২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে মেয়েদের ১৫০০ মিটার দৌড়ে ১০ম হয়ে সমাপ্তিরেখা স্পর্শ করে নিজেকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ব্রিটিশ অ্যাথলেট লিসা ডব্রিস্কি। সে সময় বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না, এ প্রতিযোগিতায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল। ওরা এক সময় ধরা পড়বেই।’
পরবর্তীতে লিসার অনুমানই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। দৌড়ে প্রথম নয় জনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময়ে ডোপ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে অ্যাথলেট থেকে নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছেন তারা। এমনি এমনিই তো আর এই দৌড়কে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা দৌড়’ বলা হয় না! ওই দৌড়ে অংশ নেওয়া অ্যাথলেটদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে রাশিয়ান দৌড়বিদ তাতিয়ানা তমাশোভার নাম।
৪৯ বছর বয়সী এ রাশিয়ান অ্যাথলেটকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লন্ডন অলিম্পিকের ওই প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত রুপার পদকটিও হাতছাড়া হয়েছে তমাশোভার। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত (সিএএস) তমাশোভার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিএএস জানিয়েছে, লন্ডন অলিম্পিক চলাকালে ২১ জুন ২০১২ থেকে ১৭ জুলাই ২০১২ পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনাগুলো ২০২১ সালে পুনরায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সে ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসায় নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লেন তমাশোভা। সঙ্গে হারান লন্ডন অলিম্পিকের রুপার পদকটিও।
মজার বিষয়, তমাশোভা ওই দৌড়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সবার আগে দৌড় শেষ করা তুর্কি দৌড়বিদ আসলি চাকির আল্পতেকিন ও দ্বিতীয় হওয়া গামসে বুলুতও ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় তাদের পদক সে সময় বাতিল করা হয়। ফলে তৃতীয় হওয়া বাহরাইনের অ্যাথলেট মারিয়াম ইউসুফ জামালের গলায় ওঠে স্বর্ণপদক। অন্যদিকে চতুর্থ হওয়া তমাশোভা পেয়ে যান রুপা।
উল্লেখ্য, তমাশোভা এর আগে ২০০৮ সালেও একবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেবার এ দৌড়বিদের বিরুদ্ধে ডোপ টেস্টের নমুনা হেরফের করার অভিযোগ উঠেছিল। লন্ডন অলিম্পিক থেকে তমাশোভা নিষিদ্ধ হওয়ায় রুপার পদকটি গিয়েছে দৌড়ে পঞ্চম হওয়া ইথিওপিয়ার আবেবা আরেগাওইর কাছে। ষষ্ঠ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের শ্যানন রোবুরি পাচ্ছেন ব্রোঞ্জ।
ওই দৌড়ে ১১তম হয়েছিলেন ব্রিটেনের অ্যাথলেট লরা ওয়েইটম্যান। তাঁর সামনের পাঁচজন বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন তিনি তালিকার ছয়ে উঠে এসেছেন। তমাশোভার নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে লরা লিখেছেন, ‘২০১২ লন্ডন অলিম্পিক ফাইনালের এত বছর পরে এসে ১১তম থেকে ৬ষ্ঠ। বিষয়টা খুব দুর্বোধ্য লাগছে!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সবসময় গর্বিত। দেখিয়েছি, কোনো কাঁদা গায়ে না মেখেও দৌড়ানো যায়।’