০৯:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেমন আছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার?

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪
  • ২২ দেখেছেন

গুম হওয়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ। কারও সন্তান, কারও বাবা আবার কারও স্বামী। বেশিরভাগই গত আওয়ামী সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে গুম হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন বলছে, গত ১৭ বছরে সারাদেশে অপহৃত হয়েছে ৬২৯ জন। তাদের কেউ কেউ ফিরে এলেও আজও নিখোঁজ আছেন অনেকে। স্বজনদের দাবি, গুমবিরোধী কনভেনশন আর তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি তাদের।

২০০৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত করা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদন বলছে, এই সময়ের মধ্যে সারাদেশে অপহরণ হয়েছেন ৬২৯ জন মানুষ। গুমের পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৭৮ জনের। ছাড়া পেয়েছেন ৬১ জন। গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৩ জনকে। এখনও নিখোঁজ আছেন ৩৮৩ জন মানুষ।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিচারবহির্ভূত কোনোকিছুই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু গত ১৫ বছরে এমন বক্তব্যে কর্ণপাত করেনি বিগত সরকার বরং চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিচয় দিয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল করিব বলেন, ‘বাংলাদেশে এ ধরনে পরিস্থিতি যেন আর কখনও না ঘটে। এবং একই সঙ্গে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা গুম হয়েছে এবং যারা ফেরত এসেছে, যারা এখনও আসেনি, আমরা মনে করছি যে তারা ফেরত আসতে পারে, সে সম্ভাবনাও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই মানুষগুলো যেন ন্যায় বিচার পায়। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে।’

একদিন-দু’দিন নয়, বাবাকে ছাড়া ইনশা আর ইনামের কেটে গেছে প্রায় ৬ বছর। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, জানা নেই পরিবারের কারোরই। বাবা, কবে ফিরবে? নিষ্পলক চাহনিতে শুধুই বাবাকে খুঁজে ফেরা। অশ্রুসজল অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে মলিন মুখগুলোতে মুছে গেছে হাসির রেখা।

ইনশা বলেন, ‘তদন্ত কমিশন গঠন হওয়ার পর আমি আবার নতুন করে আশা দেখছি যে আমি আমার বাবাকে ফিরে পাবো। আমি আশা রাখি যে আমার বাবা বেঁচে আছেন।’

২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হন ইসমাঈল হোসেন। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় তাকে। হদিস মেলেনি আজও। নিখোঁজ প্রিয় মানুষটির আশায় দিন কাটছে স্ত্রী নাসরিন জাহানের। এখনও অপেক্ষা, ফিরে এসে ফের হাল ধরবেন সংসারের।

নাসরিন জাহান বলেন, ‘আমার ছেলে মেয়ে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমাকে প্রশ্ন করে যে মা, বাবা কি বেঁচে আছে? আমার কাছে তো প্রশ্নের উত্তরটা নেই। ছয় বছর হলে আমি এভাবে বহন করছি, আমি এখনও জানলামই না যে আমি বিধবা না কি সধবা। আমি বুঝতেই পারছি না যে আমার স্বামী আছে না কি আমার স্বামী নেই।’

গুম হওয়া মানুষদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়েছে কর্তৃত্ববাদি আওয়ামী সরকার। ভিন্ন মতকে দমনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলা হয় আয়নাঘরের গোপন বন্দিশালা।

ছেলের ছবি বুকে নিয়ে এক মায়ের কান্না ১১ বছর ধরে। বিরোধী রাজনীতির বলি হয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে গুম হয় তার ছেলে। পরে, গড়ে তোলেন ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠন। প্রিয় সন্তানের ফেরার অপেক্ষা নিয়েই এগিয়ে নিচ্ছেন গুমের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার কাজ।

সেই মা বলেন, ‘আমার ছেলে এখনও আমার চোখের আড়ালে আছে। শুনি এই হইছে, সেই হইছে, সবই কানে শুনি, কিন্তু আমার মানিককে তো আমি এতো বছরের মধ্যে দেখিনি।’ গত প্রায় ১০ বছর ধরে নানা অত্যাচার আর হুমকি মাথায় নিয়ে কাজ করেছে ‘মায়ের ডাক’। কর্তৃত্ববাদি সরকারের পতনের পর স্বস্তি ফিরলেও, এখন দাবি, গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।

মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোনো মামলা নেয়নি। আমাদের কোনো জিডিও নেয়নি। এখন মনে হয় একটা সময়, প্রতিটি গুম, খুনের কেসের জন্য আমরা যেতে পারবো। যারা এটার সাথে জড়িত, সবাইকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।’

জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে গুমকে অভিহিত করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে। আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করার মধ্যদিয়ে দেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দৃঢ় হবে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার, এমনটাই আশা করছেন, স্বজন হারানো পরিবারগুলো। চাইছেন, নতুন বাংলাদেশে মুছে যাক গুমের সংস্কৃতি।

বিশ্বমঞ্চে মাহফুজকে বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করালেন ড. ইউনূস

কেমন আছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার?

