ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত
- আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মাঝে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। প্রবল বৃষ্টির কারণে দেশটির বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বন্যা ও পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বলছে, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পানির চাপ সামলাতে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিনে বাংলাদেশে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবেশ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে যে পরিমাণ পানি আসছে, সেই পরিমাণ পানি ছাড়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধে পানির অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। পানির চাপ বাড়ায় তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি না ছাড়া হলে ফারাক্কা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, কলকাতার নিউজ-১৮ বাংলার ভিডিও প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত শনিবার থেকে একটু একটু করে খুলতে খুলতে আজ সব কয়টি গেট খুলে দেওয়া হলো। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদক কৌশিকের সঙ্গে কথা হয় ব্যারেজের মহাব্যবস্থাপক (জিডি) আর ডি দেশপান্ডের। তিনি বলেন, এখন তো ব্যারেজের সব গেট খোলা আছে।
‘এখন যে পানি ডাউনস্ট্রিমে যাচ্ছে, তাতে সেদিকে পানির প্রবাহ বাড়তে পারে কি না, প্রশ্নে দেশপাণ্ডে বলেন, না। গতকাল তো ১১ লাখ ৩২ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া ছিল। যা ওপর থেকে আসে, তা থেকে নির্দিষ্ট অংশ বাদ দিয়ে বাকি সব ডাউন স্ট্রিমে ছাড়াই লাগে। এটি ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া ব্যারেজের কারণে আপস্ট্রিম বা ডাউনস্ট্রিমে জলাবদ্ধতার কোনো স্ট্যাডি আমাদের কাছে নেই। এটির কোনো কারণ নেই।
ফারাক্কা বাঁধে পানিধারণ ক্ষমতা ২৬ দশমিক ২৫ মিটার। বিপৎসীমা ২২ দশমিক ২৫ মিটার এবং সতর্কতার সীমা ২১ দশমিক ২৫ মিটার। এরইমধ্যে আপস্ট্রিমের ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করায় শনিবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ গেট। ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়াই নদীর পানি বেড়ে প্লাবনের পরিমাণ আরও বাড়ছে। নিমতিতায় সতর্কসীমা ২০ দশমিক ৫৮ মিটার। বিপৎসীমা ২১ দশমিক ৯০ মিটার। নিমতিতায় পানি বইছে ১১ দশমিক ৫১ মিটার উচ্চতায়। নূরপুরে উচ্চতা ২১ দশমিক শুন্য তিন মিটার। সেখান পানি বইছে ২১ দশমিক ৬৪ মিটার দিয়ে। সতর্কতাসীমা ২০ দশমিক ৭৩ মিটার।
গিনিয়ায় বিপৎসীমা ২০ দশমিক ৯৪ মিটার সেখানে ২১ দশমিক ৫৫ মিটার উচ্চতায় পানি বইছে। সতর্কতাসীমা ২০ দশমিক ৩৯ মিটার। জঙ্গিপুরে বিপৎসীমা ২০ দশমিক ২৯ মিটার সেখানে ২০ দশমিক ৮৭ মিটার উচ্চতায় পানি বইছে। সতর্কতাসীমা ১৭ দশমিক ৮০ মিটার। লালবাগ, বেলডাঙা, শক্তিপুর, ভাগীরথী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
এ বিষয়ে মহাব্যবস্থাপক দেশপাণ্ডে বলেন, ৪০ হাজার কিউসেক বাদে সব পানি নিচে ছাড়তেই হয়। সে হিসেব ডিজাইজ ডিসচার্জ ২৭ লাখ কিউসেক। এখন মাত্র ১১ লাখ ছাড়া হচ্ছে।
দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এদিকে এই পানি ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে পানি ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় গঙ্গায় হু হু করে পানি বাড়ছে।
ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেশি দুই রাজ্য—বিহার, ঝাড়খণ্ডে বন্যা দেখা দেওয়ায় ফারাক্কা বাঁধে পানির চাপ রয়েছে। তবে নেপালের পাহাড় থেকে এখনও কোনও পানি নেমে না আসায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমা থেকে ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শনিবার গেট খুলতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলে পানির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ১৯৬২ সালে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল।