কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসা আনসার সদস্যরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বলে জানান বিকেলে। জানা যায়, মেনে নেওয়া হয়েছে তাদের যৌক্তিক দাবি। তারপরই আনসারদের একাংশ ঘেরাও করেন সচিবালয়। সেখানে আটকে রাখেন সমন্বয়কদের। এই খবরে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন তারা। পেটুয়াদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আনসার সদস্যদের অনেকে। পরে স্রোতের মতো আসতে থাকনে শিক্ষার্থীরা। তাদের ধাওয়ায় পালিয়ে যান আনসার সদস্যরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দুই সদস্যও রয়েছেন।
রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। এদের মধ্যে চার থেকে পাঁচজন আনসার সদস্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে আটক রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। এ সময় কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে আনসার সদস্যরা। পরে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আনসার সদস্যরাও পিছু হটে। প্রথমদিকে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে।
এর আগে, আনসার সদস্যরা সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর চালান। পরে চারিদিক থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল আসায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন আনসার সদস্যরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে অধিকাংশ সদস্যদের নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেক আনসার সদস্য মারধর, লাথি, কিল, ঘুসি আর লাঠিপেটার শিকার হন।
রাত ১০টার পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সচিবালয়ে সংঘর্ষের পর আটকে পড়া আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর পাশেই অবস্থান নিয়েছে হাজারো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
আনসার সদস্যদের আন্দোলনের কারণে টানা সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আনসার সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর রোববার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর বের হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এর আগে সচিবালয় থেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে করা লাইভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান সেখানের পরিস্থিতি। এরপর পরই এক পোস্টে তিনি লেখেন, সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পেটাচ্ছে।
জানা গেছে, আনসার সদস্যদের আন্দোলনের কারণে টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সমন্বয়কদেরও সচিবালয়ে আটকে রেখেছেন আনসার সদস্যরা।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। ১০ মিনিট মতো আগে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ্ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, সবাই রাজুতে আসেন। স্বৈরাচারীশক্তি আনসার হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দাবি মানার পরও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, হাজার-হাজার আনসার সদস্য সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে করে সবগুলো গেট বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টায় অফিস ছুটি হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছেন না।
ঘণ্টাখানেক আগে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ্ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘দাবি মেনে নেওয়ার পরও আনসার সদস্যদের একটি অংশ এখনো উপদেষ্টাদের সচিবালয়ে আটকে রেখেছে। এই সংকটের সময়ে তারা সবাইকে আটকে রেখে ব্লেকমেইল করছে।’
এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে লাইভে হাসনাত সবাইকে আবারও রাজু ভাস্কর্যের কাছে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের দিকেও যাওয়ার কথাও বলেন।
আর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লেখেন, ‘সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পেটাচ্ছে।