পোশাক শিল্পে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চলছে: গার্মেন্টস মালিকপক্ষ
- আপডেট সময় : ০১:৫১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৬১ বার পড়া হয়েছে
হঠাৎ শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তপ্ত শিল্পনগরী গাজীপুর। সম্প্রতি কর্মবিরতি, মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভসহ কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে হুমকির মুখে পড়ে দেশের পোশাকখাত। প্রশ্ন হচ্ছে- শ্রমিকদের পক্ষে করা দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক? নাকি শ্রমিকদের আড়ালে কোনো চক্র অস্থিতিশীল করে তুলতে চায় পোশাকখাতকে। বিব্রত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকারকে? এ বিষয়ে শিল্পোদ্যোক্তারাই বা কী বলছেন?
সম্প্রতি শিল্প নগরী গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলোতে নতুন নিয়োগ, বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও চাকরিতে নারী-পুরুষের সমতাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকদের একাংশ।
একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিল্পাঞ্চলে ব্যাহত হয় উৎপাদন। নিরাপত্তা শঙ্কায় বন্ধ হয়ে যায় প্রায় অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক? দাবির পক্ষে-বিপক্ষে শ্রমিকরাও দাঁড় করছেন ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি। তারা বলছেন, শ্রমিকদের আড়ালে পোশাক শিল্পে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে একটি চক্র।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি বৈঠকে বসে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ-সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত আসে পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনার।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাসে বৃহস্পতিবার থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে এখনও শ্রমিক বিক্ষোভ হলেও প্রায় সব কারখানায় স্বাভাবিক হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম।
শিল্প মালিকরা মনে করেন, পোশাক কারখানায় স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি না হলে দেশের এই খাতে কমবে বিদেশি বিনিয়োগ, সংকটের সুযোগ নিবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। তাই দ্রুত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় করার দাবি করেন মালিকরা
বিজিএমইএর স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এরা আসলে শ্রমিকবেশে বহিরাগত। এদের আসল উদ্দেশ্য কী, তাদের লিডারশিপও নেই। তাদের বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন জায়গায় গাজীপুর, সাভারে আন্দোলন করছে।’
গত ২ সেপ্টেম্বর বহিরাগতদের হামলা ও ভাংচুরের শিকার হওয়া দুটি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয় এখন টেলিভিশন। জানতে চাওয়া হয় প্রকৃত ঘটনা কি?
ফ্যাশন পাওয়ার গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘যৌক্তিক হলেও আমি মনে করি এভাবে দাবি আদায় হয় না। যেসব শ্রমিক লিডার আছে, গার্মেন্টসের ম্যানেজম্যান্ট আছে তাদের সাথে বসে দাবি আদায়ে কথা বলা যায়।’
শ্রমিক আন্দোলনের আড়ালে বহিরাগতদের হামলা থেকে কারখানা রক্ষায় নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে পাহারা বসিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শিল্পকারখানায় সংগঠিত নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর ঠেকাতে প্রতিদিনই বিসিক এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
টঙ্গী থানা বিএনপি সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন বলেন, ‘আমরা গার্মেন্টস শ্রমিক ও মালিকদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে কেউ নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।’
এদিকে, কারখানায় নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্যের দাবি উড়িয়ে দিয়ে শিল্পোদ্যোক্তারা বলেন, স্বভাবগতভাবেই সুঁই সুতোর কাজে নারীরা পারদর্শী। পাশাপাশি বায়ারদের চাপ আছে নারী শ্রমিক বাড়ানোর বিষয়ে। আর পুরুষরা এ কাজে দক্ষও নয়। এ কারণে পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।
স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা চৌধুরী মিশ বলেন, ‘নারীদের সেলাইয়ের কাজ খুব নিখুঁত হয়। যেটার কারণে বাংলাদেশে অর্ডারও বেশি আসে।’
সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক লাঠিসোঁটা হাতে পোশাক কারখানায় হামলা চালাচ্ছে। মূল ফটক ভেঙে কারখানার ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা ও জিনিসপত্র।
হামলার প্রমাণ মুছে ফেলতে একপর্যায়ে ভেঙে ফেলা হয় সিসিটিভি ক্যামেরাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গাজীপুরে ২ হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এতে কাজ করে অন্তত ২২ লাখ শ্রমিক।