ইউক্রেনে অভিযানের জেরে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক উত্তপ্ত। এবার রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পশ্চিমা মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেয়ার দারপ্রান্তে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। এতে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। যার অংশ হিসেবে এই মুহূর্তে ব্রিটেনকে লক্ষ্য করে একের পর এক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া। এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
গেল ৬ আগস্ট রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। এর মধ্য দিয়ে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ক্রেমলিনের বৈরিতাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেনে আলোচিত স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। তবে শর্ত দিয়েছে যে ইউক্রেনকে এ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার শুধু নিজ দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
একই সঙ্গে রাশিয়াতেও হামলা চালানোর ক্ষেত্রে যাতে ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা করে পথে রয়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। যদি তাই ঘটে তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে বিবেচনা করে ক্রেমলিনও বসে থাকবে না বলে হুমকি দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় আক্রমণ চালানোর অনুমতি দেয়ার মানে দাঁড়াবে, যুদ্ধে ন্যাটো দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণ। মানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোও রাশিয়ার সাথে সরাসরি লড়াই করছে। যদি তাই হয়, তবে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন বিবেচনায় আমরাও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
পুতিনের এমন হুংকারের জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, রাশিয়াই যেহেতু ইউক্রেনের সাথে সংঘাতের সূচনা করেছে, তাই পুতিন চাইলেই এ যুদ্ধ থামাতে পারেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া ইতিমধ্যেই ন্যাটোর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। নতুন করে সরাসরি যুদ্ধের বিষয়ে হুঁশিয়ারির বিষয়টি হতে পারে আরেকটি নতুন পরিকল্পনার কোনো অংশ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জেমস নিক্সি বলেন, ‘পশ্চিমারাও জানে যে পুতিন বোকা নয়, তিনি খেলছেন। তাই পুতিন যখন রাশিয়ান-ন্যাটো যুদ্ধের কথা বলেন, তখন এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়। তবে এটিও ভালভাবে বোঝা যায় যে এটি একটি নাটক। আমি এটা বলছি তার কারণ হচ্ছে, আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে রাশিয়া ইতিমধ্যেই ন্যাটোর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এবারের হুঁশিয়ারি অবশ্যই এমন কিছু যা নতুনভাবে পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।’
এদিকে পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনায় এই মুহূর্তে ব্রিটেনকে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তু করছে রাশিয়া। এরইমধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ব্রিটিশ দূতাবাসের ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে রাশিয়া। যদিও রাশিয়ার এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে ব্রিটেন।
জেমস নিক্সি আরও্র বলেন, ‘স্পষ্টতই ব্রিটেন-রাশিয়া সম্পর্ক আরও খারাপ হচ্ছে। আমি মনে করছি যে, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের সাথে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দিকে এক ধাপ এগুলো রাশিয়া।’
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলছেন ভিন্ন কথা। ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার মানে এই নয় যে, লন্ডনের সাথে মস্কো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘গোয়েন্দা ও নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্য রাশিয়ায় অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের ছয় কূটনৈতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত লন্ডনের সাথে মস্কোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত নয়।’
এ অবস্থায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ অভিযান বন্ধের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে- রাশিয়া ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নতুন উত্তেজনা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।