০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন তরতাজা বাংলাদেশ গড়তে চাই: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের সমাজে যে পচন ধরেছিল, ছাত্রদের আন্দোলন ছাড়া সেখান থেকে মুক্তির কোনো উপায় ছিল না। আর পচন নয়, আমরা নতুন তরতাজা বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়লগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশিদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনার সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এ সুযোগ আর কখনো আসবে কি না জানি না। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পরিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে। দুনিয়ায় এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়ত কেউ সরকারে আছেন, কেউবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আছে। পারস্পরিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।’

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ব্যবসায় বাধার কোনো সীমা নেই। ব্যবসা করা এক মহা সংগ্রাম। তবে আমরা এসব বাধা পেরিয়ে যেতে আজ একযোগে সরকার, সরকারের বাইরে সবাই এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাব।’

জেনেভা কনভেনশনে যোগদান প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা বহুদিন পড়ে আছে, আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। সবাই যখন একটা টিম হলাম; শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই যখন টিম হলাম ওটাও আমরা করে ফেলব।’

দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।’

দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় প্রথমারের মতো ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সংলাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে “জাতীয় ব্যবসা সংলাপ” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সসহ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন। দীর্ঘ এই সংলাপে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি উঠে আসে বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্র।

সভাপতির বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) নির্বাহী পরিচালক মীর নাসির বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু দুষ্কৃতকারী। যার বড় প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানার উপর।’ এজন্য যৌথবাহিনীর তৎপরতা আরও জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মীর নাসির বলেন, ‘বহিরাগতদের কারণে শিল্প-কারখানাগুলোতে অস্থিতরতা বাড়ছে। এমনকি শ্রমিকসংগঠনগুলো এর সাথে জড়িত নয় বলে জানাচ্ছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে লুট হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

অভ্যুত্থান পরবর্তী আর্থিক খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের অর্জনকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে ব্যবসায়ী সমাজ।

মীর নাসির বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে আরও বেশি পরিমাণ সেনাবাহিনীর টহল জোরদারের জন্য অনুরোধ করছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা বলেন, কিছু ব্যবসায়ী শিল্প মালিক বিগত সরকারের আনুকুল্যে থেকে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছেন। তারা দেশের সুনাম নষ্ট করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলগুলো অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আমরা আশা করছি সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই সাময়িক অসুবিধা থেকে নিজেদের কাটিয়ে নিতে পারবো।’

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৫ থেকে ১৬ বছরের সমস্যাগুলো আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করবো।’

নতুন তরতাজা বাংলাদেশ গড়তে চাই: ড. ইউনূস

আপডেট : ১১:১০:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের সমাজে যে পচন ধরেছিল, ছাত্রদের আন্দোলন ছাড়া সেখান থেকে মুক্তির কোনো উপায় ছিল না। আর পচন নয়, আমরা নতুন তরতাজা বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়লগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশিদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনার সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এ সুযোগ আর কখনো আসবে কি না জানি না। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পরিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে। দুনিয়ায় এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়ত কেউ সরকারে আছেন, কেউবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আছে। পারস্পরিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।’

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ব্যবসায় বাধার কোনো সীমা নেই। ব্যবসা করা এক মহা সংগ্রাম। তবে আমরা এসব বাধা পেরিয়ে যেতে আজ একযোগে সরকার, সরকারের বাইরে সবাই এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাব।’

জেনেভা কনভেনশনে যোগদান প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা বহুদিন পড়ে আছে, আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। সবাই যখন একটা টিম হলাম; শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই যখন টিম হলাম ওটাও আমরা করে ফেলব।’

দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।’

দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় প্রথমারের মতো ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সংলাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে “জাতীয় ব্যবসা সংলাপ” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সসহ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন। দীর্ঘ এই সংলাপে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি উঠে আসে বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্র।

সভাপতির বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) নির্বাহী পরিচালক মীর নাসির বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু দুষ্কৃতকারী। যার বড় প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানার উপর।’ এজন্য যৌথবাহিনীর তৎপরতা আরও জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মীর নাসির বলেন, ‘বহিরাগতদের কারণে শিল্প-কারখানাগুলোতে অস্থিতরতা বাড়ছে। এমনকি শ্রমিকসংগঠনগুলো এর সাথে জড়িত নয় বলে জানাচ্ছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে লুট হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

অভ্যুত্থান পরবর্তী আর্থিক খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের অর্জনকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে ব্যবসায়ী সমাজ।

মীর নাসির বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে আরও বেশি পরিমাণ সেনাবাহিনীর টহল জোরদারের জন্য অনুরোধ করছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা বলেন, কিছু ব্যবসায়ী শিল্প মালিক বিগত সরকারের আনুকুল্যে থেকে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছেন। তারা দেশের সুনাম নষ্ট করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলগুলো অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আমরা আশা করছি সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই সাময়িক অসুবিধা থেকে নিজেদের কাটিয়ে নিতে পারবো।’

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৫ থেকে ১৬ বছরের সমস্যাগুলো আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করবো।’