০২:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদত্যাগ করল আউয়াল কমিশন

চার কমিশনারসহ পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে বেলা ১২টার কিছু সময় পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানান হাবিবুল আউয়াল নিজেই। সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাংবাদিকদের।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক দলীয় ছিল বলে সরকারি প্রভাব ছিল না। দরকার ছিল না। পদত্যাগের বিষয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সচিবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ইসি সদস্যরা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলেও জানা গেছে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

এ সময় তিনি স্বীকার করে নেন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনটি নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিলো এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনটি হয়েছিলো একদলীয়।

তিনি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন করা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবনা দেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সব কমিশনার তাঁদের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে সেগুলো নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে জমা দেন। এখন কমিশনের সচিবের মাধ্যমে পদত্যাগপত্রগুলো রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য যাবে বঙ্গবভনে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কোনো জবাব দেননি।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা।

পদত্যাগ করে বন্ধুর গাড়িতে ইসি ছাড়েন হাবিবুল আউয়াল। এদিন তিনি নিরাপত্তা সুবিধা নিলেও সরকারি গাড়ি সুবিধা নেননি। বন্ধুর পুরাতন মডেলের সাদা রঙের একটি গাড়িতেই ইসি ছাড়েন সিইসি।

২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। নিয়োগের একদিন পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন তারা।

এই কমিশনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনটি বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করে। ভোট শেষে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের পতনের পর প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলোপ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে।

ইসি সূত্র জানায়, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আউয়াল কমিশন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইসির সংস্কার করা হবে বলে নিশ্চিত করছেন তারা। সে জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস করলেও তাদের বিদায়ের প্রস্তুতিই প্রাধান্য পায়। শেষ সময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নেন তারা।

পদত্যাগ করল আউয়াল কমিশন

আপডেট : ০১:৩৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চার কমিশনারসহ পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে বেলা ১২টার কিছু সময় পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানান হাবিবুল আউয়াল নিজেই। সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাংবাদিকদের।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক দলীয় ছিল বলে সরকারি প্রভাব ছিল না। দরকার ছিল না। পদত্যাগের বিষয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সচিবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ইসি সদস্যরা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলেও জানা গেছে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

এ সময় তিনি স্বীকার করে নেন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনটি নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিলো এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনটি হয়েছিলো একদলীয়।

তিনি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন করা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবনা দেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সব কমিশনার তাঁদের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে সেগুলো নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে জমা দেন। এখন কমিশনের সচিবের মাধ্যমে পদত্যাগপত্রগুলো রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য যাবে বঙ্গবভনে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কোনো জবাব দেননি।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা।

পদত্যাগ করে বন্ধুর গাড়িতে ইসি ছাড়েন হাবিবুল আউয়াল। এদিন তিনি নিরাপত্তা সুবিধা নিলেও সরকারি গাড়ি সুবিধা নেননি। বন্ধুর পুরাতন মডেলের সাদা রঙের একটি গাড়িতেই ইসি ছাড়েন সিইসি।

২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। নিয়োগের একদিন পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন তারা।

এই কমিশনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনটি বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করে। ভোট শেষে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের পতনের পর প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলোপ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে।

ইসি সূত্র জানায়, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আউয়াল কমিশন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইসির সংস্কার করা হবে বলে নিশ্চিত করছেন তারা। সে জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস করলেও তাদের বিদায়ের প্রস্তুতিই প্রাধান্য পায়। শেষ সময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নেন তারা।