ঢাকা ০৭:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কুমিল্লায় ১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ১৯ জন।

সরকারি ও বেসরকারি তথ্যসূত্র জানা গেছে, বন্যায় সদর উপজেলায় দুইজন, বুড়িচং উপজেলায় শিশুসহ ৪ জন, তিতাস উপজেলায় ২ জন, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৩ জন, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, লাকসাম উপজেলায় ৩ জন, মুরাদনগর একজন, মনোহরগঞ্জে একজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় একজন মারা গেছে। এসব মৃত্যুর মধ্যে অনেকে বন্যার পানিতে ডুবে, পানিবন্দি বাড়িঘর ও আশ্রয় কেন্দ্রের চিকিৎসার অভাবে, বিদ্যুতায়িত ও সাপে কাটার কারণে বলে ধরা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট রাতে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুরবুরিয়া গ্রামে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙে। এতে পানিতে তলিয়ে যায় বুড়িচং উপজেলার ১০৫টি গ্রাম। বুড়িচংয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তারপর একে একে প্লাবিত হতে থাকে গ্রামের পর গ্রাম। সেই পানি ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলায় ছড়িয়ে বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। গোমতীর পানিতে তলিয়ে যায় ব্রাহ্মণপাড়ার ৮টি ইউনিয়ন। যেখানে ৬০টি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। এছাড়া দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নসহ তিনটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দেবিদ্বারে ৫০টি গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে ফেনীর বন্যার পানিতে ডুবেছে চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও বরুড়া উপজেলার বেশিরভাগ অংশ। এখন পর্যন্ত নাঙ্গলকোট উপজেলায় তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই এখন প্লাবিত। ওই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। মনোহরগঞ্জে বন্যায় একজন মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ফেনীর বন্যার প্রভাবে ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল। এই সময় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ছিল। কুমিল্লা তিতাস উপজেলা তিনটি ইউনিয়ন পানিবন্দি অবস্থায়। বর্তমানে ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। বন্যায় তিতাস উপজেলায় ২ জন শিশু মারা গেছে।

কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, কুমিল্লা জেলাজুড়ে ১২৫টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে দুই লক্ষাধিক পরিবার। জেলাজুড়ে ৭২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও বন্যায় পানিবন্দিদের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য ২০৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ূব মাহমুদ বলেন, বন্যায় জেলাজুড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানি নিচে প্লাবিত হয়েছে। যেহেতু এখনও অনেক এলাকায় পানি ঢুকছে সেহেতু ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বন্যার পানি কমার পর সঠিক তথ্য জানা যাবে, কী পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ বলেন, কুমিল্লা জেলা জুড়ে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কুমিল্লায় ১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪

আপডেট সময় : ০১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪

কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ১৯ জন।

সরকারি ও বেসরকারি তথ্যসূত্র জানা গেছে, বন্যায় সদর উপজেলায় দুইজন, বুড়িচং উপজেলায় শিশুসহ ৪ জন, তিতাস উপজেলায় ২ জন, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৩ জন, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, লাকসাম উপজেলায় ৩ জন, মুরাদনগর একজন, মনোহরগঞ্জে একজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় একজন মারা গেছে। এসব মৃত্যুর মধ্যে অনেকে বন্যার পানিতে ডুবে, পানিবন্দি বাড়িঘর ও আশ্রয় কেন্দ্রের চিকিৎসার অভাবে, বিদ্যুতায়িত ও সাপে কাটার কারণে বলে ধরা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট রাতে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুরবুরিয়া গ্রামে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙে। এতে পানিতে তলিয়ে যায় বুড়িচং উপজেলার ১০৫টি গ্রাম। বুড়িচংয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তারপর একে একে প্লাবিত হতে থাকে গ্রামের পর গ্রাম। সেই পানি ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলায় ছড়িয়ে বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। গোমতীর পানিতে তলিয়ে যায় ব্রাহ্মণপাড়ার ৮টি ইউনিয়ন। যেখানে ৬০টি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। এছাড়া দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নসহ তিনটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দেবিদ্বারে ৫০টি গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে ফেনীর বন্যার পানিতে ডুবেছে চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও বরুড়া উপজেলার বেশিরভাগ অংশ। এখন পর্যন্ত নাঙ্গলকোট উপজেলায় তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই এখন প্লাবিত। ওই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। মনোহরগঞ্জে বন্যায় একজন মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ফেনীর বন্যার প্রভাবে ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল। এই সময় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ছিল। কুমিল্লা তিতাস উপজেলা তিনটি ইউনিয়ন পানিবন্দি অবস্থায়। বর্তমানে ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। বন্যায় তিতাস উপজেলায় ২ জন শিশু মারা গেছে।

কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, কুমিল্লা জেলাজুড়ে ১২৫টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে দুই লক্ষাধিক পরিবার। জেলাজুড়ে ৭২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও বন্যায় পানিবন্দিদের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য ২০৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ূব মাহমুদ বলেন, বন্যায় জেলাজুড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানি নিচে প্লাবিত হয়েছে। যেহেতু এখনও অনেক এলাকায় পানি ঢুকছে সেহেতু ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বন্যার পানি কমার পর সঠিক তথ্য জানা যাবে, কী পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ বলেন, কুমিল্লা জেলা জুড়ে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।