দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণত্রাণ’ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ত্রাণ রাখার মতো আর জায়গা নেই। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর নতুন জায়গা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠ সংলগ্ন জিমনেশিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এক ভিডিও বার্তায় এমন ঘোষণা দেন সমন্বয়ক এম এ সাঈদ। ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শুধু বুথ থেকেই সর্বমোট ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ রাত ১০টা পর্যন্ত গণত্রাণ কর্মসূচিতে অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ চলমান থাকবে।
এদিকে, আজ শনিবার গণত্রাণ কর্মসূচির তৃতীয় দিন সকাল থেকে টিএসসিতে ত্রাণ দিতে মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, সিএনজি, ভ্যান ও রিকশায় বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসছেন। বিকেলে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবকদের। সন্ধ্যা নাগাদ তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এসময় ট্রাক ভরে ভরে ত্রাণসামগ্রী আসতে থাকে।
দিনভর বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী আসায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম বারান্দা ও অন্যান্য জায়গা ত্রাণসামগ্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। টিএসসির বারান্দাতে ত্রাণসামগ্রীর বিশাল স্তূপ লক্ষ্য করা যায়। বিপুল পরিমাণ জরুরি ওষুধ টিএসসির দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়। ফলে টিএসসিতে নতুন করে ত্রাণ রাখার জায়গা নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন জানান ত্রাণ সামগ্রী ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত দুইদিনে আমরা জন সাধারণের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী যে যা পেরেছে দান করেছে। আজ ভোত রাত পর্যন্ত আমরা ২৫ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে পেরেছি। ইতোমধ্যে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম ও বারান্দাগুলো পূর্ণ হয়ে আছে। আজকে রাতে আবারও ডজনখানেক ট্রাক বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় পৌঁছে যাবে। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবো।
আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) টানা তৃতীয় দিনের মতো টিএসসি প্রাঙ্গণে গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-ছাত্রীরা। গত দুদিন ধরে এই ত্রাণ কর্মসূচি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাই আজ তৃতীয় দিন এই কর্মযজ্ঞ বেড়েছে আরও বহুগুণ।
গেট জুড়ে একের পর এক গাড়ি ঢুকছে। কেউ নিয়ে আসছেন জামাকাপড়, কারও গাড়িতে শুকনা খাবার। কেউ আবার নিয়ে এসেছেন মেয়েদের স্যানেটারি ন্যাপকিন। এমনকি কম্বল, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, বালিশ, তোষক আরও অনেক কিছু। এক এক করে গাড়ি প্রবেশ করছে আর গাড়ি থেকে নামছে বস্তাভর্তি এসব ত্রাণ। এ যেন ত্রাণের এক মানবিক উৎসব!
এদিকে, শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। টাকা কালেকশন কমিটিতে থাকা রকিব মাসুদ ফেসবুক পোস্টে বলেন, চেকসহ ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার টিএসসি বুথ থেকে কালেকশন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
টিএসসি বুথ থেকে বলা হয়, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাওয়া টাকা গুনে আমরা মোট ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পেয়েছি। রাত ১০টা পর্যন্ত ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া আমরা বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছি, যা গতকালের তুলনায় অনেক বেশি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ত্রাণ সহায়তা করবেন যেভাবে:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া যাবে। অনলাইনে বিকাশ, নগদ, রকেট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিম্নোক্ত নম্বরগুলোতে অর্থ সহায়তা পাঠানো যাবে।
মোবাইল ব্যাংকিং :
বিকাশ ও নগদ : 01886969859, রকেট : 018869698597 মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বর দুটি মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট। তাই টাকা পাঠানোর সময় অবশ্যই পেমেন্ট করতে হবে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট :
Mohammad Anisur Rahman
Account : 20503100200291004
Badda Branch, Dhaka
Islami Bank Bangladesh
Swift code: IBBLBDDH
Routing Number: 125260341