ঢাকা ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

এক বক্তব্যে ড. ইউনূস জানালেন কর্মপরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:২৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনস্বার্থের বিপরীতমুখী একটি রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে দেশ গড়তে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, ‘নড়বেড় এক কাঠামো উপর দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এদেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়।’ আজ (রোববার, ২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণে একথা বলেন।

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তাদের তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল ইতোমধ্যে এসে গেছে।’

ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সকল আহত শিক্ষার্থীর ব্যয় ও নিহতের পরিবারের ভার সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এনেছে।’

আপনাদের সবার এবং বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এই প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য আহ্বান করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।’

লুটপাট ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে যোগ্য ব্যাক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মুল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু হয়েছে।’

ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া তিনি জানান, শেয়ার বাজার, পরিবহণ খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

গুম ও খুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আয়না ঘরসহ যত গুম ও খুনের পেছনে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়না ঘরের মত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘যারা গুম খুনের স্বীকার হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে অন্তরবর্তী কালীন সরকার।’

আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ যাতে কোনদিন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।’

আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহীতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী, র‌্যাব পুলিশকে গুম খুনের কাজে লাগিয়ে কলঙ্কিত করা হয়েছে। যারা অপরাধ করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল সংস্থা ও জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।’

বিদেশী সংবাদ কর্মীদের এ দেশে আসার বিষয়ে যে অলিখিত বাধা ছিল তা তুলে নিয়েছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।’

শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ দূর করতে কাজ করবে সরকার।’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সাথে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিরোধীতা করবে।’ আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন।’

পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ঘুসের রাজ্য বন্ধ করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে অন্তরবর্তীকালীন সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে অন্তরবর্তী কালীন সরকার সর্বচ্চ গুরুত্ব দেবে।

তিনি বলেন, ‘দেশ গঠনে সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বিদেশী কূটনীতিক ও সংস্থার কাছে।’ প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে পাঠানোর অনুরোধ জানান ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

অন্তরবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়— আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।

ড. ইউনূস আরও বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ—আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এক বক্তব্যে ড. ইউনূস জানালেন কর্মপরিকল্পনা

আপডেট সময় : ১০:২৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনস্বার্থের বিপরীতমুখী একটি রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে দেশ গড়তে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, ‘নড়বেড় এক কাঠামো উপর দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এদেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়।’ আজ (রোববার, ২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণে একথা বলেন।

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তাদের তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল ইতোমধ্যে এসে গেছে।’

ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সকল আহত শিক্ষার্থীর ব্যয় ও নিহতের পরিবারের ভার সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এনেছে।’

আপনাদের সবার এবং বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এই প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য আহ্বান করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।’

লুটপাট ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে যোগ্য ব্যাক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মুল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু হয়েছে।’

ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া তিনি জানান, শেয়ার বাজার, পরিবহণ খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

গুম ও খুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আয়না ঘরসহ যত গুম ও খুনের পেছনে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়না ঘরের মত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘যারা গুম খুনের স্বীকার হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে অন্তরবর্তী কালীন সরকার।’

আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ যাতে কোনদিন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।’

আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহীতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী, র‌্যাব পুলিশকে গুম খুনের কাজে লাগিয়ে কলঙ্কিত করা হয়েছে। যারা অপরাধ করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল সংস্থা ও জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।’

বিদেশী সংবাদ কর্মীদের এ দেশে আসার বিষয়ে যে অলিখিত বাধা ছিল তা তুলে নিয়েছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।’

শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ দূর করতে কাজ করবে সরকার।’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সাথে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিরোধীতা করবে।’ আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন।’

পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ঘুসের রাজ্য বন্ধ করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে অন্তরবর্তীকালীন সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে অন্তরবর্তী কালীন সরকার সর্বচ্চ গুরুত্ব দেবে।

তিনি বলেন, ‘দেশ গঠনে সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বিদেশী কূটনীতিক ও সংস্থার কাছে।’ প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে পাঠানোর অনুরোধ জানান ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

অন্তরবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়— আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।

ড. ইউনূস আরও বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ—আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।