২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিতে ডিএনসিসি মার্কেটকে কোভিড হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়। এরপর সময়ে সময়ে নিপাহ ভাইরাস, ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতালটি। এটিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কথা বলা হলেও সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতায় করা সম্ভব হয়নি। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সিটি করপোরেশনের সম্মতি না দেয়ায় আটকে আছে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের সিদ্ধান্ত।
২০২০ সালে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। জরুরিভিত্তিতে মাত্র ২০ দিনে ডিএনসিসির মার্কেটটিকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়। এতে চিকিৎসা পায় বহু মানুষ।
করোনা সংক্রমণ কমে গেলে ২০২২ সালে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। একইসাথে তখন দেশের ২৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়া নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরেরও চিকিৎসা দেয়া হয় হাসপাতালটিতে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে বহির্বিভাগে সেবা চালু করা হয়েছে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১০ টাকার টিকিটে মেডিসিন, হৃদরোগ ও গাইনি রোগ বিভাগে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সপ্তাহে দুইদিন শিশুরোগ বিভাগ এবং একদিন চর্মরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ থাকছে।
বহির্বিভাগে আসা রোগীরা প্রয়োজনে কিছু বিভাগে ভর্তিরও সুযোগ পাচ্ছেন। তবে সেবার পরিধি আরও বাড়ানোর দাবি উপকারভোগীদের।
করোনার প্রকোপ কমার পরপরই হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতালে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা নেয় উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে নানা জটিলতায় এখনও ১১ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ছয় তলা ভবনটি এক রকম ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। অযত্নে নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম।
পর্যাপ্ত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী না থাকলে সেবার পরিধি বাড়ানো সম্ভব নয়। সেবার বিস্তৃতি বাড়াতে কাজ চলছে বলে জানালেন হাসপাতালটির পরিচালক।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল এ কে এম জহিরুল হোসাইন খান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় তারা এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করছেন। ভবিষ্যতে এটিকে একটি সাধারণ হাসপাতালে রূপান্তর করা যায় কি না সেটি নিয়েও তারা চিন্তা ভাবনা করছেন। পর্যায়ক্রমে ডাক্তার থাকার প্রেক্ষিতে বহির্বিভাগে অন্য বিভাগগুলোর সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সিটি করপোরেশনের সম্মতি না পেলে একে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেয়া সম্ভব নয়। পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিতের আগে প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন।
পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘এখানে ফিক্সড জব স্ট্রাকচার বা অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়নি। অনেক প্রকার নিয়ম-নীতিকে আমরা মানতে পারিনি। না মেনে জনগণের স্বার্থে আমরা এটা চালু করেছি। কিন্তু বিল্ডিংটি সিটি করপোরেশনের বা জনগণের। এখানে তিন ধরনের যে সামঞ্জস্য আমরা তা এখনো গুছিয়ে উঠতে পারিনি।’
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে রেফারেল পদ্ধতি চালু না হলে সংকট মিটবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাই সঠিক পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ তার।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘যে সুবিধাটি ডিএনসিসি বহির্বিভাগে আছে সেটা ওয়ার্ডভিত্তিক করা উচিত। আর এখানে জরুরি বিভাগ থাকতে হবে। কারণ সেখানে যখন একজন রোগী আসে তার অনেকগুলো বিভাগ মিলে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন রক্ত-অক্সিজেন লাগতে পারে, নিউরোলজি, নিউরোসায়েন্স বিভাগ লাগতে পারে। প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থাকবে। কিন্তু বহির্বিভাগ সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।’
বিশেষায়িত এ হাসপাতালের প্রতিটি শয্যায় রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। এছাড়াও এখানকার উন্নত চিকিৎসা যন্ত্র দেশের প্রথম সারির বহু হাসপাতালেই নেই। এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ঘোষণার দাবি সবার।