১১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতি পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সমর্থন চান শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

স্বচ্ছ রাজনীতি আর জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। আজ (সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কলম্বোয় দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে মার্কসবাদী এই নেতা বলেন, অর্থনীতি পুনর্গঠনে দেশের এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়ে আশাবাদী দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আসবে স্বস্তি। কমবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

দীর্ঘ দুই বছর পর গণতান্ত্রিক পন্থায় শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রনেতা হিসেবে শপথ নিলেন দেশটির বামপন্থি নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।

সোমবার রাজধানী কলোম্বোর প্রেসিডেন্ট ভবনে দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে কৃষক পরিবারের ছেলে বনে গেলেন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকার পরিচালনা করতে যাচ্ছে বামপন্থী কোন সরকার।

শপথ গ্রহণ শেষে তিনি বলেন, ‘সামনে চ্যালেঞ্জ থাকলেও অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় এখন থেকে দেশে স্বচ্ছ রাজনীতির চর্চা হবে।’

প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বলেন, ‘এখন আমাদের হাতে চ্যালেঞ্জিং দেশ এসেছে। তাই রাজনীতি হতে হবে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় স্বচ্ছ। এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে হবে যেটা মানুষের সমর্থন পায়। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের রাজনীতিবিদদের নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। তবে সংকট মোকাবিলায় সরকারি বেসরকারি সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব অনেক।’

বংশানুক্রমে রাজনীতিতে জড়িত না হলেও শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিশানায়েকে পেয়েছেন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই প্রথম ব্ক্তব্যে দিশানায়েকে আরও বলেন, রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এমন সরকার সবসময় প্রয়োজন, যে সরকার জনগণের কাছ থেকে ইশতেহার নেয়। একটা দেশকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করতে এর বিকল্প নেই। জনগণের ইশতেহার বা চাওয়া-পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংসদের ওপর প্রভাব পড়ে। জনগণের প্রয়োজনই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটাই এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমার মূল পয়েন্ট। আমি মনে করি, সাধারণ নির্বাচন দ্রুতই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’

পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট জেভিপি এবং ন্যাশনাল পিপসল পাওয়ার এনপিপির ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা আরও বলেন, দেশের উৎপাদন, কৃষি আর প্রযুক্তিখাত উন্নয়নে জোর দেয়া হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে কাজ করবে তার সরকার। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর কমানো হবে ব্যয় সংকোচন নীতির চাপ।

এদিকে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ আর জাতীয় ঋণকেই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সাধারণ মানুষ বলছে, সরকারের কাছে প্রত্যাশা, স্থিতিশীল হোক নিত্যপণ্যের বাজার। দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন হোক, চাপ কমুক সাধারণ মানুষের ওপর।

নির্বাচনে দিশানায়েকের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জনগণের ওপর করের চাপ কমানো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণ, ঋণ নিশ্চিত আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো।

শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় ভোট গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। এতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান দিশানায়েকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিদায় নেন রনিল বিক্রমাসিংহে ও সাজিথ প্রেমাদাসা। দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধই নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতি পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সমর্থন চান শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

আপডেট : ০৬:০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বচ্ছ রাজনীতি আর জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। আজ (সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কলম্বোয় দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে মার্কসবাদী এই নেতা বলেন, অর্থনীতি পুনর্গঠনে দেশের এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়ে আশাবাদী দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আসবে স্বস্তি। কমবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

দীর্ঘ দুই বছর পর গণতান্ত্রিক পন্থায় শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রনেতা হিসেবে শপথ নিলেন দেশটির বামপন্থি নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।

সোমবার রাজধানী কলোম্বোর প্রেসিডেন্ট ভবনে দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে কৃষক পরিবারের ছেলে বনে গেলেন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকার পরিচালনা করতে যাচ্ছে বামপন্থী কোন সরকার।

শপথ গ্রহণ শেষে তিনি বলেন, ‘সামনে চ্যালেঞ্জ থাকলেও অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় এখন থেকে দেশে স্বচ্ছ রাজনীতির চর্চা হবে।’

প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বলেন, ‘এখন আমাদের হাতে চ্যালেঞ্জিং দেশ এসেছে। তাই রাজনীতি হতে হবে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় স্বচ্ছ। এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে হবে যেটা মানুষের সমর্থন পায়। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের রাজনীতিবিদদের নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। তবে সংকট মোকাবিলায় সরকারি বেসরকারি সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব অনেক।’

বংশানুক্রমে রাজনীতিতে জড়িত না হলেও শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিশানায়েকে পেয়েছেন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই প্রথম ব্ক্তব্যে দিশানায়েকে আরও বলেন, রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এমন সরকার সবসময় প্রয়োজন, যে সরকার জনগণের কাছ থেকে ইশতেহার নেয়। একটা দেশকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করতে এর বিকল্প নেই। জনগণের ইশতেহার বা চাওয়া-পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংসদের ওপর প্রভাব পড়ে। জনগণের প্রয়োজনই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটাই এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমার মূল পয়েন্ট। আমি মনে করি, সাধারণ নির্বাচন দ্রুতই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’

পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট জেভিপি এবং ন্যাশনাল পিপসল পাওয়ার এনপিপির ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা আরও বলেন, দেশের উৎপাদন, কৃষি আর প্রযুক্তিখাত উন্নয়নে জোর দেয়া হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে কাজ করবে তার সরকার। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর কমানো হবে ব্যয় সংকোচন নীতির চাপ।

এদিকে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ আর জাতীয় ঋণকেই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সাধারণ মানুষ বলছে, সরকারের কাছে প্রত্যাশা, স্থিতিশীল হোক নিত্যপণ্যের বাজার। দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন হোক, চাপ কমুক সাধারণ মানুষের ওপর।

নির্বাচনে দিশানায়েকের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জনগণের ওপর করের চাপ কমানো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণ, ঋণ নিশ্চিত আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো।

শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় ভোট গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। এতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান দিশানায়েকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিদায় নেন রনিল বিক্রমাসিংহে ও সাজিথ প্রেমাদাসা। দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধই নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।