০৩:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৫ দেখেছেন

স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ যত নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, বেশিরভাগই নিয়োগে পেয়েছে দলীয় বিবেচনা। ফলে প্রায় প্রতিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি সৎ আদর্শিক রাজনীতিবিদরা নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেননি। এমনটাই মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সবশেষ করা আইনটিও ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এই আইন বাতিল কিংবা পুনর্লিখনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্ষমতার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব হয়েছে। অনেক দেশেই আন্দোলনের মুখে পালিয়েছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। কিন্তু, একটি নির্বাচিত সরকারের পুরোটা পালিয়েছে, বাংলাদেশের মত এমন উদহারণ ইতিহাসে বিরল। যেখানে শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, বরং পুরো ৩০০ আসনের সংসদ সদস্যদের কেউ পালিয়ে গেছেন, কেউ আছেন আত্মগোপনে। তাহলে প্রশ্ন, কারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন। নাকি নির্বাচনেই গলদ!

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার যদি নিরপেক্ষ হতেন, তার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তারা যদি নিরপেক্ষ হতেন তাহলে তো এরকম একটা সরকারই তৈরি হতো না। যে সরকারকে ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যেতে হয়। শেখ হাসিনা পালানোর সাথে সাথে ৩৪৫ জন এমপিকে নিয়েই পালিয়ে গেলেন। তিনি গিয়েছেন একা কিন্তু বাকিদেরও তো কোনো ট্রেস পাওয়া যাচ্ছে না। তারা লুকিয়ে গেছে বা পালিয়ে গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থার গাফিলতি ছিল বলেই তাদের পালাতে হয়েছে।’

বিশ্লেষকদের মতে একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে গণতন্ত্রের সবটুুকুই ভেঙ্গে পড়ে। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতেই দেয়নি কোনো সরকার। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে দলীয় বিবেচনায়।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘বাংলাদেশে কখনোই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। কখনও এটা বিশ্বাসযোগ্য অবস্থায় পৌঁছায়নি। মূলত দুইভাবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়েছে। একটা হচ্ছে ২০২২ সালের আগে যে সরকার ক্ষমতায় থাকতো তাদের সুইট উইল অনুযায়ী হতো। অর্থাৎ তারা যাদের ভালো মনে করতেন, যাদের দিয়ে তাদের কাজ হবে তাদের নিয়োগ দিতেন। তবে সেখানেও দুইটা ভাগ আছে, একটা রাজনৈতিক দলের দ্বারা আর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতেন, তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ দিলেও ভালো ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ দেয়ার চিন্তা করতেন।’

সবশেষ আউয়াল কমিশন নিয়োগে মাত্র চার পাতার একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, সেটা খুব বেশি পরিষ্কার করা হয়নি। গোটা আইনটাই ত্রুটিপূর্ণ বলে মত নির্বাচন বিশ্লেষকদের। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে এই আইন পুনর্লিখন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

আব্দুল আলীম বলেন, ‘যদিও একটা আইন হয়েছে, কিন্তু এটাও দলীয় বিবেচনা, পক্ষপাতিত্ব এবং যারা ক্ষমতাসীন ছিল তাদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেয়ার নানারকম ম্যাকানিজম আইনের মধ্যে আছে বা ছিল। এক নম্বর হচ্ছে যে আইনটা আছে সেটা পুনর্লিখন করা আর দুই নম্বর হচ্ছে এটাকে বাদ দিয়ে নতুন একটা আইন তৈরি করা।

অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘সংবিধানের অধীনে থাকলে সেই আইনে কোনো সরকারই কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এটাই তো সবচেয়ে বড় শক্তি। নির্বাচন কমিশনার তখনই স্বাধীন থাকবেন যখন তার কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে যারা সার্চ কমিটির দায়িত্বপালন করবেন, তাদেরকেও রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত থাকতে হবে এবং নিয়োগও দিতে হবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের। একইসঙ্গে প্রস্তাবিত কমিশনারদের পক্ষে বিপক্ষে জনমতও যাচাই করতে হবে।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘যারা নিয়োগ দিবেন, তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে। তারা কোনোপ্রকার রাজনৈতিক বায়াস্ট হয়ে কাজ করবেন না। তাদের যোগ্যতা থাকতে হবে। যেন নির্বাচন কমিশনের ওই বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ, যাদের অভিজ্ঞতা আছে, যাদের নির্বাচনের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা আছে তাদের নিয়োগ দেয়ার জন্য একটা ক্রাইটেরিয়া তৈরি করতে হবে। এবং সে ক্রাইটেরিয়া ধরে লোকজন বাছাই করতে হবে। আর তৃতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় জনগণকে ইনভলব করতে হবে। অর্থাৎ যাদের বাছাই করা হবে তাদের সম্পর্কে জনগণের মতামত নিতে হবে। কারণ ইলেকশন বিলংস টু দ্যা পিপল। জনগণকে নিয়ে এ কাজ না করলে, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’

নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে বিষয়ে রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজের ঐক্যমতের বিষয়কেও খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করে নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা

আপডেট : ১২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ যত নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, বেশিরভাগই নিয়োগে পেয়েছে দলীয় বিবেচনা। ফলে প্রায় প্রতিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি সৎ আদর্শিক রাজনীতিবিদরা নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেননি। এমনটাই মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সবশেষ করা আইনটিও ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এই আইন বাতিল কিংবা পুনর্লিখনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্ষমতার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব হয়েছে। অনেক দেশেই আন্দোলনের মুখে পালিয়েছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। কিন্তু, একটি নির্বাচিত সরকারের পুরোটা পালিয়েছে, বাংলাদেশের মত এমন উদহারণ ইতিহাসে বিরল। যেখানে শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, বরং পুরো ৩০০ আসনের সংসদ সদস্যদের কেউ পালিয়ে গেছেন, কেউ আছেন আত্মগোপনে। তাহলে প্রশ্ন, কারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন। নাকি নির্বাচনেই গলদ!

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার যদি নিরপেক্ষ হতেন, তার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তারা যদি নিরপেক্ষ হতেন তাহলে তো এরকম একটা সরকারই তৈরি হতো না। যে সরকারকে ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যেতে হয়। শেখ হাসিনা পালানোর সাথে সাথে ৩৪৫ জন এমপিকে নিয়েই পালিয়ে গেলেন। তিনি গিয়েছেন একা কিন্তু বাকিদেরও তো কোনো ট্রেস পাওয়া যাচ্ছে না। তারা লুকিয়ে গেছে বা পালিয়ে গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থার গাফিলতি ছিল বলেই তাদের পালাতে হয়েছে।’

বিশ্লেষকদের মতে একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে গণতন্ত্রের সবটুুকুই ভেঙ্গে পড়ে। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতেই দেয়নি কোনো সরকার। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে দলীয় বিবেচনায়।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘বাংলাদেশে কখনোই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। কখনও এটা বিশ্বাসযোগ্য অবস্থায় পৌঁছায়নি। মূলত দুইভাবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়েছে। একটা হচ্ছে ২০২২ সালের আগে যে সরকার ক্ষমতায় থাকতো তাদের সুইট উইল অনুযায়ী হতো। অর্থাৎ তারা যাদের ভালো মনে করতেন, যাদের দিয়ে তাদের কাজ হবে তাদের নিয়োগ দিতেন। তবে সেখানেও দুইটা ভাগ আছে, একটা রাজনৈতিক দলের দ্বারা আর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতেন, তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ দিলেও ভালো ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ দেয়ার চিন্তা করতেন।’

সবশেষ আউয়াল কমিশন নিয়োগে মাত্র চার পাতার একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, সেটা খুব বেশি পরিষ্কার করা হয়নি। গোটা আইনটাই ত্রুটিপূর্ণ বলে মত নির্বাচন বিশ্লেষকদের। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে এই আইন পুনর্লিখন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

আব্দুল আলীম বলেন, ‘যদিও একটা আইন হয়েছে, কিন্তু এটাও দলীয় বিবেচনা, পক্ষপাতিত্ব এবং যারা ক্ষমতাসীন ছিল তাদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেয়ার নানারকম ম্যাকানিজম আইনের মধ্যে আছে বা ছিল। এক নম্বর হচ্ছে যে আইনটা আছে সেটা পুনর্লিখন করা আর দুই নম্বর হচ্ছে এটাকে বাদ দিয়ে নতুন একটা আইন তৈরি করা।

অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘সংবিধানের অধীনে থাকলে সেই আইনে কোনো সরকারই কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এটাই তো সবচেয়ে বড় শক্তি। নির্বাচন কমিশনার তখনই স্বাধীন থাকবেন যখন তার কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে যারা সার্চ কমিটির দায়িত্বপালন করবেন, তাদেরকেও রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত থাকতে হবে এবং নিয়োগও দিতে হবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের। একইসঙ্গে প্রস্তাবিত কমিশনারদের পক্ষে বিপক্ষে জনমতও যাচাই করতে হবে।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘যারা নিয়োগ দিবেন, তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে। তারা কোনোপ্রকার রাজনৈতিক বায়াস্ট হয়ে কাজ করবেন না। তাদের যোগ্যতা থাকতে হবে। যেন নির্বাচন কমিশনের ওই বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ, যাদের অভিজ্ঞতা আছে, যাদের নির্বাচনের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা আছে তাদের নিয়োগ দেয়ার জন্য একটা ক্রাইটেরিয়া তৈরি করতে হবে। এবং সে ক্রাইটেরিয়া ধরে লোকজন বাছাই করতে হবে। আর তৃতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় জনগণকে ইনভলব করতে হবে। অর্থাৎ যাদের বাছাই করা হবে তাদের সম্পর্কে জনগণের মতামত নিতে হবে। কারণ ইলেকশন বিলংস টু দ্যা পিপল। জনগণকে নিয়ে এ কাজ না করলে, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’

নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে বিষয়ে রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজের ঐক্যমতের বিষয়কেও খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করে নির্বাচন বিশ্লেষকরা।