স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করেছে ভারত!
- আপডেট সময় : ১২:৩৭:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
অভিন্ন নদীতে ব্যারেজ কিংবা ড্যাম তৈরি ভারতের ভূরাজনৈতিক অস্ত্র। ভারত তিস্তা ও ফারাক্কাসহ বেশিরভাগ অভিন্ন নদীর পানি নিজের দেশের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। যা আন্তর্জাতিক নদী আইনের লঙ্ঘন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতেই এমন নীতি গ্রহণ করেছে প্রতিবেশি ভারত।
স্বাধীন গতিতে বহে জলের প্রবাহ। জলের এই স্বাধীনতা হরণ করার সাধ্য কার? তবুও স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিয়ে নদীর গতিপথ বদলে দিয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারত। আর স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত পানি বঞ্চিত করে আসছে বাংলাদেশকে।
উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চল সিকিম পাহাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া নদী তিস্তা, বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই বাধা পায় ওপারের গজলডোবায়। গুগল আর্থের ছবিতে দেখা যায়, তিস্তা ব্যারেজের ওপার, পানিতে টয়টম্বুর আর এপার, শুকনো মরু। খাল কেটে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, দিনাজপুর, কোচবিহার ও মালদহ জেলায় সরবরাহ হয় তিস্তার পানি।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে গজলডোবা বাঁধের সবগুলো জলকপাট খুলে দেয় ভারত। এতে হু হু করে পানি ঢুকে বন্যায় ভেসে যায় উত্তরের জনপদ নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা। আর শুকনো মৌসুমে পানি না ছাড়ায় ধুধু বালুচরে তৈরি হয় কৃষকের কষ্টের সাতকাহন।
নদীর কোন দেশ নেই। নদী সবার হলেও ৩৯ বছর আগে নিজ স্বার্থে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প তৈরি করে ভারত। তবে এতদিনেও সুষ্ঠু পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোন চুক্তি করেনি দেশটি। আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তা চুক্তি হয়নি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
চেয়ারম্যান, নদী ও ব-দ্বীপ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজাজ বলেন, আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একটা বড় আওয়াজ তোলা হচ্ছে যে, কেন পানি ছেড়ে দিল। কিন্তু এ প্রশ্নটি তো এক সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে করা প্রয়োজন ছিল। কেন আন্তঃসীমান্ত নদীতে আমাদের না জানিয়ে বাঁধ দেয়া হবে। এটা তো আমাদেরও নদী। সুতরাং এখানে আমরা বড় একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছি। কিংবা বাংলােদেশের নতজানু নীতি কারণে কিংবা এখানে ভারত তোষণ করা হয়েছে বেশি।’
কলকাতা বন্দরের নাব্য সংকট দূর করতে গঙ্গা নদীতে বাঁধ দেয় ভারত। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা ব্যারেজ চালুর কথা বললেও সে পরীক্ষাকাল আজও শেষ হয়নি।
১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের পানিবন্টন চুক্তি হলেও এখনো পানির ন্যয্য হিস্যা বুঝে পায়নি বাংলাদেশ। অথচ কখনো খরায়, কখনো অতি বন্যায় বিলীন হয়েছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শত শত গ্রাম কিংবা ফসলি মাঠ। উল্টো ২০১৯ সালে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরায় পাঠানোর চুক্তি করেন শেখ হাসিনা।
মোহাম্মদ আজাজ বলেন, ‘কুমিল্লা ও নোয়াখালীর লোকজন যখন বলা শুরু করলো ন্যূনতম পানিটাও আমরা পাচ্ছি না। তখন ভারত এটাকে লিগালাইজ করলো। আমরা যেহেতু পানি চুরিই করি তাহলে লিখিতভাবে করে নেই। আমরা সেটা দিয়ে দিলাম। যার বিনিময়ে আবরার ফাহাদকে শহীদ হতে হয়েছিল। এ বিষয়ে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেছে তাকেও গুন্ডাবাহিনী দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।’
ভারত-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা অভিন্ন নদীর সংখ্যা খাতা কলমে ৫৪ টি হলেও ছোট বড় মিলিয়ে এ সংখ্যা শতাধিক। গবেষণা বলছে, এর প্রায় ৫০টি নদীতে ড্যাম কিংবা ব্যারেজ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধা দিয়েছে ভারত। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এই্ যে গঙ্গা ব্যারেজে বাধা দেয়া, তিস্তা ব্যারেজে বাধা দেয়া এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যেন সবসময় পানির জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকি। নির্ভরশীল থাকলে আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা থেকে আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা তাদের জন্য সহজ হয়। মিলিটারি করিডোর নিয়েছে, মংলা পোর্ট আছে, এগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা পানিকে সমন্বিত কায়দায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।’
ভারত, পানি আটকে রেখে জলবিদুৎ তৈরি করেছে কিংবা অন্য নদীতে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতেই ভারতে এমন নীতি গ্রহণ করেছে।
নদী ও ব-দ্বীপ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজাজ বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তে ৫০টি বড় নদীতে আমি এসব ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করেছি, এটা গলায় ফাঁস দেয়ার মত। প্রয়োজনে আমি এটাকে ইনস্ট্রুমেন্ট বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এখানে ইনভেস্টমেন্টের কোনো রিটার্ন নেই। সম্পূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে গত ১৫ বছরে সরকারের তালিকা অনুযায়ী, ৫৬ হাজারের বেশি নদী দখলদার তৈরি হয়েছে। এরা কারা, এরা তো আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডা ছিল।’
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৭২ সালে আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর সুষম পানিবণ্টন নিশ্চিতে যৌথ নদী কমিশন হলেও প্রতিষ্ঠানটি তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। তাই নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে, নয়তো আন্তর্জাতিক সংস্থার দারস্থ হতে হবে।
সবকটি অভিন্ন নদীর পানি বন্টন চুক্তির পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে পানি ধরে রাখার জন্য চীনের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে এখনই ভাববার সময় এসেছে বলে মত নদী বিশেষজ্ঞদের।