ঢাকা ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দ্রুতই স্বাভাবিক হচ্ছে না বিদ্যুৎ পরিস্থিতি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:১৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি শেষ হয়নি। তবে এর মাঝেও গরমে অস্বস্তিতে মানুষ। এর সঙ্গে লোডশেডিং বেড়ে কষ্ট আরও বাড়িয়েছে। রাজধানীতেই দিনে কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামে এই অবস্থা আরও নাজুক। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

তুলনামূলক শহরে কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতি ঘণ্টায় কয়েক বারও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোথাও বা টানা কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদ বৃদ্ধি আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

আগস্টের শেষদিকে রাজধানীতে অল্প লোডশেডিং শুরু হলেও এখন তা তীব্র আকার নিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। বাসা–বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও বেশ ভোগান্তি হচ্ছে লোডশেডিংয়ে।

এখন দিনে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতিতে দেশ। তবে সহসাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একসঙ্গে বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি গ্যাস ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ওপরও জোর তাদের।

গ্যাস সংকটসহ বেশকিছু কারণেই উৎপাদনের এই ঘাটতি। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের জ্বালানির ব্যাপারে আলাদাভাবে যে প্রস্তাবগুলো আমাদের কাছে এসেছে এলএনজি আমদানিসহ বিভিন্ন জ্বালানি সেগুলো আমরা কোনোভাবেই আটকাচ্ছি না। খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো আমরা সবসময় অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের যতই সমস্যা থাকুক এগুলো দ্রুত কেনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

রাজধানীবাসী বলছে, এখন দিনে ৩ থেকে ৪ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। রাতেও ঘুমানো যাচ্ছে না, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর একবার গেলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

এই মুহূর্তে সব তেলভিত্তিক কেন্দ্র একসঙ্গে বন্ধ করার পক্ষে নন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে গ্যাসভিত্তিক ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্রুত চালুর পরামর্শও তাদের।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হঠাৎ করে সরিয়ে দেই তাহলে আমাদের লোডশেডিং চলবেই। দীর্ঘমেয়াদি যেগুলো দিয়ে আমরা গ্যাস আমদানি করব সেগুলো যেন ঠিক সময় আসে। এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেন ঠিক করে তৈরি করা হয়। এটা এক থেকে দুবছরের মতো লাগবে। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।’

এখন একদিনে গড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। একই সক্ষমতা থাকার পরও ২০২২ ও ২০২৩ সালে তাপপ্রবাহের সময়ে তীব্র লোডশেডিং হয়েছিল।

পিডিবির তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা উঠানামা করেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে পনেরো হাজার মেগাওয়াটে। এর বিপরীতে প্রতিদিন লোডশেডিং করতে হয়েছে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯৭৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত। যদিও সর্বোচ্চ ৬০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা ছিল পিডিবির।

সূত্র বলছে, দেশে মোট ১৪০টি পাওয়ার প্ল্যান্টের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ ৪০টি। বাকি ১০০টির মধ্যেও আংশিক বন্ধ আছে বেশকিছু পাওয়ারপ্ল্যান্ট। এছাড়াও মূল্য পরিশোধে বাকি পড়ায় চুক্তির চাইতেও প্রায় চারশো মেগাওয়াট সরবরাহ কমিয়ে আদানির বিদ্যুৎ আসছে এগারোশ মেগাওয়াটের মতো।

এদিকে কয়লা সংকট নয় বরং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে পিডিবি। তারা বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল তিন মাসেও মেরামত না হওয়ায় গ্যাস সরবরাহে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পুরোপুরি বিদ্যুৎ আসছে না বাঁশখালীর এস আলমের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেও।

ফোনকলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘১২ তারিখ থেকে বন্ধ হয়েছে। এটা চালু হলে একটা বড় সুবিধা পাওয়া যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে একটি সিন্ডিকেটের জন্য লাভজনক খাতে পরিণত করা হয়েছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এইযে সংঘবদ্ধ একটা লুণ্ঠনকারী দল তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণে এ দল তৈরি হয়েছে, এলএনজি টার্মিনাল বানানো, গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।’

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, সেখানের হিসাবটার কোনো পাত্তা পাওয়া যায় না। এজন্য যে, এখানে বিল্ডিং তৈরি করতে হয়, মাটি গর্ত করতে হয়, মালপত্র আনতে হয়। এখানে ফ্যাকড়া আছে, জনগণ ভাববে এখানে বিরাট একটা পাওয়ার স্টেশন হচ্ছে। এইযে হচ্ছে সেখানে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।’

বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। একইসঙ্গে ঢালাওভাবে সাজাতে হবে গত পনেরো বছরে চলা অরাজকতার এ খাতকে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং নিজস্ব জ্বালানি থেকে যখন আমরা ‍বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তখন একটা মিক্সচারের মাধ্যমে হয়। এটাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য যত বেশি সোর্স বা উৎস থাকবে এবং ফুয়েল ডাইভারসিটি থাকবে তত আমাদের ঝুঁকিটা কম থাকবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলন, ‘কাঠামো যদি স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হয় তাহলে যেটি হয়, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ অপচয় হয়েছে এবং বিগত সময়ে সরকারের যে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এর থেকে এক ধরনের মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

দেশে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিগত সরকারের দাবি ছিলো উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় তিরিশ হাজার মেগাওয়াট। সক্ষমতার চাইতেও দশ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার পেছনে ক্যাপাসিটি-ভর্তুকি গুনতে হয়েছে বছরে তিরিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন-২০১০ স্থগিতের মাধ্যমে এ খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি গ্রীড থেকে পল্লী বিদ্যুৎ ও দুটি গ্রীড থেকে নেসকো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ ও নেসকো গ্রাহকদের জন্য জেলায় রাতে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৫০ মেগওয়াট। আর দিনে প্রয়োজন হয় ১২০ মেগাওয়াট। সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার ৬০ শতাংশেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।

বিদ্যুৎ গ্রহকদের দাবি, দিন-রাতের প্রায় অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তির পাশাপাশি স্থবির হয়েছে বিদ্যুৎনির্ভর কাজ-কর্মও।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ার কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় নিয়মিতই অর্ধেক ফিডারে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। এত কম বিদ্যুৎ দিয়ে গ্রাহকসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।গ্রাহকদের কাছ থেকে নানান কটূকথা শুনতে হচ্ছে।

যশোর
প্রায় এক সপ্তাহজুড়ে যশোরে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকাভেদে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ বার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এতে গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কিছুদিন আগেও লোডশেডিং ছিল না। চলতি মাসের শুরুতে লোডশেডিং তীব্র হতে থাকে। ক্রমেই যা অসহনীয় পর্যায়ে গড়াতে শুরু করে। এতে জীবন-যাপনসহ সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে লোডশেডিং তুলনামূলক কম।

লক্ষ্মীপুর
গত ১৫দিন ধরে লক্ষ্মীপুরে ব্যাপকহারে লোডশেডিং হচ্ছে। দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে ১০ থেকে ১২ বার। তবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিপি গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। সে অনুপাতে চাহিদা রয়েছে ১৩৪ মেগাওয়াট। প্রতিদিন পল্লী বিদ্যুৎতের চাহিদা রয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক মেগাওয়াট। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে চাহিদার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক কম।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎতের লোডশেডিং হচ্ছে দিনে ১০/১২ বার। দিন-রাত মিলে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র লোডশেডিং। ঠিকমত বিদ্যুৎ না থাকায় সামনে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কল কারখানার পাশাপাশি অফিস আদালতে বিড়ম্বনায় পড়েতে হয় প্রতিনিয়ত।

এছাড়া বাসা-বাড়িতে ফ্রিজ-এসি ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিরাবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। দ্রুত এ বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের আশা করছেন গ্রাহকরা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, জেলায় পুলিশ বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার। গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী ১১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎতের চাহিদা। চাহিদার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দিনে রাতে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ে সমস্যা সমাধানের আশা করছেন তিনি।

নাটোর
নাটোরের গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জনজীবন। একদিকে প্রখর রোদের তাপ আরেকদিকে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার লুকোচুরি। দিন ও রাত সমানতালে চলছে লোডশেডিং। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর আসে না।

প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। সেই সাথে শিক্ষার্থী সহ অন্যন্য সবাই চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই চায় সকলেই।

নাটোর জেলার অধিকাংশ এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন। গ্রামাঞ্চলের সীমানা বেশি হওয়ায় এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসা পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু সেই বিদ্যুতের সঠিক সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তাঁরা।

লেখাপড়া ,বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈননন্দিন কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় বেশি। বিদ্যুতের প্রয়োজন হলেও লোডশেডিং থাকায় কোনো কাজই ঠিকভাবে করতে পারছে না মানুষ। ফলে এভাবেই চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে মানুষ।

পাবনা
পাবনায় বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ। ফলে বেড়েছে চরম ভোগান্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম মিলছে। এতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, বিদ্যুৎ সকালে আসে, দুই ঘণ্টা নাই। আবার এক ঘণ্টা দেয়, দুই ঘণ্টা নাই। রাত দিন একই রকম। সারা দিনে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাই না আমরা।

আরেকজন বলেন, দিনে রাতে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর রাতে তো আধা ঘণ্টা ২০ মিনিট পর পরেই চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জীবন।

সিলেট
গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র খরতাপে পুড়ছে সিলেট। তীব্র গরমে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এরমধ্যেই যোগ হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে নগর ও শহরতলী এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ গৃহস্থালির নিত্যদিনের কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। করা যাচ্ছে না ঠিকমতো বেচাকেনা। লোডশেডিংয়ের কারণে ক্রেতাদের আনাগোনাও একেবারে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

সুনামগঞ্জ
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু নুয়মান বলছেন, চাহিদার চেয়ে কম পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ৫১ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ মেগাওওয়াট।

পিরোজপুর
জেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ওজোপাডিকোর সূত্রমতে, পিরোজপুর সদর উপজেলাতে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৭.৫ মেগাওয়াট থাকলেও সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৪.৫ মেগাওয়াট। ফলে দিনে ও রাতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সদর উপজেলাতে পাঁচটি ফিডার থাকলেও প্রায় গড়ে দুটি ফিডার বন্ধ থাকছে লোডশেডিংয়ের কারণে।

পিরোজপুর ওজোপাডিকোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আগস্ট মাসের শুরু থেকে পিরোজপুরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে এ সমস্যা কমে আসবে।

হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জেও লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হবিগঞ্জ শহরে প্রতিদিন দিনে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে শহরবাসীসহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর মোর্শেদ জানান, হবিগঞ্জের জেলা শহরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিংয়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ পাচ্ছে ১১ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে প্রায় ছয় থেকে আট মেগাওয়াট।

নিউজটি শেয়ার করুন

দ্রুতই স্বাভাবিক হচ্ছে না বিদ্যুৎ পরিস্থিতি

আপডেট সময় : ১২:১৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি শেষ হয়নি। তবে এর মাঝেও গরমে অস্বস্তিতে মানুষ। এর সঙ্গে লোডশেডিং বেড়ে কষ্ট আরও বাড়িয়েছে। রাজধানীতেই দিনে কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামে এই অবস্থা আরও নাজুক। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

তুলনামূলক শহরে কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতি ঘণ্টায় কয়েক বারও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোথাও বা টানা কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদ বৃদ্ধি আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

আগস্টের শেষদিকে রাজধানীতে অল্প লোডশেডিং শুরু হলেও এখন তা তীব্র আকার নিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। বাসা–বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও বেশ ভোগান্তি হচ্ছে লোডশেডিংয়ে।

এখন দিনে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতিতে দেশ। তবে সহসাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একসঙ্গে বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি গ্যাস ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ওপরও জোর তাদের।

গ্যাস সংকটসহ বেশকিছু কারণেই উৎপাদনের এই ঘাটতি। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের জ্বালানির ব্যাপারে আলাদাভাবে যে প্রস্তাবগুলো আমাদের কাছে এসেছে এলএনজি আমদানিসহ বিভিন্ন জ্বালানি সেগুলো আমরা কোনোভাবেই আটকাচ্ছি না। খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো আমরা সবসময় অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের যতই সমস্যা থাকুক এগুলো দ্রুত কেনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

রাজধানীবাসী বলছে, এখন দিনে ৩ থেকে ৪ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। রাতেও ঘুমানো যাচ্ছে না, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর একবার গেলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

এই মুহূর্তে সব তেলভিত্তিক কেন্দ্র একসঙ্গে বন্ধ করার পক্ষে নন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে গ্যাসভিত্তিক ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্রুত চালুর পরামর্শও তাদের।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হঠাৎ করে সরিয়ে দেই তাহলে আমাদের লোডশেডিং চলবেই। দীর্ঘমেয়াদি যেগুলো দিয়ে আমরা গ্যাস আমদানি করব সেগুলো যেন ঠিক সময় আসে। এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেন ঠিক করে তৈরি করা হয়। এটা এক থেকে দুবছরের মতো লাগবে। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।’

