০২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেজার বিস্ফোরণ, হিজবুল্লাহর ওপর ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস কী!

লেবাননে একযোগে পেজার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাটি হিজবুল্লাহর ওপর আরও ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত পেজারগুলোতে বিস্ফোরক দ্রব্য ঢোকানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি এর মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীটির মধ্যে শত্রুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও মত বিশ্লেষকদের। আর পেজার বিস্ফোরণের পেছনে তেল আবিবকেই দায়ী করায় ইসরাইল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনা চরম পৌঁছেছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

ইসরাইলি গোয়েন্দাদের চেয়ে ব্যবহৃত ফোন বেশি বিপজ্জনক! এমন শঙ্কায় হ্যাকিং-ট্র্যাকিং এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষায়, চলতি বছরের শুরুতে বৈদ্যুতিক ডিভাইস পেজারের ওপর ভরসা রাখে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতো সতর্কতার পরও হিজবুল্লাহ সদস্যদের হাতে থাকা বেশিরভাগ পেজার মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একযোগে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নজিরবিহীন এ ঘটনায় ইসরাইলকেই দুষছে হিজবুল্লাহ। আর এই হামলাটি হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি এর মধ্য দিয় হিজবুল্লাহ সংগঠনের মধ্যে শত্রুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও মত তাদের।

এই যখন অবস্থা তখন বুধবারও (১৮ সেপ্টেম্বর) লেবাননে হিজবুল্লাহ’র ব্যবহৃত ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা উত্তেজনার পারদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ইসরাইলের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. হারেল মেনাশ্রী বলেন, ‘অবশ্যই, যে সংগঠনটি এই অপারেশনটি করেছে তাদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। খুব ভাল বুদ্ধিমত্তা এবং অপারেশন সক্ষমতা না থাকলে এমনটা কারা যায় না। এই ঘটনাটি হিজবুল্লাহ সংগঠনের মধ্যে গভীর অনুপ্রবেশের আভাসও বটে।’

এখানেই শেষ নয়, পেজার বিস্ফোরণের ঘটনাটি ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ওপর আরও ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস কিংবা সূচনা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সতর্ক হয়ে যাওয়ার কারণে একই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু একইভাবে ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টা চালানো হতে পারে বলেও আশঙ্কা দেশটির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।

ড. হারেল মেনাশ্রী বলেন, ‘এখানে একমাত্র সমস্যা হলো এটি শুধু একবারের অপারেশন প্ল্যান। এই অপারেশন দ্বিতীয়বার করা যায় না। কারণ ততক্ষণে শত্রুদের কাছে এটি সম্পর্কে অনেক ধারণা তৈরি হয়ে যায় এবং সতর্ক হয়ে যায়। তাই এটির পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই। তবে তারা একইভাবে ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে।’

অকল্পনীয় হামলার শিকারের পর, নিজেদের গোপনীয়তা নিয়ে গর্ব করা হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা দিকটি ওঠে এসেছে বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। এ অবস্থায় যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানে বিদেশ থেকে আনা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ওপর হিজবুল্লাহ’র ভরসা যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরুর জেরে তখন থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় হিজবুল্লাহ। গেলো আগস্টে ইসরাইলি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকার। কিন্তু তখন সেই ঘটনার জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করে ইরান সমর্থিত লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এর মধ্যেই পেজার বিস্ফোরণে নতুন মোড় নিয়েছে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ চলমান সংঘাত-উত্তেজনা। এর মধ্য দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আঁচ করছেন অনেকে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

পেজার বিস্ফোরণ, হিজবুল্লাহর ওপর ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস কী!

আপডেট : ১০:৫৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লেবাননে একযোগে পেজার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাটি হিজবুল্লাহর ওপর আরও ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত পেজারগুলোতে বিস্ফোরক দ্রব্য ঢোকানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি এর মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীটির মধ্যে শত্রুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও মত বিশ্লেষকদের। আর পেজার বিস্ফোরণের পেছনে তেল আবিবকেই দায়ী করায় ইসরাইল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনা চরম পৌঁছেছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

ইসরাইলি গোয়েন্দাদের চেয়ে ব্যবহৃত ফোন বেশি বিপজ্জনক! এমন শঙ্কায় হ্যাকিং-ট্র্যাকিং এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষায়, চলতি বছরের শুরুতে বৈদ্যুতিক ডিভাইস পেজারের ওপর ভরসা রাখে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতো সতর্কতার পরও হিজবুল্লাহ সদস্যদের হাতে থাকা বেশিরভাগ পেজার মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একযোগে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নজিরবিহীন এ ঘটনায় ইসরাইলকেই দুষছে হিজবুল্লাহ। আর এই হামলাটি হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি এর মধ্য দিয় হিজবুল্লাহ সংগঠনের মধ্যে শত্রুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও মত তাদের।

এই যখন অবস্থা তখন বুধবারও (১৮ সেপ্টেম্বর) লেবাননে হিজবুল্লাহ’র ব্যবহৃত ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা উত্তেজনার পারদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ইসরাইলের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. হারেল মেনাশ্রী বলেন, ‘অবশ্যই, যে সংগঠনটি এই অপারেশনটি করেছে তাদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। খুব ভাল বুদ্ধিমত্তা এবং অপারেশন সক্ষমতা না থাকলে এমনটা কারা যায় না। এই ঘটনাটি হিজবুল্লাহ সংগঠনের মধ্যে গভীর অনুপ্রবেশের আভাসও বটে।’

এখানেই শেষ নয়, পেজার বিস্ফোরণের ঘটনাটি ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ওপর আরও ভয়াবহ আক্রমণের পূর্বাভাস কিংবা সূচনা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সতর্ক হয়ে যাওয়ার কারণে একই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু একইভাবে ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টা চালানো হতে পারে বলেও আশঙ্কা দেশটির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।

ড. হারেল মেনাশ্রী বলেন, ‘এখানে একমাত্র সমস্যা হলো এটি শুধু একবারের অপারেশন প্ল্যান। এই অপারেশন দ্বিতীয়বার করা যায় না। কারণ ততক্ষণে শত্রুদের কাছে এটি সম্পর্কে অনেক ধারণা তৈরি হয়ে যায় এবং সতর্ক হয়ে যায়। তাই এটির পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই। তবে তারা একইভাবে ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে।’

অকল্পনীয় হামলার শিকারের পর, নিজেদের গোপনীয়তা নিয়ে গর্ব করা হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা দিকটি ওঠে এসেছে বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। এ অবস্থায় যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানে বিদেশ থেকে আনা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ওপর হিজবুল্লাহ’র ভরসা যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরুর জেরে তখন থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় হিজবুল্লাহ। গেলো আগস্টে ইসরাইলি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকার। কিন্তু তখন সেই ঘটনার জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করে ইরান সমর্থিত লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এর মধ্যেই পেজার বিস্ফোরণে নতুন মোড় নিয়েছে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ চলমান সংঘাত-উত্তেজনা। এর মধ্য দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আঁচ করছেন অনেকে।