বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে গুমের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড তার শাসনামলে শুরু হয়েছিল। এরা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। শত শত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হলো। অনেক টিভিসহ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটি সংবাদপত্র এবং মিডিয়াকে তারা ভয়ভীতির সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে সেল্ফ সেন্সরশিপ এবং প্রেসার সেন্সরশিপ চালু করে দখলে নিয়েছিল।
বুধবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১’ এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে একটু লাগাম টেনে ধরতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের মতো তারা জনগণের বুকে চেপে বসেছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রত্যাশা অনেক থাকলেও এই সরকার শুধু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে জনগণের সরকারের কাছে দ্বায়িত্ব দেবে। কাজেই আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে একটু লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা সঠিক হবে না, কারণ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তাদের (আওয়ামী লীগ) লোক বহাল তবিয়তে বসে আছে। কিছু লোক সরেছে মাত্র। এদের ক্লিন করতে হবে, সময়ও দিতে হবে।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসরা শুধু বাংলাদেশে না, এই পৃথিবীতে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এবং যার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কাজেই এই বিশ্বাসকে খারাপভাবে দেখার কোনো কারনো নেই। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব তার যে কার্যনির্বাহী কমিটি আছে, তাদের সাথে নিয়ে বিচক্ষণতার সাথে এই প্রশাসন নির্দলীয়করণ হবে। অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী নয়, বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোকে তাদের অধিকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সত্য কথা বলার জন্য কোটা আন্দোলন চলছিল। কিন্তু সে আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল তৎকালীন নেতারা। সেগুলো যদি রিওয়াইন্ড করে শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তাদের চিন্তা-ভাবনা কতটা সংকীর্ণ, কতটা প্রতিহিংসাপরায়ন এবং কতটা কর্তৃত্ববাদী ছিল। সেই আন্দোলনই আস্তে আস্তে জনগণের আন্দোলনে পরিনত হয়েছিল। অনেকগুলো দফা থেকে এক দফায় চলে এসেছিল। কারণ জনগণ বুঝতে পেরেছিল, তাদের (আওয়ামী লীগ) পতন ছাড়া এক দফা, আট দফা বা নয় দফা কোনো কিছুই আর কাজ হবে না।
এখনো হাসপাতালে শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা, ভাই-বোনেরা আহত হয়ে ভর্তি উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হাতিয়েছে, কেউ চোখ হারিয়েছে।
তাদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য সরকার ও জনগণকে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।