এখন একদিনে গড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। একই সক্ষমতা থাকার পরও ২০২২ ও ২০২৩ সালে তাপপ্রবাহের সময়ে তীব্র লোডশেডিং হয়েছিল।

পিডিবির তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা উঠানামা করেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে পনেরো হাজার মেগাওয়াটে। এর বিপরীতে প্রতিদিন লোডশেডিং করতে হয়েছে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯৭৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত। যদিও সর্বোচ্চ ৬০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা ছিল পিডিবির।

সূত্র বলছে, দেশে মোট ১৪০টি পাওয়ার প্ল্যান্টের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ ৪০টি। বাকি ১০০টির মধ্যেও আংশিক বন্ধ আছে বেশকিছু পাওয়ারপ্ল্যান্ট। এছাড়াও মূল্য পরিশোধে বাকি পড়ায় চুক্তির চাইতেও প্রায় চারশো মেগাওয়াট সরবরাহ কমিয়ে আদানির বিদ্যুৎ আসছে এগারোশ মেগাওয়াটের মতো।

এদিকে কয়লা সংকট নয় বরং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে পিডিবি। তারা বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল তিন মাসেও মেরামত না হওয়ায় গ্যাস সরবরাহে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পুরোপুরি বিদ্যুৎ আসছে না বাঁশখালীর এস আলমের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেও।

ফোনকলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘১২ তারিখ থেকে বন্ধ হয়েছে। এটা চালু হলে একটা বড় সুবিধা পাওয়া যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে একটি সিন্ডিকেটের জন্য লাভজনক খাতে পরিণত করা হয়েছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এইযে সংঘবদ্ধ একটা লুণ্ঠনকারী দল তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণে এ দল তৈরি হয়েছে, এলএনজি টার্মিনাল বানানো, গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।’

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, সেখানের হিসাবটার কোনো পাত্তা পাওয়া যায় না। এজন্য যে, এখানে বিল্ডিং তৈরি করতে হয়, মাটি গর্ত করতে হয়, মালপত্র আনতে হয়। এখানে ফ্যাকড়া আছে, জনগণ ভাববে এখানে বিরাট একটা পাওয়ার স্টেশন হচ্ছে। এইযে হচ্ছে সেখানে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।’

বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। একইসঙ্গে ঢালাওভাবে সাজাতে হবে গত পনেরো বছরে চলা অরাজকতার এ খাতকে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং নিজস্ব জ্বালানি থেকে যখন আমরা ‍বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তখন একটা মিক্সচারের মাধ্যমে হয়। এটাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য যত বেশি সোর্স বা উৎস থাকবে এবং ফুয়েল ডাইভারসিটি থাকবে তত আমাদের ঝুঁকিটা কম থাকবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলন, ‘কাঠামো যদি স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হয় তাহলে যেটি হয়, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ অপচয় হয়েছে এবং বিগত সময়ে সরকারের যে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এর থেকে এক ধরনের মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

দেশে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিগত সরকারের দাবি ছিলো উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় তিরিশ হাজার মেগাওয়াট। সক্ষমতার চাইতেও দশ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার পেছনে ক্যাপাসিটি-ভর্তুকি গুনতে হয়েছে বছরে তিরিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন-২০১০ স্থগিতের মাধ্যমে এ খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি গ্রীড থেকে পল্লী বিদ্যুৎ ও দুটি গ্রীড থেকে নেসকো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ ও নেসকো গ্রাহকদের জন্য জেলায় রাতে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৫০ মেগওয়াট। আর দিনে প্রয়োজন হয় ১২০ মেগাওয়াট। সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার ৬০ শতাংশেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।

বিদ্যুৎ গ্রহকদের দাবি, দিন-রাতের প্রায় অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তির পাশাপাশি স্থবির হয়েছে বিদ্যুৎনির্ভর কাজ-কর্মও।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ার কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় নিয়মিতই অর্ধেক ফিডারে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। এত কম বিদ্যুৎ দিয়ে গ্রাহকসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।গ্রাহকদের কাছ থেকে নানান কটূকথা শুনতে হচ্ছে।

