ঢাকা ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নারী কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের স্বাস্থ্য সেবাখাত

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:১৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিরাপত্তা যেখানে মৌলিক অধিকার, সেখানে নারী কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের স্বাস্থ্য সেবাখাত। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি পুরো ভারতে নারী চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই দেশটির সরকারের। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা শূন্যের কোটায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেবা দিয়ে তাদের জীবন বাঁচালেও সেই চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে দায়সারা ভারত সরকার। কঠোর আইন, আইনের প্রয়োগ আর শাস্তির বিধান না থাকায় ভারতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নারী কর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা।

উত্তর প্রদেশের মিরুতের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া ফায়েজ। ছোটবেলা থেকেই জীবন বাঁচানোর এই পেশাতে আগ্রহ তার। ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে এখনই চিকিৎসা দিচ্ছেন শতাধিক রোগীকে। নয়াদিল্লি থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে রোগী দেখেন নিয়মিত। কিন্তু হাসপাতালের প্রয়োজনে রোগীদের জীবন বাঁচাতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ব্যয়ের পরও মানসিক আর শারীরিক অবসাদে নেই বিশ্রামের অবকাশ। কারণ সম্প্রতি আরজি কর হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এখন শুধু হাসপাতালের ডাক্তাররা নয়, আতঙ্কে কর্মক্ষেত্রে দিন পার করছেন তার মতো বাকিসব নারী সহকর্মীরা। এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তার মতো শত শত নারী চিকিৎসক।

শিক্ষার্থী সামিয়া ফায়েজ বলেন, ‘আমি সকাল থেকে টানা কাজ করছি। শারীরিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকি। এসব ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা শুনলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। কারণ নিরাপত্তা তো আমাদের মৌলিক অধিকার। অথচ এই নির্মমতা যেকোন সময় যে কারো সঙ্গে হতে পারে। আমরা এতো ব্যস্ত থাকি যে, আমাদের সঙ্গে খারাপ কিছু হতে পারে এটা ভুলে যাই। নিরাপত্তা তো চেয়ে নেয়ার মতো কিছু না। প্রতিটা নারীর নৈতিক অধিকার এটা। খাদ্য, পানি যেমন আমাদের প্রয়োজন, তেমনি নিরাপত্তাও। এটা চাইতে হবে কেন?’

এই হাসপাতালে দৈনিক ৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। বেশিরভাগ রোগীই আসেন আশপাশ কিংবা দূরের গ্রাম থেকে। হাসপাতালে এতো ব্যস্ত থাকার কারণে ৪ মাসে কেবল একবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তারা। সামিয়ার অভিযোগ শুধু শারীরিক নয়, নারী চিকিৎসকদের ওপর মানসিক নির্যাতন, ভয়াবহ সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনাও ঘটে। যেখানে দেশের মোট চিকিৎসকের ৬০ ভাগই নারী, সেখানে দেশটিতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবদিক থেকে ব্যর্থ ভারত সরকার। অথচ নিরাপত্তার বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

সামিয়া ফায়েজ বলেন, ‘হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি নিয়মনীতি আরও কঠোর করা উচিত। প্রবেশপথে কড়াকড়ি থাকতে হবে, যেন কর্মীরা জানতে পারে কারা ভেতরে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে রাতে মদ্যপ, নেশাগ্রস্ত অনেকেই আশপাশে ঘোরাফেরা করে। রাতেই বেশি ভয় লাগে। মূল ফটকে যদি নিরাপত্তারক্ষী থাকে, এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। নিরাপত্তাকর্মীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কে প্রবেশ করছে হাসপাতালে।’

কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রেইনি চিকিৎসক গৌরি শেঠ। তিনি জানান, আরজি করের সেই ভয়াবহ ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর হাসপাতালে পিপার স্প্রে নিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। কোনভাবেই আর নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না কর্মক্ষেত্রে। তার মতো অনেক নারী চিকিৎসকই বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষের প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ না থাকায় নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশটিতে নারী চিকিৎসকদের দুই তৃতীয়াংশই কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।

গৌরী শেঠ আরও জানান, ‘এই ঘটনার পর আর নিরাপদ বোধ করতে পারছি না। এখন তো রাতে বের হওয়ার সাহসও করতে পারি না। অথচ এতো বদমেজাজী রোগীদের চিকিৎসা করতে হয় যে, কিছুটা অবকাশের প্রয়োজন তো পড়েই। আগে বাড়ি থেকে এতো ফোন আসতো না, এখন অনেক ফোন আসে কারণ সবাই আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। যদি নিরাপত্তাই ইস্যু হয়ে যায়, তাহলে কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করাই উচিত।’

পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ১৪ নারী চিকিৎসকের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের কথোপকথনে উঠে আসে ভয়াবহ সব তথ্য। তারা জানান, রোগীদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হয়রানি করেন নারী চিকিৎসকদের। হাসপাতালে বিশ্রামের কোন জায়গা না থাকায় প্রায়ই করিডোরের বেঞ্চে বিশ্রাম নিতে হয় তাদের। অনেকে জানান, তাদের এমন কক্ষেও বিশ্রাম নিতে হয়, যেগুলোতে দরজা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। অনেক সময় পুরুষ রোগীরা অগোচরে নারী চিকিৎসকদের ছবি তোলেন। সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেশটিতে পুরোপুরি বিপর্যস্ত।

ট্রেইনি নার্স প্রমা ঘোষ বলেন, ‘যে কেউ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আসতে পারেন, কারণ এগুলো সরকারি হাসপাতাল। এখন দেখছেন নিরাপত্তা কর্মীরা আইডি কার্ড চাচ্ছেন। কিন্তু যখন হোস্টেলে থাকি, নিচে শিক্ষার্থীদের পানি নেয়ার জায়গা আছে। এখান থেকে বাইরের মানুষ পানি নিতে আসে, নিরাপত্তা কর্মীরা আটকাতে চাইলেও তারা ভেতরে প্রবেশ করে। নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। এই কারণেই আরজি করে দোষীরা এতো সহজে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে গেছে।’

গেল ৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার পর থেকেই উত্তাল পুরো গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তদন্তের ভার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে দিলেও এখনও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই দোষীদের শনাক্তে। এরমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পুরো রাজ্য। গেল ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্য খাতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরও বিক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ২০২২ সালেই নারীদের সঙ্গে সাড়ে ৪ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। এর আগে পুরো দেশে সাড়া ফেলে দেয় ২০১২ সালে চলন্ত বাসে এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনা। এরপর থেকে ধর্ষণ প্রতিরোধে সোচ্চার হতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। সরকারের ওপর প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে চাপ। অথচ নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে এখনও নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো বলছে, দেশটিতে প্রতিবছর ৩০ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নারী কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের স্বাস্থ্য সেবাখাত

আপডেট সময় : ০২:১৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিরাপত্তা যেখানে মৌলিক অধিকার, সেখানে নারী কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের স্বাস্থ্য সেবাখাত। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি পুরো ভারতে নারী চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই দেশটির সরকারের। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা শূন্যের কোটায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেবা দিয়ে তাদের জীবন বাঁচালেও সেই চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে দায়সারা ভারত সরকার। কঠোর আইন, আইনের প্রয়োগ আর শাস্তির বিধান না থাকায় ভারতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নারী কর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা।

উত্তর প্রদেশের মিরুতের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া ফায়েজ। ছোটবেলা থেকেই জীবন বাঁচানোর এই পেশাতে আগ্রহ তার। ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে এখনই চিকিৎসা দিচ্ছেন শতাধিক রোগীকে। নয়াদিল্লি থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে রোগী দেখেন নিয়মিত। কিন্তু হাসপাতালের প্রয়োজনে রোগীদের জীবন বাঁচাতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ব্যয়ের পরও মানসিক আর শারীরিক অবসাদে নেই বিশ্রামের অবকাশ। কারণ সম্প্রতি আরজি কর হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এখন শুধু হাসপাতালের ডাক্তাররা নয়, আতঙ্কে কর্মক্ষেত্রে দিন পার করছেন তার মতো বাকিসব নারী সহকর্মীরা। এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তার মতো শত শত নারী চিকিৎসক।

শিক্ষার্থী সামিয়া ফায়েজ বলেন, ‘আমি সকাল থেকে টানা কাজ করছি। শারীরিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকি। এসব ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা শুনলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। কারণ নিরাপত্তা তো আমাদের মৌলিক অধিকার। অথচ এই নির্মমতা যেকোন সময় যে কারো সঙ্গে হতে পারে। আমরা এতো ব্যস্ত থাকি যে, আমাদের সঙ্গে খারাপ কিছু হতে পারে এটা ভুলে যাই। নিরাপত্তা তো চেয়ে নেয়ার মতো কিছু না। প্রতিটা নারীর নৈতিক অধিকার এটা। খাদ্য, পানি যেমন আমাদের প্রয়োজন, তেমনি নিরাপত্তাও। এটা চাইতে হবে কেন?’

