ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য হবে গণভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:৫০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কর্তৃত্ববাদী সরকারের জান্তব নিদর্শন গণভবন। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণ-আন্দোলনে পরাজিত এই ভবন। নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য হিসেবে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণে পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারুণ্যের কাছে স্বৈরাচারের যে পরাজয় তার নিদর্শনস্বরূপ গণভবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হবে বলে মত তাদের।

প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উত্তাল রাজপথ। কর্তৃত্ববাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার লড়াই। যে লড়াই শোষণের বিরুদ্ধে; লক্ষ্য ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান। স্বপ্ন বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেঙে সাম্য প্রতিষ্ঠার।

৫ আগস্ট, ২০২৪। স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনা করতে ছাত্র-জনতা নামে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে। জনরোষের মুখে গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। জয়োল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। গণভবন হয়ে যায় সাধারণ জনতার।

এই গণভবন থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় নানা বৈষম্য, লুটেরাতন্ত্র আর অনাচারের জন্ম দিয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্মারক হিসেবে সেই গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে গণভবন পরিদর্শন করেছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা।

৩৬ দিনের এই গণঅভ্যুত্থানের পুরো ঘটনাপ্রবাহ সংরক্ষিত থাকবে এখানে। যা আওয়ামী শাসনামলে নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য বহন করবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি। আমাদের আকাঙ্খার কথা জানিয়েছি, কীভাবে দেখতে চাই। সেই সঙ্গে একটি ফর্মাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ১ টাকা দিয়ে মালিকানা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু জনগণের জন্য কতটুকু ছিল? আমরা জনগণের জন্য এটা উন্মুক্ত করার চিন্তা করছি।’

গণভবনকে জাদুঘর করার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলছেন গবেষকরা। তারুণ্যের কাছে স্বৈরাচারের যে পরাজয় তার নিদর্শনস্বরূপ গণভবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘তরুণরা, স্কুলের শিক্ষার্থীরা টের পেয়েছে যে এই গণভবন হচ্ছে সব নষ্টের গোড়া। এবং এখানে যে স্বৈরাচারের উত্থান হয়েছে, এটা মানুষ জানতো। এখান থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে মানুষ জানতো।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এটাও জানতো এখান থেকে যদি নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বন্ধ হবে। সুতরাং মানুষ গণভবনে গেছে এবং আমি মনে করি জাদুঘর হলে মানুষ সেখানে যেতেই থাকবে। মানুষের ঢল থামানো যাবে না।’

রাষ্ট্রীয় নৃশংসতা ও স্বৈরশাসনের নিদর্শন সংরক্ষণের উদ্যোগ অনেক দেশেই আছে। কিন্তু তারপরও হিটলারের নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার, রুশ শাসক স্ট্যালিনের বিভীষিকাময় শাসনের অনেক তথ্য-নির্দেশন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

সে কারণে জুলাই হত্যাকাণ্ডের জাদুঘর হিসেবে গণভবনের কিউরেটিং ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, পূর্ত বিভাগ আছে, স্থাপত্য বিভাগ আছে। তারা যে কাঠামোগত সংস্কার করবেন, কিছু জিনিস অক্ষত রাখবেন। এ জাদুঘরকে আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে পরিণত করা যায়।’

মানুষের অধিকার হরণের যে ইতিহাস রচিত হয়েছে গণভবনকে ঘিরে, তার বিশদ বর্ণনা ও নিদর্শন স্বৈরতন্ত্রকে বুঝতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য, এটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য হবে গণভবন

আপডেট সময় : ০২:৫০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কর্তৃত্ববাদী সরকারের জান্তব নিদর্শন গণভবন। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণ-আন্দোলনে পরাজিত এই ভবন। নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য হিসেবে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণে পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারুণ্যের কাছে স্বৈরাচারের যে পরাজয় তার নিদর্শনস্বরূপ গণভবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হবে বলে মত তাদের।

প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উত্তাল রাজপথ। কর্তৃত্ববাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার লড়াই। যে লড়াই শোষণের বিরুদ্ধে; লক্ষ্য ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান। স্বপ্ন বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেঙে সাম্য প্রতিষ্ঠার।

৫ আগস্ট, ২০২৪। স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনা করতে ছাত্র-জনতা নামে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে। জনরোষের মুখে গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। জয়োল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। গণভবন হয়ে যায় সাধারণ জনতার।

এই গণভবন থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় নানা বৈষম্য, লুটেরাতন্ত্র আর অনাচারের জন্ম দিয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্মারক হিসেবে সেই গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে গণভবন পরিদর্শন করেছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা।

৩৬ দিনের এই গণঅভ্যুত্থানের পুরো ঘটনাপ্রবাহ সংরক্ষিত থাকবে এখানে। যা আওয়ামী শাসনামলে নিপীড়ন, গুম-হত্যার দালিলিক প্রমাণের সাক্ষ্য বহন করবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি। আমাদের আকাঙ্খার কথা জানিয়েছি, কীভাবে দেখতে চাই। সেই সঙ্গে একটি ফর্মাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ১ টাকা দিয়ে মালিকানা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু জনগণের জন্য কতটুকু ছিল? আমরা জনগণের জন্য এটা উন্মুক্ত করার চিন্তা করছি।’

গণভবনকে জাদুঘর করার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলছেন গবেষকরা। তারুণ্যের কাছে স্বৈরাচারের যে পরাজয় তার নিদর্শনস্বরূপ গণভবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘তরুণরা, স্কুলের শিক্ষার্থীরা টের পেয়েছে যে এই গণভবন হচ্ছে সব নষ্টের গোড়া। এবং এখানে যে স্বৈরাচারের উত্থান হয়েছে, এটা মানুষ জানতো। এখান থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে মানুষ জানতো।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এটাও জানতো এখান থেকে যদি নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বন্ধ হবে। সুতরাং মানুষ গণভবনে গেছে এবং আমি মনে করি জাদুঘর হলে মানুষ সেখানে যেতেই থাকবে। মানুষের ঢল থামানো যাবে না।’

রাষ্ট্রীয় নৃশংসতা ও স্বৈরশাসনের নিদর্শন সংরক্ষণের উদ্যোগ অনেক দেশেই আছে। কিন্তু তারপরও হিটলারের নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার, রুশ শাসক স্ট্যালিনের বিভীষিকাময় শাসনের অনেক তথ্য-নির্দেশন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

সে কারণে জুলাই হত্যাকাণ্ডের জাদুঘর হিসেবে গণভবনের কিউরেটিং ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, পূর্ত বিভাগ আছে, স্থাপত্য বিভাগ আছে। তারা যে কাঠামোগত সংস্কার করবেন, কিছু জিনিস অক্ষত রাখবেন। এ জাদুঘরকে আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে পরিণত করা যায়।’

মানুষের অধিকার হরণের যে ইতিহাস রচিত হয়েছে গণভবনকে ঘিরে, তার বিশদ বর্ণনা ও নিদর্শন স্বৈরতন্ত্রকে বুঝতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য, এটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।