প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিয়েছেন কামালা, এ বিষয় নিয়ে একমত রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তবে বিতর্কের ফল কী নির্বাচনের জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে? নাকি বিকল্প নজিরও আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার ন্যাশনাল কন্সটিটিউশন সেন্টারে এক হতাশাজনক রাতের সাক্ষী হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৯০ মিনিট বিতর্কের শুরুতে ভার্চুয়াল কয়েন টস ছাড়া এদিন আক্ষরিক অর্থে ট্রাম্প জয় পেলেন না কিছুতেই। অন্যদিকে কামালার জয় বোঝাতে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি বাক্য- এর চেয়ে ভালো রাত সম্ভবত পাওয়া সম্ভব না।
সরকারি কৌঁসুলি হওয়ার সুবাদে যুক্তি তর্কে ব্যাপক পারদর্শিতা রয়েছে কামালার। তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো দুই নেতার প্রথম দ্বৈরথে। বিতর্কের শুরুতেই টেলিভিশনের সামনে বসা দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন কামালা। জানান, নির্বাচিত হলে মধ্যবিত্ত মার্কিনদের মূল্যস্ফীতির বোঝা কমাতে কাজ করবে তার সরকার।
কামালার পাতা ফাঁদে কয়েকবারই পা দিয়েছেন ট্রাম্প। দুর্বল নেতা হিসেবে সম্বোধন করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রিপাবলিকান এই নেতা। ওহাইয়োতে বসবাসকারী হাইতির অধিবাসীরা খেয়ে ফেলছেন প্রতিবেশিদের পোষা প্রাণী- এমন বেফাঁস ও অমূলক মন্তব্যও করেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে ট্রাম্প অযোগ্য, বিষয়টি প্রমাণে সহায়তা করেছে কামালার ফাঁদ।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার নৃবিজ্ঞান বিভাগ অধ্যাপক নোরমা মেন্ডোজা ডেন্টন বলেন, ‘ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দাবি শুনলাম কুকুরসহ পোষা প্রাণীদের খেয়ে ফেলা হচ্ছে। ট্রাম্প নিজের পরিকল্পনায় লেগে থাকতে পারেননি। তিনি মধ্য ও নিম্নবিত্ত ভোটারদের জন্য কীভাবে কাজ করবেন বিষয়টি বিতর্কে তুলে ধরতে পারেননি।’
তবে ট্রাম্পের কিছু ন্যারেটিভ কাজ করেছে তার পক্ষে। যেমন অনেকবার বাইডেনকে কামালার বস বা কর্তা হিসেবে আখ্যা দেন ট্রাম্প। বারবার একই দাবির মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন কামালার নিজস্ব কোনো স্ট্র্যাটেজি নেই। নির্বাচিত হলে জনগণের বদলে কর্তার ইচ্ছায় কামালা কাজ করবেন বলেও খোঁচা দেন ট্রাম্প।
নোরমা মেন্ডোজা ডেন্টন বলেন, ‘ট্রাম্প বাইডেনকে কামালার বস হিসেবে অভিহিত করেছেন। সম্ভবত পাঁচ থেকে ছয় বার এই কথা বলেন। এর মাধ্যমে কামালাকে খাটো করে উপস্থাপন করেছেন ট্রাম্প। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, দেশের জন্য কামালার আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই।’
তবে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কই কি নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে? ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে বেশ কিছু বিপরীতধর্মী নজির। ২০০৪ সালের বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন কেরির প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ। অনেক বিশ্লেষকই সেসময় বুশের হার দেখে ফেললেও দ্বিতীয় মেয়াদেও হোয়াইট হাউজের চাবি যায় এই রিপাবলিকান নেতার হাতে।
ট্রাম্পকে সাহস যোগাতে পারে আট বছর আগে নিজের তৈরি করা ইতিহাস। হিলারি ক্লিন্টনের কাছে তিনটি বিতর্কেই নাস্তানাবুদ হন তিনি। এমনকি জনজরিপেও ব্যবধান ছিল অনেক। তবে ঠিকই পরবর্তী চার বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিতর্কের পার্ফমেন্স কামালা কি ধরে রাখতে পারবেন নির্বাচনে? নাকি আবারও হিসেব নিকেশ পাল্টে হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন করবেন ট্রাম্প? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে নভেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত।