০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করা হবে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১০:৩৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১০ দেখেছেন

চিরসবুজ বাংলার অকৃত্রিম বন্ধু সোনালি আঁশ পাট। একসময় নদীমাতৃক দেশজুড়ে যেদিকে তাকানো যেত সে দিকেই ছিল সবুজ পাট খেত। এ যেন বাংলার শত বর্ষের ঐতিহ্য।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে পাট শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় ৭০ লাখ বেল কাঁচা পাট। আর গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য পাঁচ লাখসহ মোট ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট দরকার। বর্তমানে এ চাহিদার নিরিখে দেশে ১০ লাখ বেল পাট কম উৎপাদন হয়।

সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পাটের ব্যবহার বাড়ানো হবে এবং বন্ধ হবে পলিথিন। আর এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পাটশিল্প। সংস্কারের প্রবাহ যখন সব ক্ষেত্রে চলমান, তখন অনেকেই আশা করছেন তার ছোঁয়া লাগবে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ওপরও।

সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে বলছেন, এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে তা হবে এই সরকারের জন্য মাইলফলক।

প্লাস্টিকের বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করে পলিথিন ব্যাগ। শুধু ঢাকা শহরেই মাসে প্রায় ৪১ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ দায়ি প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর কারণে। অন্তর্বর্তী সরকারে দুই উপদেষ্টা জানান, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন ও দেশে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করা সম্ভব। এরইমধ্যে ঘোষণা এসেছে, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন ক্রেতাদের দেয়া যাবে না।

একজন সচেতন নাগরিক বলেন, ‘প্লাস্টিক দ্রব্যগুলো হাইজিন মনে করছি না। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগটা নিয়েছে সেটাকে আমি পজিটিভলি নিচ্ছি। কারণ পলিথিন পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মানুষ যেন ক্যারি করতে পারে সে ধরনের ব্যাগ যেন তারা আমাদের প্রোভাইড করে।’

অপরদিকে বিক্রেতারা জানান, অভিযান চালাতে হবে কারখানাগুলোতে। তবে বিকল্প কিছু বের না করে এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে হঠকারী, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেইন জায়গায় বন্ধ করে দিলে তো আমরা পাবো না। আর আমরা বিক্রিও করতে পারবো না। আর পলিথিন বন্ধ করার সাথে তারা বলছে যে, বিকল্প কিছু বের করবে। কিন্তু সেই বিকল্প কিছু তো বের করছে না।’

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে এই পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যান বলছে এই শহরের ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। আর এই পলিথিন ভ্যাগ ১০০ বছর পরও মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এই পণ্যটি অপচনশীল একটি কঠিন পদার্থ। এতে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিশাল হুমকিস্বরূপ।

আর এই ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাট শিল্পকে রক্ষায় পাটের বহুমুখী বাজার সৃষ্টি করতে হবে। পাটের বিস্তার, উৎপাদনে বর্তমান সরকার আন্তরিক।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশ থেকে কিছু আনতে হচ্ছে না। এখানে উৎপাদন হচ্ছে, সেটাকে সেলাই করার সুতাও এখানকার, পাটেরই সুতা। সেজন্য এটা ১০০ ভাগ দেশিও প্রোডাক্ট। সোনালি ভ্যাগ নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত এক্সপেরিমেন্টে আছি। একটা ব্যাগ দেখানোর সাথে সাথে সুইস অ্যাম্বাসেডর নিয়ে গেলো পাঁচ-ছয়টা। বললো এটা কখন পাওয়া যাবে। ওইটা যদি তৈরি থাকতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করতে পারতাম।’

বন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে সুপারশপে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করা হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘১৯টি পণ্যের মোড়কজাত করা হবে পাট দিয়ে। এটা বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই আইনটা এখন বাস্তবায়ন করার জন্য দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আদালতে গিয়ে প্রায় ৪০টির মতো মামলা করে এই আইনটা বাস্তবায়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখন যেহেতু আদালতের রায় চলে এসেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।’

স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা আয় হয় পাট থেকে। ২০২৪ এর জুন মাস পর্যন্ত এ খাত থেকে আয় হয় ২ হাজার ৬ কোটি টাকা। বৈদেশিক পাটের চাহিদার ৫৮ শতাংশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। চলতি বছরে দেশে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করা হবে

