বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
‘বিয়ের কার্ড’ শেয়ার করেছিলেন দীঘি, আসছে সেই সিনেমা দুর্নীতি ও অনিয়মে অভিযুক্ত বিচারপতিদের চায়ের আমন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়াতে ইসরায়েলকে সময় বেঁধে দিল যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর ভোলা উচিত নয় জাতিসংঘের সিদ্ধান্তেই ইসরায়েলের সৃষ্টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে নিহত ২৩ আত্মগোপনে থাকা শিল্পীদের উদ্দেশে ওমর সানীর বার্তা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ঢাকায় পা রেখেছেন নতুন কোচ ফিল সিমন্স বলিভিয়াকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আজ লক্ষ্মীপূজা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাতিল হচ্ছে জাতীয় ৮ দিবস ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই ড. ইউনূসের সরকারকে ক্ষমতায় বসানো’ গণহত্যায় জড়িত সাংবাদিকরাও ছাড় পাবে না: আসিফ নজরুল ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১০৮ জন ভর্তি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ আবারও দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইলেন বিএনপি নেতারা ডিমের নতুন দাম নির্ধারণ, কাল থেকে কার্যকর সরকার ব্যবসায়িক পরিস্থিতি উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা আরও একবছর চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি- বিশ্ব ব্যাংক
ব্রেকিং নিউজ :
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালনের মধ্যে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে!

অনলাইন ডেস্ক / ৩২ জন দেখেছেন
আপডেট : বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন
মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে!
৭১ নিউজ বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বিগত সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। এর কারণ পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম, পড়াশোনার প্রতি অনীহা-অসচেতনতা। অঞ্চল ভেদে এর কারণেও আছে ভিন্নতা। এছাড়া গত একবছরে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে পড়াশোনার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সরকারকে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

গত দেড় দশক আগেও দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ৫৫ শতাংশের বেশি। তবে দিন দিন কমেছে এই হার। বেড়েছে এসএসসি ও সমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও।

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই দেয়া, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, এনটিআরসিএ’এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের ব্যবধান কমানো এবং নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ; সব কারণে বিদ্যালয়ে বেড়েছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, কমেছে ঝরে পড়ার হার।

সিলেট সদর উপজেলার প্রিয়াঙ্গন কলিমুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অজয়, পুর্নিমা ও মঙ্গলী পাল। নয়া টিলা গ্রামের এই ৩ শিক্ষার্থীর বাড়িঘরে আর রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় ডিঙ্গি নৌকায় স্কুলে যাত্রা তাদের। তারা বলছে, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবারই স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বইপত্র ভিজে যায়। ভালোভাবে পড়তে পারি না। ঘর দুয়ারে পানি উঠে যায়।

বহুত ক্ষতি হয়। আমরা স্কুলে যেতে পারি না। অনেক অসুবিধা হয় বন্যার জন্য নৌকা পাই না বলেও জানান এক শিক্ষার্থী।

আরো এক শিক্ষার্থী জানান, আগের বছরও বন্যার কারণে আমরা পরীক্ষা দিতে পারি নাই।

তাদের মতো সিলেট অঞ্চলের ৪ জেলায়, বিশেষ করে হাওর অধ্যূষিত অঞ্চল- সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও চা বাগান বেষ্টিত জেলা মৌলভীবাজারের শিক্ষার্থীদের বেলায়ও যুক্ত হয় একই সমস্যা। এছাড়া আর্থিক অক্ষমতায় সবোর্চ্চ ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে সিলেট বিভাগেই। প্রযুক্তির অপব্যবহার, সচেতনতার অভাব তো আছেই।

অভিবাবকরা বলেন, ‘মেঘ, বৃষ্টি বন্যার কারণে যেতে পারে না স্কুলে।’

