রাওয়ালপিন্ডিতে আবারও ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। টেস্টে প্রথমবার পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো টিম টাইগার্স। ইংল্যান্ডকে টপকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চার নম্বরে এখন নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। শেষ দিন জয়ের জন্য ১৪৩ রান প্রয়োজন ছিল সফরকারিদের। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তুমি কে আমি কে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব করার আরেকটা উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। রাওয়ালপিন্ডিতে গড়েছে ইতিহাস। উপহার দিয়েছে টেস্ট জয়, সিরিজ জয়। গড়েছে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার নজির।
পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট এলেই বাংলাদেশের স্মৃতিতে উঠে আসে মুলতান টেস্টে হারের স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির প্রথম টেস্ট। ১০ উইকেটের জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার বাংলাদেশকে দিয়েছে টেস্টে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও এলো অসামান্য এক জয়। দিনের শুরুতে দুই উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমরা ঠিকই দলকে নিয়ে যান ১৮৫ রানের ল্যান্ডমার্কে।
৫ম দিনে বাংলাদেশের আর দরকার ছিল ১৪৩ রান। আগের দিনের ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে এদিন যোগ হলো আরও ১৪ রান। দলীয় ৫৮ রানে জাকির আর ৭০ রানে ফেরেন আরেক ওপেনার সাদমান। দুই ওপেনার মিলে ১০ ওভারে রান তুলেছেন পার করেছেন ৫০ এর মার্ক। এরপরেই অবশ্য বিপত্তি। মির হামজার বলে ব্যক্তিগত ৪০ রানে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন জাকির। জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমান। মিডঅফে আলতো শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শান মাসুদের হাতে। খুররাম পেয়েছেন নিজের প্রথম উইকেট।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক মিলে ৫৭ রানের জুটিতে এগিয়ে নিয়ে চলেন দলকে। লাঞ্চের পর শান্ত পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। সালমান আঘার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। করেছেন ৩৮ রান। দ্বিতীয় টেস্ট জিততে তখনো বাংলাদেশের প্রয়োজন এখন ৫৮ রান।
দ্রুত সাফল্যের সন্ধানে পাক অধিনায়ক, আবরারের পরপর দু’বলে দুই রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ। তবে মুমিনুল নিজেও সফল হতে পারেননি। আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
তবে মুশফিক অপ্রতিরোধ্য। দলকে জিতিয়ে শেষ করে ফেরেন। তাতেই ২১তম জয়। এটাই যথেষ্ট নয় বাংলাদেশের অর্জন আর কৃতিত্ব বোঝাতে।
দু’যুগের টেস্ট পরিক্রমায় সফলতম সিরিজ। যে জয়ের সঙ্গে মিশে আছে বিদেশের মাটির প্রতিকূলতা, প্রতিপক্ষের পূর্ণতা আর বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের উচ্চতা।
টেস্টে ঘরের মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিপর্যস্ত পাকিস্তান হোয়াইটওয়াশের লজ্জা খুব একটা পায়নি। এ নিয়ে চতুর্থবার। অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের পর নাম তুললো বাংলাদেশ।
পুরস্কারের অর্থ আন্দোলনে নিহত রিকশা চালকের পরিবারকে দেবেন মিরাজ
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পাওয়া টাকা বৈষশ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত একজন রিকসা চালকের পরিবারকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আজ ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্টানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মিরাজ বলেছেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত দেশের বাইরে প্রথমবার সিরিজসেরা হতে পেরে। অল-রাউন্ডারের কাজটা খুবই কঠিন। তবু আমি চেষ্টা করেছি স্ট্রাইক রোটেট করতে। মুশফিক ভাই এবং লিটন দাসের সঙ্গে ব্যাটিং করে খুবই ভালো লেগেছে। পাঁচ উইকেট পেয়ে ভালো লাগছে, আরও ভালো বোলিং করার চেষ্টা করব। দলের সবাই আমার পারফর্মেন্সে খুশি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক রিকশাচালক আহত হয়েছিলেন। পরে তিনি মারা যান। সিরিজসেরার পুরস্কার হিসেবে পাওয়া অর্থ আমি তার পরিবারকে দিব।’
ম্যাচসেরা লিটন দাস
রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। এতে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। এই জয়ে পাকিস্তানিদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের জয়টি একরকম অবিশ্বাস্য ছিল। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এরপর ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অসাধারণ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস।
১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে খেলেন। এতে মাত্র প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২ রানে এগিয়ে থাকতে পারে পাকিস্তান। ম্যাচের পর সেই অসাধারণ কীর্তির স্বীকৃতি পেয়েছেন লিটন।
ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন এই টাইগার ব্যাটার।দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য লিটনকে মাঠে নামতে হয়নি। তার আগেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান।