০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবিধানের পরিবর্তন না হলে আরও বড় স্বৈরাচার আসবে!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১২:৩৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৬ দেখেছেন

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কারের জন্য ড. শাহদীন মালিককে প্রধান করে একটি কমিশনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য স্বৈরাচার আমলে ব্যাপক কাটা ছেড়ার শিকার হওয়া সংবিধানের পুনর্লিখন প্রয়োজন। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা না গেলে, ভবিষ্যতে আরও বড় স্বৈরাচার ফিরে আসার শঙ্কাও করছেন তারা। কিন্তু অনির্বাচিত একটি সরকারের নেতৃত্বে এই সংস্কার কতটা সম্ভব?

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করা হয়। আর সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিন-তিনটি এক তরফা নির্বাচন হয়েছে। সংবিধান আর নির্বাচন ব্যবস্থার এই যে পরিবর্তন সেটাও আওয়ামী লীগকে স্বৈরশাসক হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছে বলেই মনে করা হয়।

২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে দেয়, তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন করে ফেলে আওয়ামী লীগ। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানে ফিরিয়ে আনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যখন কর্তৃত্ববাদী সে শাসনামলের পতন ঘটেছে তখন রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনার সঙ্গে দাবি উঠেছে সেই সংবিধান পুনর্লিখনের। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেখানে, সংশোধনের সুযোগ আছে, সেখানে পুনর্লিখন কেন?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘পুনর্লিখনের প্রশ্নটা এসেছে তিনটি কারণে। প্রথমটা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন যে বিরাজমান সংবিধান আছে ১৭টি সংশোধনীর পর, দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পথ খুব সহজ। শুধু সহজই না, এই সংবিধান স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পথই খুলে দেয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সংবিধান এখন যেভাবে আছে সেখানে তার এক-তৃতীয়াংশতে হাত দেয়ার জায়গা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘অ্যামেনমেন্ডের থেকে রিলাইটি ভালো। কারণ অ্যামেনমেন্ড করলে এদের স্পিডটা প্রসিউড হচ্ছে না। এই বিপ্লবের স্পিডটা প্রসিউড হচ্ছে না। অনেকেই বলে যে না, এমন কোনো ফর্ম রাখা যাবে না যে ফর্মে আওয়ামী লীগ আছে।’

বস্তুত, প্রায় ১৭ বছরের একনায়ক শাসনামলে সব মিলিয়ে চারটি সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ। এবং এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও সাধারণ কাঠামোতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পুনর্লিখনের ব্যাপারে যে কারণে জোর দিচ্ছেন, তার অন্যতম কারণ গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য যে ধরনের পরিবর্তন দরকার সংবিধানে তার সুযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগের আমলে সংবিধানের নানা ধরনের কাটা ছেড়ার মাধ্যমে।

যেমন, সংবিধানের প্রথম ভাগের ৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহ সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে। এবং ৭ এর ক-তে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা সেটি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবেন।’

অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘একটা সংবিধান পরিবর্তনের ধারা যদি না থাকে তাহলে তো হবে না।’

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সংস্কার করতে হলে রাষ্ট্রের যে সুপ্রিম আইন বা সংবিধান আছে, সেটাকে রিফর্ম করা জরুরি। যেহেতু অনেককিছু এসেছে সেজন্য অনেককিছু সংযোজন করতে হবে। এতো অ্যামেনমেন্ডের আর দরকার নেই। পুনর্লিখন করলে এটা সহজ হবে।’

কিন্তু সংবিধানে সংযোজন কিংবা বিয়োজনের অধিকার তো আইনসভা বা সংসদ দ্বারা সীমাবদ্ধ। এমন অবস্থায় পুনর্লিখন কীভাবে সম্ভব?

অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘এই যে রক্ত, এটা কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের রক্ত না। এটা কোনো রাজনৈতিক ব্যানারের রক্ত না। এটা আপামর জনতার রক্ত, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। সেজন্য এটাকে বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। অর্থাৎ অভ্যুত্থানের পরবর্তী অবস্থাতে নতুন করে সবিধান লেখা দরকার।’

মোটা দাগে বিশ্লেষকরা যে তিনটি পদ্ধতির কথা বলছেন, তাতে ১৯৭২ সালে সংবিধান লেখার জন্য গঠিত গণপরিষদের আলোকে আরেকটি গণপরিষদ বা কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি, সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোকে ডেকে কনস্টিটিউশন কনভেনশন কিংবা আলোচনার ভিত্তিতে পুনর্লিখনের ব্যাপারটি আলোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণভোট নেয়া হবে কি না, এ নিয়ে মতপার্থক্য আছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘যে তিনটি পথ বলেছি, প্রতিটির বিষয়ে প্রধান বিষয় হলো গণভোট করতে হবে। প্রতিটি মানুষ যেন বলতে পারেন যে তারা এটা পছন্দ করছেন বা করছেন না। ‌এই আলোচনা সবাইকে করতে হবে। তারপর তারই একটা প্রতিফলন হয়তো আমরা দেখতে পাবো। আর এখানে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত করতে হবে। কারণ রাজনীতি তো রাজনৈতিক দলগুলোই করবে। অন্তর্বর্তী সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। দেশ শেষ পর্যন্ত শাসন করবে রানৈতিক দলগুলো।’

এসব বিশ্লেষকদের কথায় এটা স্পষ্ট, গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তারা বিরাজমান সংবিধানের একটা আমূল পরিবর্তন চাইছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো শপথ নেয়া থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সংবিধান অনুসরণ করেই চলছে। যদিও এরই মধ্যে আগের সংবিধানের কয়েকটি আইন রহিত করে কয়েকটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি, যেগুলো আইন আকারে বৈধতা না দিলে আবার ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন ছিল, যদি শেষমেষ সংবিধানের যে আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যদি না হয়, তাহলে কী হবে?

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘সংবিধানের পুনর্লিখন ব্যবস্থা না করা গেলে বাংলাদেশ বৃত্তের মতো আরও ভয়াবহ এক স্বৈরাচারের কবলে পড়বে।’

এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধান পুনর্লিখনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি। তাই পুনর্লিখন না সংশোধন, গণপরিষদ না গণভোট নাকি কোনোটাই নয়, এসব ব্যাপারগুলো নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বা ঘোষণার জন্য।

সংবিধানের পরিবর্তন না হলে আরও বড় স্বৈরাচার আসবে!

আপডেট : ১২:৩৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কারের জন্য ড. শাহদীন মালিককে প্রধান করে একটি কমিশনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য স্বৈরাচার আমলে ব্যাপক কাটা ছেড়ার শিকার হওয়া সংবিধানের পুনর্লিখন প্রয়োজন। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা না গেলে, ভবিষ্যতে আরও বড় স্বৈরাচার ফিরে আসার শঙ্কাও করছেন তারা। কিন্তু অনির্বাচিত একটি সরকারের নেতৃত্বে এই সংস্কার কতটা সম্ভব?

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করা হয়। আর সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিন-তিনটি এক তরফা নির্বাচন হয়েছে। সংবিধান আর নির্বাচন ব্যবস্থার এই যে পরিবর্তন সেটাও আওয়ামী লীগকে স্বৈরশাসক হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছে বলেই মনে করা হয়।

২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে দেয়, তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন করে ফেলে আওয়ামী লীগ। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানে ফিরিয়ে আনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যখন কর্তৃত্ববাদী সে শাসনামলের পতন ঘটেছে তখন রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনার সঙ্গে দাবি উঠেছে সেই সংবিধান পুনর্লিখনের। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেখানে, সংশোধনের সুযোগ আছে, সেখানে পুনর্লিখন কেন?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘পুনর্লিখনের প্রশ্নটা এসেছে তিনটি কারণে। প্রথমটা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন যে বিরাজমান সংবিধান আছে ১৭টি সংশোধনীর পর, দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পথ খুব সহজ। শুধু সহজই না, এই সংবিধান স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পথই খুলে দেয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সংবিধান এখন যেভাবে আছে সেখানে তার এক-তৃতীয়াংশতে হাত দেয়ার জায়গা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘অ্যামেনমেন্ডের থেকে রিলাইটি ভালো। কারণ অ্যামেনমেন্ড করলে এদের স্পিডটা প্রসিউড হচ্ছে না। এই বিপ্লবের স্পিডটা প্রসিউড হচ্ছে না। অনেকেই বলে যে না, এমন কোনো ফর্ম রাখা যাবে না যে ফর্মে আওয়ামী লীগ আছে।’

