হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার পেস তোপে পড়ে ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। সেখান থেকে স্বাগতিকদের কোমর সোজা করার দায়িত্বটা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নেন অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এ দু’জনের অবিচ্ছিন্ন ১৯৫ রানের জুটিতে ভর করে প্রথম দিনে ৩৩৯ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। অথচ একটা সময় ২শ’ হবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ ছিল। দিন শেষে অশ্বিন ১০২ ও জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত আছেন।
ক্যারিয়ারে এটি ছিল অশ্বিনের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি, তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল প্রথম। অন্যদিকে ক্যারিয়ারে পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রবীন্দ্র জাদেজা। সপ্তম উইকেটে এ জুটি এখন পর্যন্ত করেছে ১৯৫ রান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে টস জিতে চেন্নাইয়ে ৪২ বছরের রীতি ভেঙে সবাইকে চমকে দিয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক শান্ত। অথচ চেন্নাইয়ে টেস্ট মানেই ‘টস জিতে আগে ব্যাটিং করো’ ব্যাপারে পরিণত হয়। এর আগে কোনো অধিনায়ক চেন্নাই টেস্টে টস জিতে প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর ‘সাহস’ দেখিয়েছিলেন ১৯৮২ সালে। ওইবার এই কাজটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কিথ ফ্লেচার। সুনীল গাভাস্কার-কপিল দেব-রবি শাস্ত্রীদের ভারতের বিপক্ষে সেই টেস্ট ড্র করেছিল ইংলিশরা।
ভেন্যুটিতে দীর্ঘ ৯০ বছরের টেস্ট ইতিহাসে টস জিতে বোলিং নেয়ার প্রথম ঘটনাও ছিল সেটি। নাজমুলের আজকের সিদ্ধান্তটি দ্বিতীয়। অবশ্য ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও জানিয়েছেন, আজ তিনিও টস জিতলে ফিল্ডিং নিতেন।
অধিনায়কের এমন সাহসী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি পেসাররা বল হাতে সঠিক প্রমাণ করেন। ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম সেশনেই দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। ১০ ওভারে ৩৪ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বসে তারা। সবগুলো উইকেটই শিকার করেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ।
নতুন বলে শুরু থেকেই হাসান ও তাসকিনকে খেলতে অস্বস্তিতে ভুগেন ভারতের দুই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে হাসানের বলে রোহিতের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। আম্পায়ার্স কলের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যান ভারত অধিনায়ক। তবে নিজের পরের ওভারেই রোহিতকে সাজঘরে ফেরান হাসান। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলটি স্টাম্পের ভেতরে রেখেছিলেন হাসান। রোহিত একটু বেশি সাবধানে ডিফেন্স করতে গিয়ে পুরো ব্যাটে পাননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল জমা পড়ে প্রথম স্লিপে শান্তর হাতে। দারুণ দক্ষতায় লো ক্যাচ তুলে নেন শান্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে ৬ রান করেছেন রোহিত।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি শুভমান গিল। অষ্টম ওভারে হাসানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন গিল। ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারতের ভরসা হয়ে চারে নামেন বিরাট কোহলি। তবে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকেও দাঁড়াতেই দেননি হাসান। ১০ম ওভারে হাসানের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটনকে ক্যাচ দেন কোহলি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ বলে ৬ রান।
চতুর্থ উইকেটে রিশভ পন্ত ও জয়সোয়াল ৬২ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু দলীয় ৯৬ রানে ৫২ বলে ৩৯ রান করা পন্তকে উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান হাসান মাহমুদ। পঞ্চম উইকেটে জয়সোয়াল লোকেশ রাহুলকে নিয়ে গড়েন আরও ৪৮ রানের জুটি। তবে দলীয় ১৪৪ রানে ১১৮ বলে ৫৬ রান করা জয়সোয়ালকে তুলে নেন নাহিদ রানা। পরের ওভারে একই রানে লোকেশ রাহুলকে তুলে নেন মেহেদি মিরাজ। তিনি করেছিলেন ৫২ বলে ১৬ রান। এরপর ৭ম উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান অশ্বিন-জাদেজা জুটি।