আপডেট : ১২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪

গুম হওয়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ। কারও সন্তান, কারও বাবা আবার কারও স্বামী। বেশিরভাগই গত আওয়ামী সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে গুম হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন বলছে, গত ১৭ বছরে সারাদেশে অপহৃত হয়েছে ৬২৯ জন। তাদের কেউ কেউ ফিরে এলেও আজও নিখোঁজ আছেন অনেকে। স্বজনদের দাবি, গুমবিরোধী কনভেনশন আর তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি তাদের।

২০০৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত করা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদন বলছে, এই সময়ের মধ্যে সারাদেশে অপহরণ হয়েছেন ৬২৯ জন মানুষ। গুমের পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৭৮ জনের। ছাড়া পেয়েছেন ৬১ জন। গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৩ জনকে। এখনও নিখোঁজ আছেন ৩৮৩ জন মানুষ।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিচারবহির্ভূত কোনোকিছুই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু গত ১৫ বছরে এমন বক্তব্যে কর্ণপাত করেনি বিগত সরকার বরং চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিচয় দিয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল করিব বলেন, ‘বাংলাদেশে এ ধরনে পরিস্থিতি যেন আর কখনও না ঘটে। এবং একই সঙ্গে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা গুম হয়েছে এবং যারা ফেরত এসেছে, যারা এখনও আসেনি, আমরা মনে করছি যে তারা ফেরত আসতে পারে, সে সম্ভাবনাও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই মানুষগুলো যেন ন্যায় বিচার পায়। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে।’

একদিন-দু’দিন নয়, বাবাকে ছাড়া ইনশা আর ইনামের কেটে গেছে প্রায় ৬ বছর। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, জানা নেই পরিবারের কারোরই। বাবা, কবে ফিরবে? নিষ্পলক চাহনিতে শুধুই বাবাকে খুঁজে ফেরা। অশ্রুসজল অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে মলিন মুখগুলোতে মুছে গেছে হাসির রেখা।

ইনশা বলেন, ‘তদন্ত কমিশন গঠন হওয়ার পর আমি আবার নতুন করে আশা দেখছি যে আমি আমার বাবাকে ফিরে পাবো। আমি আশা রাখি যে আমার বাবা বেঁচে আছেন।’

২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হন ইসমাঈল হোসেন। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় তাকে। হদিস মেলেনি আজও। নিখোঁজ প্রিয় মানুষটির আশায় দিন কাটছে স্ত্রী নাসরিন জাহানের। এখনও অপেক্ষা, ফিরে এসে ফের হাল ধরবেন সংসারের।

নাসরিন জাহান বলেন, ‘আমার ছেলে মেয়ে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমাকে প্রশ্ন করে যে মা, বাবা কি বেঁচে আছে? আমার কাছে তো প্রশ্নের উত্তরটা নেই। ছয় বছর হলে আমি এভাবে বহন করছি, আমি এখনও জানলামই না যে আমি বিধবা না কি সধবা। আমি বুঝতেই পারছি না যে আমার স্বামী আছে না কি আমার স্বামী নেই।’

গুম হওয়া মানুষদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়েছে কর্তৃত্ববাদি আওয়ামী সরকার। ভিন্ন মতকে দমনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলা হয় আয়নাঘরের গোপন বন্দিশালা।

ছেলের ছবি বুকে নিয়ে এক মায়ের কান্না ১১ বছর ধরে। বিরোধী রাজনীতির বলি হয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে গুম হয় তার ছেলে। পরে, গড়ে তোলেন ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠন। প্রিয় সন্তানের ফেরার অপেক্ষা নিয়েই এগিয়ে নিচ্ছেন গুমের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার কাজ।

সেই মা বলেন, ‘আমার ছেলে এখনও আমার চোখের আড়ালে আছে। শুনি এই হইছে, সেই হইছে, সবই কানে শুনি, কিন্তু আমার মানিককে তো আমি এতো বছরের মধ্যে দেখিনি।’ গত প্রায় ১০ বছর ধরে নানা অত্যাচার আর হুমকি মাথায় নিয়ে কাজ করেছে ‘মায়ের ডাক’। কর্তৃত্ববাদি সরকারের পতনের পর স্বস্তি ফিরলেও, এখন দাবি, গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।

মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোনো মামলা নেয়নি। আমাদের কোনো জিডিও নেয়নি। এখন মনে হয় একটা সময়, প্রতিটি গুম, খুনের কেসের জন্য আমরা যেতে পারবো। যারা এটার সাথে জড়িত, সবাইকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।’

জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে গুমকে অভিহিত করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে। আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করার মধ্যদিয়ে দেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দৃঢ় হবে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার, এমনটাই আশা করছেন, স্বজন হারানো পরিবারগুলো। চাইছেন, নতুন বাংলাদেশে মুছে যাক গুমের সংস্কৃতি।