বস্তুত, প্রায় ১৭ বছরের একনায়ক শাসনামলে সব মিলিয়ে চারটি সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ। এবং এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও সাধারণ কাঠামোতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পুনর্লিখনের ব্যাপারে যে কারণে জোর দিচ্ছেন, তার অন্যতম কারণ গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য যে ধরনের পরিবর্তন দরকার সংবিধানে তার সুযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগের আমলে সংবিধানের নানা ধরনের কাটা ছেড়ার মাধ্যমে।

যেমন, সংবিধানের প্রথম ভাগের ৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহ সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে। এবং ৭ এর ক-তে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা সেটি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবেন।’

অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘একটা সংবিধান পরিবর্তনের ধারা যদি না থাকে তাহলে তো হবে না।’

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সংস্কার করতে হলে রাষ্ট্রের যে সুপ্রিম আইন বা সংবিধান আছে, সেটাকে রিফর্ম করা জরুরি। যেহেতু অনেককিছু এসেছে সেজন্য অনেককিছু সংযোজন করতে হবে। এতো অ্যামেনমেন্ডের আর দরকার নেই। পুনর্লিখন করলে এটা সহজ হবে।’

কিন্তু সংবিধানে সংযোজন কিংবা বিয়োজনের অধিকার তো আইনসভা বা সংসদ দ্বারা সীমাবদ্ধ। এমন অবস্থায় পুনর্লিখন কীভাবে সম্ভব?

অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, ‘এই যে রক্ত, এটা কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের রক্ত না। এটা কোনো রাজনৈতিক ব্যানারের রক্ত না। এটা আপামর জনতার রক্ত, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। সেজন্য এটাকে বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। অর্থাৎ অভ্যুত্থানের পরবর্তী অবস্থাতে নতুন করে সবিধান লেখা দরকার।’

মোটা দাগে বিশ্লেষকরা যে তিনটি পদ্ধতির কথা বলছেন, তাতে ১৯৭২ সালে সংবিধান লেখার জন্য গঠিত গণপরিষদের আলোকে আরেকটি গণপরিষদ বা কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি, সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোকে ডেকে কনস্টিটিউশন কনভেনশন কিংবা আলোচনার ভিত্তিতে পুনর্লিখনের ব্যাপারটি আলোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণভোট নেয়া হবে কি না, এ নিয়ে মতপার্থক্য আছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘যে তিনটি পথ বলেছি, প্রতিটির বিষয়ে প্রধান বিষয় হলো গণভোট করতে হবে। প্রতিটি মানুষ যেন বলতে পারেন যে তারা এটা পছন্দ করছেন বা করছেন না। ‌এই আলোচনা সবাইকে করতে হবে। তারপর তারই একটা প্রতিফলন হয়তো আমরা দেখতে পাবো। আর এখানে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত করতে হবে। কারণ রাজনীতি তো রাজনৈতিক দলগুলোই করবে। অন্তর্বর্তী সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। দেশ শেষ পর্যন্ত শাসন করবে রানৈতিক দলগুলো।’

এসব বিশ্লেষকদের কথায় এটা স্পষ্ট, গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তারা বিরাজমান সংবিধানের একটা আমূল পরিবর্তন চাইছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো শপথ নেয়া থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সংবিধান অনুসরণ করেই চলছে। যদিও এরই মধ্যে আগের সংবিধানের কয়েকটি আইন রহিত করে কয়েকটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি, যেগুলো আইন আকারে বৈধতা না দিলে আবার ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন ছিল, যদি শেষমেষ সংবিধানের যে আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যদি না হয়, তাহলে কী হবে?

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘সংবিধানের পুনর্লিখন ব্যবস্থা না করা গেলে বাংলাদেশ বৃত্তের মতো আরও ভয়াবহ এক স্বৈরাচারের কবলে পড়বে।’

এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধান পুনর্লিখনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি। তাই পুনর্লিখন না সংশোধন, গণপরিষদ না গণভোট নাকি কোনোটাই নয়, এসব ব্যাপারগুলো নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বা ঘোষণার জন্য।