যশোর
প্রায় এক সপ্তাহজুড়ে যশোরে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকাভেদে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ বার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এতে গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কিছুদিন আগেও লোডশেডিং ছিল না। চলতি মাসের শুরুতে লোডশেডিং তীব্র হতে থাকে। ক্রমেই যা অসহনীয় পর্যায়ে গড়াতে শুরু করে। এতে জীবন-যাপনসহ সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে লোডশেডিং তুলনামূলক কম।

লক্ষ্মীপুর
গত ১৫দিন ধরে লক্ষ্মীপুরে ব্যাপকহারে লোডশেডিং হচ্ছে। দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে ১০ থেকে ১২ বার। তবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিপি গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। সে অনুপাতে চাহিদা রয়েছে ১৩৪ মেগাওয়াট। প্রতিদিন পল্লী বিদ্যুৎতের চাহিদা রয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক মেগাওয়াট। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে চাহিদার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক কম।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎতের লোডশেডিং হচ্ছে দিনে ১০/১২ বার। দিন-রাত মিলে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র লোডশেডিং। ঠিকমত বিদ্যুৎ না থাকায় সামনে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কল কারখানার পাশাপাশি অফিস আদালতে বিড়ম্বনায় পড়েতে হয় প্রতিনিয়ত।

এছাড়া বাসা-বাড়িতে ফ্রিজ-এসি ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিরাবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। দ্রুত এ বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের আশা করছেন গ্রাহকরা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, জেলায় পুলিশ বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার। গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী ১১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎতের চাহিদা। চাহিদার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দিনে রাতে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ে সমস্যা সমাধানের আশা করছেন তিনি।

নাটোর
নাটোরের গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জনজীবন। একদিকে প্রখর রোদের তাপ আরেকদিকে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার লুকোচুরি। দিন ও রাত সমানতালে চলছে লোডশেডিং। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর আসে না।

প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। সেই সাথে শিক্ষার্থী সহ অন্যন্য সবাই চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই চায় সকলেই।

নাটোর জেলার অধিকাংশ এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন। গ্রামাঞ্চলের সীমানা বেশি হওয়ায় এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসা পল্লী বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু সেই বিদ্যুতের সঠিক সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তাঁরা।

লেখাপড়া ,বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈননন্দিন কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় বেশি। বিদ্যুতের প্রয়োজন হলেও লোডশেডিং থাকায় কোনো কাজই ঠিকভাবে করতে পারছে না মানুষ। ফলে এভাবেই চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে মানুষ।

পাবনা
পাবনায় বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ। ফলে বেড়েছে চরম ভোগান্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম মিলছে। এতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, বিদ্যুৎ সকালে আসে, দুই ঘণ্টা নাই। আবার এক ঘণ্টা দেয়, দুই ঘণ্টা নাই। রাত দিন একই রকম। সারা দিনে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাই না আমরা।

আরেকজন বলেন, দিনে রাতে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর রাতে তো আধা ঘণ্টা ২০ মিনিট পর পরেই চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জীবন।

সিলেট
গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র খরতাপে পুড়ছে সিলেট। তীব্র গরমে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এরমধ্যেই যোগ হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে নগর ও শহরতলী এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ গৃহস্থালির নিত্যদিনের কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। করা যাচ্ছে না ঠিকমতো বেচাকেনা। লোডশেডিংয়ের কারণে ক্রেতাদের আনাগোনাও একেবারে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

সুনামগঞ্জ
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু নুয়মান বলছেন, চাহিদার চেয়ে কম পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ৫১ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ মেগাওওয়াট।

পিরোজপুর
জেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ওজোপাডিকোর সূত্রমতে, পিরোজপুর সদর উপজেলাতে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৭.৫ মেগাওয়াট থাকলেও সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৪.৫ মেগাওয়াট। ফলে দিনে ও রাতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সদর উপজেলাতে পাঁচটি ফিডার থাকলেও প্রায় গড়ে দুটি ফিডার বন্ধ থাকছে লোডশেডিংয়ের কারণে।

পিরোজপুর ওজোপাডিকোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আগস্ট মাসের শুরু থেকে পিরোজপুরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে এ সমস্যা কমে আসবে।

হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জেও লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হবিগঞ্জ শহরে প্রতিদিন দিনে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে শহরবাসীসহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর মোর্শেদ জানান, হবিগঞ্জের জেলা শহরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিংয়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ পাচ্ছে ১১ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে প্রায় ছয় থেকে আট মেগাওয়াট।