ছাত্র জনতার আন্দোলনে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনাস। ৫ আগস্ট কাউকে না জানিয়ে শহীদ হবার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চিঠি লিখে রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন আনাস।
মায়ের হাত থেকে সেই চিঠি এখন ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর দেয়ালে দেয়ালে, গণমাধ্যমে। যা কাঁদিয়েছে দেশের মানুষকে। আনাস বিশ্বাস করতো দেশের সেবা করতে হলে মৃত্যুই সর্বশ্রেষ্ঠ। হয়েছিলও তাই।
পড়ার টেবিলে রেখে যাওয়া নিহত ছেলের চিঠি পড়তে পড়তে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। গত ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল আনাসের বুকেও। তোলপাড় করে দিয়েছিল তার ভেতর-বাহির।
রাতেই জনসমুদ্রে মিশে যেতে চেয়েছিলো সে। বাবা মা রাজি না হওয়ায় সকালে কাউকে না বলে দেশ বাঁচাতে বেরিয়ে পড়ে গেন্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়া আনাস শহীদ মিনারে পৌছতে না পারলেও দেশবাসীকে এনে দিয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
আনাসের মা কান্নাভেজা চোখে বলেন, ‘ও যে এক বড় হয়ে গেছে আমি বুঝিনি। কোনো মা কি চায় তার সন্তান শহীদ হয়ে আসুক আর সে গর্বিত হোক। কোনো মা চায় না ভাই।’
গুলি খেয়ে ছেলের বীরের মতো মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি বাবা। টেবিলে শেষ চিঠি রেখে গেলেও খাতার ভেতর আরও ৫ পৃষ্ঠা লিখে গিয়েছিলো আনাস। সেখানে উঠে আসে নির্বিচারে ছাত্রদের উপর গুলি, অমানবিক নির্যাতন আর স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ বাঁচানোর তৃষ্ণা। সেই সঙ্গে অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়াবার দৃঢ় প্রত্যয়।
দশম শ্রেণির আনাসের নামে নামকরণ করা হয়েছে তার বাসা সংলগ্ন রাস্তাটি। যে পথে লক্ষবার হেটেছে আনাস সেই পথে তার জয়গানে আঁকা হয়েছে গ্রাফিতি। যার গুলিতে আনাস নিহত হয়েছে তাকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি আনাসের স্বজনদের।