তথ্য বলছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ক্ষেত্রে স্কুলে নিট গমন হার, সাইকেল পূর্ণতার হার এবং ঝড়ে পড়ার হার সিলেটে তুলনামুলক ভাবে দেশে গড় হারের চেয়ে বেশি।

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কান্তি দেব বলেন, ‘সুনামগঞ্জ অঞ্চলে যে সময় ছুটি দরকার রাজশাহী অঞ্চলে কিন্তু সে সময় দরকার না। কিন্তু আমাদের যে কেন্দ্রীয় ছুটির ব্যবস্থা সেটা সারা দেশে একটাই হয়। একই সাথে পরীক্ষার রুটিন হয়। মূলত এই কারণেই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে গত বছর ময়মনসিংহ বিভাগে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ২৩.৫ ভাগ হলেও এবছর কিছুটা কমে ২০ ভাগ। কিন্তু এ বিভাগে পড়াশোনার ব্যাপারে অনীহান কিংবা অসচেতনার কারণে দেশের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ৫৮.৬ শতাংশ ঝরে। এ ছাড়া বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম তো আছেই।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে স্কুলের পাঠচুকিয়ে কাজে লেগে যাওয়া ১০ বছরের তুহিনের গল্পটা কত করুণ! ভবঘুরে বাবার সংসারের হাল তার মায়ের হাতে। তাই তো বড় মিস্ত্রী হয়ে টেনেটুনে চলা মায়ের সংসারে হাল ধরাই এখন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। দারিদ্রতা, অসচ্ছলতাসহ নানা কারণে ময়মননিংহ অঞ্চলে এরকম অসংখ্য শিশু-কিশোর পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেয় শ্রমে, সমাধি ঘটে দুরন্ত শৈশব আর স্কুলের রঙিন দিনগুলোর।

শিশু শ্রমিক তুহিন বলেন, ‘এখন আর স্কুলে যায় না। কাজ শিখি। আমি বড় মিস্ত্রি হবো।’

মাধমিক পর্যায়ের কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী একনাগারে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলেই ধরা হয়, বিয়ে হয়ে গেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে যখন খবর আসে, তখন প্রায় সবই শেষ হয়ে যায়। বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পড়াশোনা বন্ধের পাশাপাশি জীবনও পড়ে ঝুঁকিতে। গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের পরিবারের মেয়েরাই বেশীর ভাগ শিকার হয় বাল্যবিয়ের। স্কুলের রঙিন দিনের বদলে সংসারের কঠিন বোঝা কাঁধে নিয়ে অনেকে অকালে ঝরে পড়ে জীবন থেকেও। বাল্যবিয়ের কারণে ঝরে পড়াদের জন্য মন কাঁদে সহপাঠীদেরও। বিবিএসের জরিপ মতে, ময়মনসিংহ বিভাগে বাল্যবিয়ের হার ৪০.০৬ ভাগ।

ময়মনসিংহ বিভাগেের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘বান্ধবীদের ৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে । আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের বাবা-মা আর লেখাপড়া করাই নাই। কিন্তু তাদের ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করার।’

এডুকেশন ওয়াচের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতায় ভোগা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাধ্যমিকেই ঝরে পড়ছে ৫৯.৮ শতাংশ। এছাড়া পড়াশোনায় অনিহা, শিশুশ্রম ও পাবিারিক কাজে যুক্ত হওয়ায় অনেকে বন্ধ করেন পড়াশোনা। ঝড়ে পড়ার এই কারণের তালিকায় আছে ভাষাগত সমস্যা ও স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা। গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য পরিবারের খরচ বেড়েছে, ২৫ শতাংশ আর মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ। শিক্ষাবিদরা বলছেন, উপবৃত্তিতে টাকার পরিমাণ বাড়ানোসহ স্কুল ফিডিং কর্মসূচি নিয়মত করতে হবে।

শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠদান এবং তাদেরকে স্কুলমুখি করাতে হবে।চলমান নানা বিরাজমান যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের অন্য সংবাদ