আপডেট : ১০:৩৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চিরসবুজ বাংলার অকৃত্রিম বন্ধু সোনালি আঁশ পাট। একসময় নদীমাতৃক দেশজুড়ে যেদিকে তাকানো যেত সে দিকেই ছিল সবুজ পাট খেত। এ যেন বাংলার শত বর্ষের ঐতিহ্য।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে পাট শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় ৭০ লাখ বেল কাঁচা পাট। আর গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য পাঁচ লাখসহ মোট ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট দরকার। বর্তমানে এ চাহিদার নিরিখে দেশে ১০ লাখ বেল পাট কম উৎপাদন হয়।

সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পাটের ব্যবহার বাড়ানো হবে এবং বন্ধ হবে পলিথিন। আর এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পাটশিল্প। সংস্কারের প্রবাহ যখন সব ক্ষেত্রে চলমান, তখন অনেকেই আশা করছেন তার ছোঁয়া লাগবে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ওপরও।

সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে বলছেন, এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে তা হবে এই সরকারের জন্য মাইলফলক।

প্লাস্টিকের বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করে পলিথিন ব্যাগ। শুধু ঢাকা শহরেই মাসে প্রায় ৪১ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ দায়ি প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর কারণে। অন্তর্বর্তী সরকারে দুই উপদেষ্টা জানান, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন ও দেশে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করা সম্ভব। এরইমধ্যে ঘোষণা এসেছে, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন ক্রেতাদের দেয়া যাবে না।

একজন সচেতন নাগরিক বলেন, ‘প্লাস্টিক দ্রব্যগুলো হাইজিন মনে করছি না। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগটা নিয়েছে সেটাকে আমি পজিটিভলি নিচ্ছি। কারণ পলিথিন পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মানুষ যেন ক্যারি করতে পারে সে ধরনের ব্যাগ যেন তারা আমাদের প্রোভাইড করে।’

অপরদিকে বিক্রেতারা জানান, অভিযান চালাতে হবে কারখানাগুলোতে। তবে বিকল্প কিছু বের না করে এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে হঠকারী, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেইন জায়গায় বন্ধ করে দিলে তো আমরা পাবো না। আর আমরা বিক্রিও করতে পারবো না। আর পলিথিন বন্ধ করার সাথে তারা বলছে যে, বিকল্প কিছু বের করবে। কিন্তু সেই বিকল্প কিছু তো বের করছে না।’

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে এই পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যান বলছে এই শহরের ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। আর এই পলিথিন ভ্যাগ ১০০ বছর পরও মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এই পণ্যটি অপচনশীল একটি কঠিন পদার্থ। এতে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিশাল হুমকিস্বরূপ।

আর এই ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাট শিল্পকে রক্ষায় পাটের বহুমুখী বাজার সৃষ্টি করতে হবে। পাটের বিস্তার, উৎপাদনে বর্তমান সরকার আন্তরিক।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশ থেকে কিছু আনতে হচ্ছে না। এখানে উৎপাদন হচ্ছে, সেটাকে সেলাই করার সুতাও এখানকার, পাটেরই সুতা। সেজন্য এটা ১০০ ভাগ দেশিও প্রোডাক্ট। সোনালি ভ্যাগ নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত এক্সপেরিমেন্টে আছি। একটা ব্যাগ দেখানোর সাথে সাথে সুইস অ্যাম্বাসেডর নিয়ে গেলো পাঁচ-ছয়টা। বললো এটা কখন পাওয়া যাবে। ওইটা যদি তৈরি থাকতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করতে পারতাম।’

বন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে সুপারশপে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করা হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘১৯টি পণ্যের মোড়কজাত করা হবে পাট দিয়ে। এটা বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই আইনটা এখন বাস্তবায়ন করার জন্য দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আদালতে গিয়ে প্রায় ৪০টির মতো মামলা করে এই আইনটা বাস্তবায়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখন যেহেতু আদালতের রায় চলে এসেছে, তাহলে এটা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।’

স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা আয় হয় পাট থেকে। ২০২৪ এর জুন মাস পর্যন্ত এ খাত থেকে আয় হয় ২ হাজার ৬ কোটি টাকা। বৈদেশিক পাটের চাহিদার ৫৮ শতাংশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। চলতি বছরে দেশে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।