণে বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড় ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত সোমবার (১৯ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বন্যায় দেশের ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা ও ৫৮৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই নারীসহ ১৩ জন মারা গেছেন। কুমিল্লায় চারজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে দুইজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত তিন হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগদ তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে আব্দুস শুক্কুর (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার মেয়ে মোস্তফা খানম (২০) গুরুতর আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) এবং ঈদগড় ইউনিয়নের বৈদ্য পাড়ার চচিং রাখাইন (৫৫)। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- গর্জনিয়া ইউনিয়নের ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫) এবং ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরিপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০)।
চট্টগ্রাম: বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীতে বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘরে বন্যার পানি ঢুকে গেলে সাকিব আইপিএসের সংযোগ খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে তিনদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাকসাম উপজেলায় খালিদ মাহমুদ নামে এক আলিম পরীক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তিনি বন্যার্তদের জন্য পানি পৌঁছে দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। একই দিন বিকেলে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে লাকসাম উপজেলার একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে ওই আইনজীবী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে যান তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বুধবার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় মাথায় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি ব্রিজের নিচে তলিয়ে যান কেরামত আলী। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলের কাছেই তার মরদেহ ভেসে ওঠে। বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় আরও একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম এখনো জানা যায়নি।
নোয়াখালী: বুধবার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বন্যার পানি ঘরে ঢুকে আইপিএস নষ্ট হওয়ায় সেটি মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাকন কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রাঙামাটি: রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী নদীতে ডুবে শ্রেষ্ট চাকমা (০৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কুকুরমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে সুবর্ণা আক্তার (২৩) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ঘরে পানি ওঠায় পাশের বাড়ি যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে একটি গর্তে পড়ে ডুবে যান তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।