ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিদ্রোহীদের আক্রমণে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাখাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর হাত থেকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য দখলের দ্বারপ্রান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট), আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে দাবি করা হয়, বিদ্রোহীদের আগ্রাসী আক্রমণে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাখাইন। যদিও, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের গুরুতর সব অভিযোগ আনা হয় ওই প্রতিবেদনে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদেরই এখন নিজেদের দলে যুক্ত করছে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী।

২০২৩ সালের শেষ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই জোরদার করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এবার বছর পেরোনোর আগেই মিয়ানমার থেকে রাখাইনকে বিচ্ছিন্ন করার পথে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

ব্রাসেলস ভিত্তিক অলাভজনক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আয়তন ও জনসংখ্যা- দু’দিক থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় অংশ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি; আর এখন রাখাইনের প্রায় পুরোটাই দখল করার পথে। এর মূল্য দিতে হচ্ছে রাজ্যের বেসামরিক মানুষকে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের যে অঞ্চলে আরাকান আর্মির ‘প্রোটো-স্টেট’ বা আধা-রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান, সেখানে বাস ১০ লাখের বেশি মানুষের।

আইসিজি বলছে, সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলা আর অবরোধ সত্ত্বেও রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সহায়তায় গেলো ক’মাসে সমানে এগিয়ে গেছে আরাকান আর্মি, দখল করেছে একের পর এক শহর ও গ্রাম। মাঝখান থেকে চলমান অস্থিরতার জেরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে পুরো দেশ। একইসঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক নিপীড়নেরও শিকার হচ্ছেন রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রাজ্যের উত্তরে মংডু শহরে হামলার সময় প্রায় ২শ’ রোহিঙ্গাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।

দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী অরাজকতার মাধ্যমে রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে উৎখাতের পথে আরাকান আর্মি। আইসিজি’র পর্যবেক্ষণ বলছে, অঞ্চলটি শাসন করা, এর অধীনে আসা জনগণের জীবন পরিচালনা এবং আঞ্চলিক স্থিতি আনার সক্ষমতা গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমর্থনে বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা, অর্থনীতিসহ দুর্বিষহ জীবনযাত্রা ঠিক করতে কিছুটা সময়‌ পাবে আরাকান আর্মি। কিন্তু জনগণের এ ধৈর্য্য কতোদিন থাকবে, তা অনিশ্চিত।

থিংক ট্যাঙ্কটির মতে, স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য অর্জনের পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে আরাকান আর্মি। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর রাখাইনের সঙ্গে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবহণ, যোগাযোগ ও বাণিজ্য অত্যন্ত দুর্বল। তাই চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত রাজ্যগুলোর তুলনায় রাখাইনের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের জন্য তাই মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল রাখাইনবাসী, স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে যা আর পাবে না তারা। ভূরাজনৈতিক কৌশলগত কারণে রাখাইনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আছে চীন ও ভারতের, একইসঙ্গে আশ্রিত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। জটিল এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া আরাকান আর্মির জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

১৯৪২ সাল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ-সংখ্যালঘু মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় জর্জরিত রাখাইনে জাতিগত সহিষ্ণুতা রক্ষায় আগে থেকেই হিমশিম খাচ্ছে আরাকান আর্মি। সংখ্যালঘু হলেও রাখাইনের উত্তরাঞ্চল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা নিপীড়নে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে সাম্প্রদায়িকতার আগুন আরও উসকে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বললেও এখনও তাদেরই সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ দিয়ে পাঠাচ্ছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের পর গেলো ৫ আগস্ট সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। দায় স্বীকার না করলেও সন্দেহের তীর ওই আরাকান আর্মির ওপরই। মংডু ও বুথিডংয়ে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।

আইসিজি বলছে, দেড় দশকের লড়াইয়ের পর লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছালেও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে আরাকান আর্মি। প্রধান রণক্ষেত্রগুলোতে সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করলেও দেশের অন্যতম উপেক্ষিত এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফেরানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধার এ গোষ্ঠীটির।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিদ্রোহীদের আক্রমণে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাখাইন

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর হাত থেকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য দখলের দ্বারপ্রান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট), আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে দাবি করা হয়, বিদ্রোহীদের আগ্রাসী আক্রমণে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাখাইন। যদিও, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের গুরুতর সব অভিযোগ আনা হয় ওই প্রতিবেদনে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদেরই এখন নিজেদের দলে যুক্ত করছে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী।

২০২৩ সালের শেষ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই জোরদার করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এবার বছর পেরোনোর আগেই মিয়ানমার থেকে রাখাইনকে বিচ্ছিন্ন করার পথে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

ব্রাসেলস ভিত্তিক অলাভজনক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আয়তন ও জনসংখ্যা- দু’দিক থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় অংশ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি; আর এখন রাখাইনের প্রায় পুরোটাই দখল করার পথে। এর মূল্য দিতে হচ্ছে রাজ্যের বেসামরিক মানুষকে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের যে অঞ্চলে আরাকান আর্মির ‘প্রোটো-স্টেট’ বা আধা-রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান, সেখানে বাস ১০ লাখের বেশি মানুষের।

আইসিজি বলছে, সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলা আর অবরোধ সত্ত্বেও রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সহায়তায় গেলো ক’মাসে সমানে এগিয়ে গেছে আরাকান আর্মি, দখল করেছে একের পর এক শহর ও গ্রাম। মাঝখান থেকে চলমান অস্থিরতার জেরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে পুরো দেশ। একইসঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক নিপীড়নেরও শিকার হচ্ছেন রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রাজ্যের উত্তরে মংডু শহরে হামলার সময় প্রায় ২শ’ রোহিঙ্গাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।

দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী অরাজকতার মাধ্যমে রাখাইন থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে উৎখাতের পথে আরাকান আর্মি। আইসিজি’র পর্যবেক্ষণ বলছে, অঞ্চলটি শাসন করা, এর অধীনে আসা জনগণের জীবন পরিচালনা এবং আঞ্চলিক স্থিতি আনার সক্ষমতা গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমর্থনে বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা, অর্থনীতিসহ দুর্বিষহ জীবনযাত্রা ঠিক করতে কিছুটা সময়‌ পাবে আরাকান আর্মি। কিন্তু জনগণের এ ধৈর্য্য কতোদিন থাকবে, তা অনিশ্চিত।

থিংক ট্যাঙ্কটির মতে, স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য অর্জনের পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে আরাকান আর্মি। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর রাখাইনের সঙ্গে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবহণ, যোগাযোগ ও বাণিজ্য অত্যন্ত দুর্বল। তাই চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত রাজ্যগুলোর তুলনায় রাখাইনের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের জন্য তাই মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল রাখাইনবাসী, স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে যা আর পাবে না তারা। ভূরাজনৈতিক কৌশলগত কারণে রাখাইনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আছে চীন ও ভারতের, একইসঙ্গে আশ্রিত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। জটিল এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া আরাকান আর্মির জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

১৯৪২ সাল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ-সংখ্যালঘু মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় জর্জরিত রাখাইনে জাতিগত সহিষ্ণুতা রক্ষায় আগে থেকেই হিমশিম খাচ্ছে আরাকান আর্মি। সংখ্যালঘু হলেও রাখাইনের উত্তরাঞ্চল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা নিপীড়নে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে সাম্প্রদায়িকতার আগুন আরও উসকে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বললেও এখনও তাদেরই সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ দিয়ে পাঠাচ্ছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের পর গেলো ৫ আগস্ট সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। দায় স্বীকার না করলেও সন্দেহের তীর ওই আরাকান আর্মির ওপরই। মংডু ও বুথিডংয়ে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।

আইসিজি বলছে, দেড় দশকের লড়াইয়ের পর লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছালেও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে আরাকান আর্মি। প্রধান রণক্ষেত্রগুলোতে সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করলেও দেশের অন্যতম উপেক্ষিত এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফেরানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধার এ গোষ্ঠীটির।