ঢাকা ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বন্ধুর ভূমিকায় ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হলেও সক্রিয় বন্ধুর ভূমিকায় ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এতে শহীদের তালিকায় যেমন নাম উঠেছে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর, তেমনি অনেকে অমানুষিক নির্যাতনের জীবন্ত স্বাক্ষী হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরান ঢাকার মানুষও সেসময় কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।

বাহাদুর শাহ পার্ক লাগায়ো সড়ক, সদরঘাট কিংবা পুরান ঢাকার মানুষেরা ১৯ জুলাইয়ে রণক্ষেত্রের মুখোমুখি হননি স্বাধীন বাংলাদেশে। একদিকে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলি, ঘিঞ্জি গলির মুখে দাঁড়িয়ে অপরপাশে, প্রতিরোধের চেষ্টায় নিরীহ মুক্তিকামী ছাত্রজনতা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্র; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে যখন হল ছাড়া করা হয়েছিলো ছাত্রদের। যখন ছত্রভঙ্গ ছাত্র জনতার শাটডাউন কর্মসূচি কতটা সফল করা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা, সাড়াশি অভিযান আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর রণসাজ উপেক্ষা করে তখন প্রতিরোধ গড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি গলিতে যেভাবে আলো পৌঁছায় কম, সেভাবে এ আন্দোলনে জগন্নাথের ভূমিকা হয় তো চিত্রিত হয় নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি হয় এ আন্দোলনের রক্তগোলাপ হয়, জগন্নাথ তার সৌরভ। সে ধারাবাহিক আন্দোলনের আজ এই যে বিজয়ের রূপ, কঠিন সময়ে এই চিত্রটা তেমন ছিলো না। মুক্তির জন্য সে যুদ্ধে পুলিশের তাজা গুলি, রাবার বুলেট কিংবা টিয়ার শেলে শুধু যে জগন্নাথের ছাত্রদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়েছে তা নয়, কারও জীবনে বয়ে এনেছে স্থায়ী পঙ্গুত্ব।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘ওইদিন ক্যাম্পাস থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন ছাত্রলীগের লোকজন আমার উপর অর্তকীত হামলা করে।’

আরেকজন বলেন, ‘শহীদ মিনারে দিকে যাচ্ছিলাম তখন চানখারপুলে আমাদের গুলি করা হয়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে প্রতিবেশি কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই কলেজটির অন্তত ৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন গণঅভ্যত্থান ঘটানো সে আন্দোলনে। তবে এখানকার আন্দোলনে বিশেষত্ব যোগ করেছেন পুরান ঢাকার সেইসব সাহসী বাসিন্দারা, যারা জুলুমের প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ছাত্রদের কাতারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম সমন্বয়ক নুরুন্নবী। ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য যখন সারাদেশেই চলছে ধরপাকড়, তখন ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরা। সাদা গাড়িতে ওঠানোর পর তার ওপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছিলো, তা চলছিলো ৫ আগস্টের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত।

সমন্বয়ক নুরুন্নবী বলেন, ‘প্রায় ৩৫ দিন ধরে নির্যাতন চলছে। এখন আমার শরীর পুরো ব্যাথা করছে।’

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তির স্বপ্ন দেখা নুরুন্নবীর সামগ্রীক স্বাধীনতাই উদ্দেশ্য ছিল। তাই এ স্বাধীনতা যেন কোনরুপেই আবার নতুন ফ্যাসিবাদের হাতে না যায় সেই চাওয়া এই যুবকের।

ছাত্র আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা অন্যান্যদের মতোই কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে রাজপথে ছিলেন যেমন, সেসব দিনের স্মৃতি স্বাক্ষ্য দিচ্ছে তাদের ভবন আর দেয়ালে দেয়ালে। এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের মতো দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথাও লেখা থাকবে পাতায় পাতায়, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বন্ধুর ভূমিকায় ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় : ০১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হলেও সক্রিয় বন্ধুর ভূমিকায় ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এতে শহীদের তালিকায় যেমন নাম উঠেছে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর, তেমনি অনেকে অমানুষিক নির্যাতনের জীবন্ত স্বাক্ষী হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরান ঢাকার মানুষও সেসময় কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।

বাহাদুর শাহ পার্ক লাগায়ো সড়ক, সদরঘাট কিংবা পুরান ঢাকার মানুষেরা ১৯ জুলাইয়ে রণক্ষেত্রের মুখোমুখি হননি স্বাধীন বাংলাদেশে। একদিকে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলি, ঘিঞ্জি গলির মুখে দাঁড়িয়ে অপরপাশে, প্রতিরোধের চেষ্টায় নিরীহ মুক্তিকামী ছাত্রজনতা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্র; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে যখন হল ছাড়া করা হয়েছিলো ছাত্রদের। যখন ছত্রভঙ্গ ছাত্র জনতার শাটডাউন কর্মসূচি কতটা সফল করা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা, সাড়াশি অভিযান আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর রণসাজ উপেক্ষা করে তখন প্রতিরোধ গড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি গলিতে যেভাবে আলো পৌঁছায় কম, সেভাবে এ আন্দোলনে জগন্নাথের ভূমিকা হয় তো চিত্রিত হয় নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি হয় এ আন্দোলনের রক্তগোলাপ হয়, জগন্নাথ তার সৌরভ। সে ধারাবাহিক আন্দোলনের আজ এই যে বিজয়ের রূপ, কঠিন সময়ে এই চিত্রটা তেমন ছিলো না। মুক্তির জন্য সে যুদ্ধে পুলিশের তাজা গুলি, রাবার বুলেট কিংবা টিয়ার শেলে শুধু যে জগন্নাথের ছাত্রদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়েছে তা নয়, কারও জীবনে বয়ে এনেছে স্থায়ী পঙ্গুত্ব।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘ওইদিন ক্যাম্পাস থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন ছাত্রলীগের লোকজন আমার উপর অর্তকীত হামলা করে।’

আরেকজন বলেন, ‘শহীদ মিনারে দিকে যাচ্ছিলাম তখন চানখারপুলে আমাদের গুলি করা হয়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে প্রতিবেশি কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই কলেজটির অন্তত ৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন গণঅভ্যত্থান ঘটানো সে আন্দোলনে। তবে এখানকার আন্দোলনে বিশেষত্ব যোগ করেছেন পুরান ঢাকার সেইসব সাহসী বাসিন্দারা, যারা জুলুমের প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ছাত্রদের কাতারে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম সমন্বয়ক নুরুন্নবী। ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য যখন সারাদেশেই চলছে ধরপাকড়, তখন ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরা। সাদা গাড়িতে ওঠানোর পর তার ওপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছিলো, তা চলছিলো ৫ আগস্টের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত।

সমন্বয়ক নুরুন্নবী বলেন, ‘প্রায় ৩৫ দিন ধরে নির্যাতন চলছে। এখন আমার শরীর পুরো ব্যাথা করছে।’

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তির স্বপ্ন দেখা নুরুন্নবীর সামগ্রীক স্বাধীনতাই উদ্দেশ্য ছিল। তাই এ স্বাধীনতা যেন কোনরুপেই আবার নতুন ফ্যাসিবাদের হাতে না যায় সেই চাওয়া এই যুবকের।

ছাত্র আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা অন্যান্যদের মতোই কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে রাজপথে ছিলেন যেমন, সেসব দিনের স্মৃতি স্বাক্ষ্য দিচ্ছে তাদের ভবন আর দেয়ালে দেয়ালে। এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের মতো দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথাও লেখা থাকবে পাতায় পাতায়, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।