০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে ‘ঐতিহাসিক’ প্রস্তাব পাস, ভারতসহ ভোট দেয়নি ৪৩ দেশ

অবৈধভাবে দখল করা ফিলিস্তিনের সব ভূখণ্ড ছাড়তে ইসরায়েলকে সময় বেঁধে দিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে গৃহীত হয়েছে। গাজা ও পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের সব অঞ্চল থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে। যুদ্ধ এবং সংঘাতের মধ্যে বিশ্বসংস্থাটির এ পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২৪টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনাসহ বিপক্ষে ভোট দেয় ১৪টি দেশ। আর ভারতসহ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল ৪৩টি দেশ। খবর আল জাজিরার।

গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ১২ মাসের মধ্যে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বেআইনি উপস্থিতি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণের জন্য এতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে এটি বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) যে পরামর্শমূলক মতামত দিয়েছে, নতুন প্রস্তাবে তাকেই সমর্থন করা হয়েছে। আইসিজে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের উপস্থিতি বেআইনি এবং অবশ্যই এর শেষ হওয়া উচিত।

যদিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলেও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে না। তবে এর সমর্থনে বিশ্ববাসী কী চায় সেই জনমত প্রকাশ করবে।

গত ৭ অক্টোবর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে ১১শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। এরপর থেকে গাজা উপত্যকায় বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্তির ঠিক আগে সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া এ প্রস্তাবের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্বনেতাদের নিউইয়র্কে জড়ো হওয়ার কয়েকদিন আগে এ পদক্ষেপ ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও সেখানে ভাষণ দেবেন।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর এই ভোটকে ফিলিস্তিনের ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামে একটি টার্নিং পয়েন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে প্রস্তাবটি মেনে চলার জন্য চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ভোটের ফলাফলকে ‘একটি লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বুধবারের গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র জাতিসংঘের পরিচালক লুই চারবোনিউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের উচিত অবিলম্বে জাতিসংঘের বেশিভাগ সদস্যরাষ্ট্রে দাবির প্রতি মনোযোগ দেয়া।

এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও জাতিসংঘে পাস হওয়া ফিলিস্তিনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থাটি ইসরায়েলকে জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবকে মেনে চলার আহ্বানও জানিয়েছে।

নতুন এই প্রস্তাবে গত জুলাই মাসে দেয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানানো হয়। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি দখলদারি ও বসতি স্থাপনাকে অবৈধ এবং তা প্রত্যাহার করার পক্ষে সে সময় মত দেন আদালত। তবে দখলদারি ও বসতি প্রত্যাহারের কথা বললেও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেননি আদালত। যদিও এবার এ কাজের জন্য ইসরায়েলকে ১২ মাসের সময় বেঁধে দিলো জাতিসংঘ।

আইসিজের মতামত মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আন্তর্জাতিক আইনে তা গুরুত্ব বহন করে। এ কারণে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দুর্বল হতে পারে। এছাড়া সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবও বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটিরও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

জাতিসংঘে ‘ঐতিহাসিক’ প্রস্তাব পাস, ভারতসহ ভোট দেয়নি ৪৩ দেশ

আপডেট : ১০:৫১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অবৈধভাবে দখল করা ফিলিস্তিনের সব ভূখণ্ড ছাড়তে ইসরায়েলকে সময় বেঁধে দিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে গৃহীত হয়েছে। গাজা ও পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের সব অঞ্চল থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে। যুদ্ধ এবং সংঘাতের মধ্যে বিশ্বসংস্থাটির এ পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২৪টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনাসহ বিপক্ষে ভোট দেয় ১৪টি দেশ। আর ভারতসহ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল ৪৩টি দেশ। খবর আল জাজিরার।

গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ১২ মাসের মধ্যে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বেআইনি উপস্থিতি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণের জন্য এতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে এটি বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) যে পরামর্শমূলক মতামত দিয়েছে, নতুন প্রস্তাবে তাকেই সমর্থন করা হয়েছে। আইসিজে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের উপস্থিতি বেআইনি এবং অবশ্যই এর শেষ হওয়া উচিত।

যদিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলেও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে না। তবে এর সমর্থনে বিশ্ববাসী কী চায় সেই জনমত প্রকাশ করবে।

গত ৭ অক্টোবর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে ১১শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। এরপর থেকে গাজা উপত্যকায় বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্তির ঠিক আগে সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া এ প্রস্তাবের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্বনেতাদের নিউইয়র্কে জড়ো হওয়ার কয়েকদিন আগে এ পদক্ষেপ ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও সেখানে ভাষণ দেবেন।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর এই ভোটকে ফিলিস্তিনের ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামে একটি টার্নিং পয়েন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে প্রস্তাবটি মেনে চলার জন্য চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ভোটের ফলাফলকে ‘একটি লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বুধবারের গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র জাতিসংঘের পরিচালক লুই চারবোনিউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের উচিত অবিলম্বে জাতিসংঘের বেশিভাগ সদস্যরাষ্ট্রে দাবির প্রতি মনোযোগ দেয়া।

এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও জাতিসংঘে পাস হওয়া ফিলিস্তিনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থাটি ইসরায়েলকে জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবকে মেনে চলার আহ্বানও জানিয়েছে।

নতুন এই প্রস্তাবে গত জুলাই মাসে দেয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানানো হয়। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি দখলদারি ও বসতি স্থাপনাকে অবৈধ এবং তা প্রত্যাহার করার পক্ষে সে সময় মত দেন আদালত। তবে দখলদারি ও বসতি প্রত্যাহারের কথা বললেও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেননি আদালত। যদিও এবার এ কাজের জন্য ইসরায়েলকে ১২ মাসের সময় বেঁধে দিলো জাতিসংঘ।

আইসিজের মতামত মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আন্তর্জাতিক আইনে তা গুরুত্ব বহন করে। এ কারণে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দুর্বল হতে পারে। এছাড়া সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবও বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটিরও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।