এই হাসপাতালে দৈনিক ৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। বেশিরভাগ রোগীই আসেন আশপাশ কিংবা দূরের গ্রাম থেকে। হাসপাতালে এতো ব্যস্ত থাকার কারণে ৪ মাসে কেবল একবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তারা। সামিয়ার অভিযোগ শুধু শারীরিক নয়, নারী চিকিৎসকদের ওপর মানসিক নির্যাতন, ভয়াবহ সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনাও ঘটে। যেখানে দেশের মোট চিকিৎসকের ৬০ ভাগই নারী, সেখানে দেশটিতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবদিক থেকে ব্যর্থ ভারত সরকার। অথচ নিরাপত্তার বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

সামিয়া ফায়েজ বলেন, ‘হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি নিয়মনীতি আরও কঠোর করা উচিত। প্রবেশপথে কড়াকড়ি থাকতে হবে, যেন কর্মীরা জানতে পারে কারা ভেতরে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে রাতে মদ্যপ, নেশাগ্রস্ত অনেকেই আশপাশে ঘোরাফেরা করে। রাতেই বেশি ভয় লাগে। মূল ফটকে যদি নিরাপত্তারক্ষী থাকে, এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। নিরাপত্তাকর্মীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কে প্রবেশ করছে হাসপাতালে।’

কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রেইনি চিকিৎসক গৌরি শেঠ। তিনি জানান, আরজি করের সেই ভয়াবহ ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর হাসপাতালে পিপার স্প্রে নিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। কোনভাবেই আর নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না কর্মক্ষেত্রে। তার মতো অনেক নারী চিকিৎসকই বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষের প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ না থাকায় নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশটিতে নারী চিকিৎসকদের দুই তৃতীয়াংশই কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।

গৌরী শেঠ আরও জানান, ‘এই ঘটনার পর আর নিরাপদ বোধ করতে পারছি না। এখন তো রাতে বের হওয়ার সাহসও করতে পারি না। অথচ এতো বদমেজাজী রোগীদের চিকিৎসা করতে হয় যে, কিছুটা অবকাশের প্রয়োজন তো পড়েই। আগে বাড়ি থেকে এতো ফোন আসতো না, এখন অনেক ফোন আসে কারণ সবাই আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। যদি নিরাপত্তাই ইস্যু হয়ে যায়, তাহলে কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করাই উচিত।’

পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ১৪ নারী চিকিৎসকের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের কথোপকথনে উঠে আসে ভয়াবহ সব তথ্য। তারা জানান, রোগীদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হয়রানি করেন নারী চিকিৎসকদের। হাসপাতালে বিশ্রামের কোন জায়গা না থাকায় প্রায়ই করিডোরের বেঞ্চে বিশ্রাম নিতে হয় তাদের। অনেকে জানান, তাদের এমন কক্ষেও বিশ্রাম নিতে হয়, যেগুলোতে দরজা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। অনেক সময় পুরুষ রোগীরা অগোচরে নারী চিকিৎসকদের ছবি তোলেন। সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেশটিতে পুরোপুরি বিপর্যস্ত।

ট্রেইনি নার্স প্রমা ঘোষ বলেন, ‘যে কেউ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আসতে পারেন, কারণ এগুলো সরকারি হাসপাতাল। এখন দেখছেন নিরাপত্তা কর্মীরা আইডি কার্ড চাচ্ছেন। কিন্তু যখন হোস্টেলে থাকি, নিচে শিক্ষার্থীদের পানি নেয়ার জায়গা আছে। এখান থেকে বাইরের মানুষ পানি নিতে আসে, নিরাপত্তা কর্মীরা আটকাতে চাইলেও তারা ভেতরে প্রবেশ করে। নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। এই কারণেই আরজি করে দোষীরা এতো সহজে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে গেছে।’

গেল ৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার পর থেকেই উত্তাল পুরো গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তদন্তের ভার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে দিলেও এখনও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই দোষীদের শনাক্তে। এরমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পুরো রাজ্য। গেল ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্য খাতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরও বিক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ২০২২ সালেই নারীদের সঙ্গে সাড়ে ৪ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। এর আগে পুরো দেশে সাড়া ফেলে দেয় ২০১২ সালে চলন্ত বাসে এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনা। এরপর থেকে ধর্ষণ প্রতিরোধে সোচ্চার হতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। সরকারের ওপর প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে চাপ। অথচ নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে এখনও নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো বলছে, দেশটিতে প্রতিবছর ৩০ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।