স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য এখনও যোগ দেননি তারা অপকর্মের সাথে জড়িত, তাদের আর যোগ দিতে দেয়া হবে না।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা এবং ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহি মৌলিক প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সংস্কারের মাধ্যমে একটি দক্ষ, সুসংগঠিত, পেশাদার ও সময়োপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে যা যা করণীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তা তা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জরুরি মুহূর্তে আনসার বাহিনীর সদস্যরা গভীর দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বিধানসহ কূটনৈতিক এলাকার সুরক্ষায় এ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থানা, ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর স্বল্পতার মধ্যেও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি জাতির জরুরি প্রয়োজনে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য বাহিনীটির সব সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী ভিডিপি সদস্যরাও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামে গ্রামে যে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট দেখা দিয়েছিল, ভিডিপি সদস্যরা তা নিরসনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, যারা মন্দির, গির্জা, চার্চে হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভিডিপি সদস্যরা। তারা ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে পাহারা বসিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি রক্ষায় অবদান রেখেছিল।
উপদেষ্টা ভবিষ্যতেও ভিডিপি সদস্যরা তারুণ্য নির্ভর স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় সুসংগঠিত হয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তায় আরও বেশি অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, পুলিশের ১৮৭ সদস্য এখনও কাজে যোগ দেননি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এরমধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদার ১ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ৭ জন, পুলিশ সুপার ২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ৫ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৫ জন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন এবং কনস্টেবল আছেন ১৩৬ জন।
আনসার বাহিনীর দেশপ্রেম নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জরুরি মুহূর্তে আনসার বাহিনীর সদস্যগণ গভীর দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাবিধানসহ কূটনৈতিক এলাকার সুরক্ষায় এ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।