ঢাকা ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাংক ঋণ মওকুফের পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বন্যায় কৃষিজমির বীজতলা, শেষ ধানের শীষ, গবাদিপশু বা পোল্ট্রি খামার এক নিমেষেই শূন্য হয়েছে অনেকের। কৃষকের গোলা আবার পূর্ণ করতে নিঃশর্ত এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ব্যাংকের ঋণ মওকুফেরও পরামর্শ দেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও চার থেকে পাঁচ বেশি সুদহার নির্ধারণ, উল্টো বিপর্যস্ত করতে পারে এসব এলাকার অর্থনীতি।

সারা বাংলাদেশে যেনো এখন দ্বীপচরের মতো। বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ দু একাট গাছ আর ঘরের চাল উকি দিচ্ছে। উপরে যতটা স্থির নিচে ততটাই ভয়ঙ্কর রূপ এই জলের। ১১ জেলার ৫৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে আছে।

অনেকে ঘরের শেষটুকুও উদ্ধার করতে পারেনি। বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে আমনের বীজতলা। ঘরের উঠানে যে গৃহিনীর ছোট ছোট অর্থনীতির বুনন সেটিও নিমেষে ধুয়ে গেছে জলে।

সবচেয়ে যে বড় ক্ষতি হয়েছে তা হলো প্রাণিজ সম্পদে। গোয়ালের গরু বা গবাদি পশুর ঘর শূন্য। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সবশেষ পুঁজি আর ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা পল্ট্রি খামার।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘মুরগি ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি। পানি ঢুকে সব মারা গেছে। মাছ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকার। সব ভেসে গেছে।’

স্কুল ছাড়বেন আশ্রয়কেন্দ্রের আশ্রিতরা। ত্রাণের কাজও শেষ করে ঘরে ফিরবেন উদ্ধার আর স্বেচ্ছাসেবকরা। কিন্তু কৃষক মাঠে ফিরে কি পাবেন? তার ওপর নির্ভর করছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।

কৃষি অর্থনীতি গবেষক কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘লেট আমনের চারা আছে, বীজ আছে, সেগুলো দিতে পারবে। এর সাথে সার এবং কীটনাশক নিশ্চিত করতে হবে। ত্রাণের টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকা থেকে কৃষকদের মধ্যে যার জমির জন্য লাগবে তাকে জমির জন্য, আর যার মৎস্য খামার প্রয়োজন তারকে মৎস্য খামারের জন্য টাকা দেয়া হোক।’

এই মৌসুমে তেমন কোনো আশা নেই। তবুও লেট আমনের সুযোগ পেতে পারেন কোনো কোনো এলাকার কৃষক। সরবরাহের প্রয়োজন হবে মাছের পোনার। পল্ট্রি ও গবাদি পশুও দিয়ে সহায়তা করা প্রয়োজন হবে। এছাড়া যেসব এলাকা থেকে পানি নামতে দেরি হবে সেসব এলাকায় অক্টোবরের রবি মৌসুমের জন্যও রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে এখন থেকেই।

কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘রবি মৌসুমে যেসব ফসল আমরা পাই সেটা সারাবছরেও আমরা পাই না। কাজেই এই রবি মৌসুম টার্গেট করে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পশু পালন মন্ত্রণালয়ের সুন্দর রোড ম্যাপ করতে হবে।’

বন্যার কবলে থাকা মানুষ ঘরে ফিরে কিছুই হয়তো অবশিষ্ট পাবেন না। ফলে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক মনে করেন, প্রাথমিক ভাবে নি:শর্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণও দেয়া যেতে পারে। তবে, তাতে সুদের হার চার শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশের এর বেশি হলে এটি মরার ওপর খাড়ার ঘা হবে দেশের অলাভজনকখাতের কৃষকদের জন্য।

কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘ঋণ আনতে গেলে জামানত লাগবে। আমার তো কৃষকের জামানত নেই, তারা ঋণ নেবে কীভাবে। আবার পোল্ট্রি সেক্টরের নারী উদ্যোক্তা আছে, তাদের তো কাগজপত্র নেই। এজন্য তারা ঋণ পায় না। সেজন্য এই বণ্যা দুর্গত এলাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটা বিশেষ প্যাকেজ করতে হবে। সরকার যেহেতু প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করেছেন সেখান থেকে এটা ফ্রি অফ কষ্ট হলে তারা ঘুরে দাঁড়াবে।’

বণ্যা পরবর্তী কৃষি ও পল্লি অর্থনীতি পুনর্বাসনে কৃষকদের ভাসমান বীজতলা তৈরিতে কৌশলগত সহায়তা ও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে হবে কৃষকদের, যা সবসময় দশগুণ হয়ে ফিরে এসেছে দেশের মানুষের জন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাংক ঋণ মওকুফের পরামর্শ

আপডেট সময় : ১২:০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

বন্যায় কৃষিজমির বীজতলা, শেষ ধানের শীষ, গবাদিপশু বা পোল্ট্রি খামার এক নিমেষেই শূন্য হয়েছে অনেকের। কৃষকের গোলা আবার পূর্ণ করতে নিঃশর্ত এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ব্যাংকের ঋণ মওকুফেরও পরামর্শ দেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও চার থেকে পাঁচ বেশি সুদহার নির্ধারণ, উল্টো বিপর্যস্ত করতে পারে এসব এলাকার অর্থনীতি।

সারা বাংলাদেশে যেনো এখন দ্বীপচরের মতো। বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ দু একাট গাছ আর ঘরের চাল উকি দিচ্ছে। উপরে যতটা স্থির নিচে ততটাই ভয়ঙ্কর রূপ এই জলের। ১১ জেলার ৫৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে আছে।

অনেকে ঘরের শেষটুকুও উদ্ধার করতে পারেনি। বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে আমনের বীজতলা। ঘরের উঠানে যে গৃহিনীর ছোট ছোট অর্থনীতির বুনন সেটিও নিমেষে ধুয়ে গেছে জলে।

সবচেয়ে যে বড় ক্ষতি হয়েছে তা হলো প্রাণিজ সম্পদে। গোয়ালের গরু বা গবাদি পশুর ঘর শূন্য। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সবশেষ পুঁজি আর ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা পল্ট্রি খামার।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘মুরগি ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি। পানি ঢুকে সব মারা গেছে। মাছ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকার। সব ভেসে গেছে।’

স্কুল ছাড়বেন আশ্রয়কেন্দ্রের আশ্রিতরা। ত্রাণের কাজও শেষ করে ঘরে ফিরবেন উদ্ধার আর স্বেচ্ছাসেবকরা। কিন্তু কৃষক মাঠে ফিরে কি পাবেন? তার ওপর নির্ভর করছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।

কৃষি অর্থনীতি গবেষক কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘লেট আমনের চারা আছে, বীজ আছে, সেগুলো দিতে পারবে। এর সাথে সার এবং কীটনাশক নিশ্চিত করতে হবে। ত্রাণের টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকা থেকে কৃষকদের মধ্যে যার জমির জন্য লাগবে তাকে জমির জন্য, আর যার মৎস্য খামার প্রয়োজন তারকে মৎস্য খামারের জন্য টাকা দেয়া হোক।’

এই মৌসুমে তেমন কোনো আশা নেই। তবুও লেট আমনের সুযোগ পেতে পারেন কোনো কোনো এলাকার কৃষক। সরবরাহের প্রয়োজন হবে মাছের পোনার। পল্ট্রি ও গবাদি পশুও দিয়ে সহায়তা করা প্রয়োজন হবে। এছাড়া যেসব এলাকা থেকে পানি নামতে দেরি হবে সেসব এলাকায় অক্টোবরের রবি মৌসুমের জন্যও রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে এখন থেকেই।

কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘রবি মৌসুমে যেসব ফসল আমরা পাই সেটা সারাবছরেও আমরা পাই না। কাজেই এই রবি মৌসুম টার্গেট করে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পশু পালন মন্ত্রণালয়ের সুন্দর রোড ম্যাপ করতে হবে।’

বন্যার কবলে থাকা মানুষ ঘরে ফিরে কিছুই হয়তো অবশিষ্ট পাবেন না। ফলে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক মনে করেন, প্রাথমিক ভাবে নি:শর্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণও দেয়া যেতে পারে। তবে, তাতে সুদের হার চার শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশের এর বেশি হলে এটি মরার ওপর খাড়ার ঘা হবে দেশের অলাভজনকখাতের কৃষকদের জন্য।

কাশফিয়া আহমেদ বলেন, ‘ঋণ আনতে গেলে জামানত লাগবে। আমার তো কৃষকের জামানত নেই, তারা ঋণ নেবে কীভাবে। আবার পোল্ট্রি সেক্টরের নারী উদ্যোক্তা আছে, তাদের তো কাগজপত্র নেই। এজন্য তারা ঋণ পায় না। সেজন্য এই বণ্যা দুর্গত এলাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটা বিশেষ প্যাকেজ করতে হবে। সরকার যেহেতু প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করেছেন সেখান থেকে এটা ফ্রি অফ কষ্ট হলে তারা ঘুরে দাঁড়াবে।’

বণ্যা পরবর্তী কৃষি ও পল্লি অর্থনীতি পুনর্বাসনে কৃষকদের ভাসমান বীজতলা তৈরিতে কৌশলগত সহায়তা ও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে হবে কৃষকদের, যা সবসময় দশগুণ হয়ে ফিরে এসেছে দেশের মানুষের জন্য।