শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত জাতিসংঘের ‘বাংলাদেশকে দুর্নীতির রোল মডেল করেছেন শেখ হাসিনা’ গাজায় যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ আমিরাতে দুর্গাপূজার আয়োজনে বাঙালি হিন্দু কমিউনিটি শান্তিতে নোবেল পেল জাপানি প্রতিষ্ঠান নিহোন হিদাঙ্কিও প্রেম করছেন মধুমিতা, বিয়ে কবে? শেখ হাসিনাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়েছে ভারত স্বার্থান্বেষীদের ভূমিকা নিয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান রিজভীর অতীতের গৌরব ফেরাতে সক্রিয় ছাত্রদল ডিমের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটই মূল কারণ : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা দীপ্ত টিভির সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক ৫ রাষ্ট্র সংস্কারের ধারা ও পদ্ধতির সূচনা করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকেই শরৎ শেষ না হতেই উত্তরে শীতের আনাগোনা দেশের বিভিন্ন মণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত পাকিস্তানে কয়লা খনিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২০ ফ্লোরিডায় হারিকেন মিলটনের আঘাতে ১৬ জনের মৃত্যু বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত গাজায় ইসরায়েলি মেজরসহ ৩ সৈন্য নিহত টেস্ট ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস গড়ে হারল পাকিস্তান বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য

অনলাইন ডেস্ক / ২৮ জন দেখেছেন
আপডেট : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য
৭১ নিউজ বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই বিপ্লবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে যখন বাধ্য করা হয় তখন আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পরে। এরপরই পাল্টে যেতে থাকে আন্দোলনের মোড়। একের পর এক দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় আন্দোলন, বিক্ষোভ। অন্যান্য যেকোনো আন্দোলনের চেয়ে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষার্থী পরিচয়েই তারা এবার আন্দোলনে নেমেছে।

মূল সড়ক থেকে গলি, ছিল পদে পদে বাধা, সাথে গ্রেপ্তারের ভয়, ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলার আতঙ্ক। তবুও পিছু হটেনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়কে গুলির মাঝে বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন তারা। কারফিউ উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছে আন্দোলন, পাশেই ছিল পরিবার, শিক্ষক আর শিক্ষার্থী বন্ধুবান্ধবের পূর্ণ সমর্থন।

ইউল্যাবের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রথম নিয়ে গিয়েছিল শাহবাগ থানায়। সেখানে আমাদের রাখেনি। এরপর নিউমার্কেট থানায় নিয়ে যায়, সেখানেও রাখেনি। এরপর আমাদের ডিবিতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ব্যবহার অনেক খারাপ ছিল।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার জীবনে আমি কখনও দেখিনি যে গুলি খেয়ে স্পটে মারা গেছে। কিন্তু এই প্রথম আমার চোখের সামনে এভাবে মারা গেছে। তার লাশটা যখন আমি রিক্সায় উঠাই, তখন আমার জামা-কাপড়, আইডি কার্ডে তার রক্ত লেগেছিল। তার পরিবার থেকে পরে আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং বলে আমার জামা কাপড় নিয়ে যেতে। তখন তো আমার জামা-কাপড় ধুয়ে ফেলেছিলাম। পরে আমার কার্ডের সাথে রক্ত লেগে থাকে, সেটা তারা রেখে দেয়।’

অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তারাও শিক্ষার্থী আর আমরাও শিক্ষার্থী। যখন দেখি যে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমার অনেক বন্ধু মার খাচ্ছে, এটা দেখার পর আমি নিজে ঘরে থাকবো এটা তো কখনও হয় না।’

১৪ জুলাই কোটা সংস্কার আদোলনকে ঘিরে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ নির্বিচারে হামলা চালায়। পরদিন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরও।

১৭ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এতে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পরে। এরপরই পাল্টে যেতে থাকে আন্দোলনের মোড়। একের পর এক দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় আন্দোলন, বিক্ষোভ । রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নামতে থাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এরপরের ঘটনা ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালায় পুলিশ। রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বসুন্ধরার এক নম্বর গেট, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।

দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়, তবে এবার জুলাই বিপ্লবে এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন তারা। কিন্তু কেনই বা তারা যুক্ত হলেন? জানা যায় তাদের মুখ থেকেই।

ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আক্রান্ত হয়, হলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সেখানে পুলিশ দিয়ে ব্যাপকভাবে নিপীড়ন, হামলা চালানো হয়। আমাদের ভাইদের প্রায় মেরে ফেলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন আসলে আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাপোর্ট দেয়া এবং আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে আমাদের রাস্তায় নেমে আসা।’

অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি কথনও সরকারি চাকরির পক্ষে নই বা সরকারি চাকরি করবো না। তারপরও আমি আন্দোলনে আসছি, আন্দোলন করেছি, শুধু কারণ যে, গুলিটা যেটা আমার ভাইয়ের বকে লেগেছে বা আমার বোনের গায়ে যে লাঠির আঘাতটা লেগেছে সেটা আমার বোন হতে পারতো, আমার ভাই হতে পারতো।’

কোটা আন্দোলনের একপর্যায়ে কমপ্লিট শাটডাউনে যায় বাংলাদেশে, ছিল না ইন্টারনেট সুবিধা। তবুও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন তারা। সে সময় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে আন্দোলনকে সমন্বয় করেছে সে গল্প জানা যায় এক সমন্বয়কের কাছ থেকেই।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি বলেন, ‘সে সময়ে আমরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছিল। এবং সেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন ছিল। তো সেখানে আমরা একটা ডিভিশন করি যে আমরা সেক্টরে ভাগ হয়ে আন্দোলন করবো। এরপর থেকে তো লাগাতার কারফিউ ছিল, সেই কারফিউ আমরা ব্রেক করি, আন্দোলন চালিয়ে যাই। এখানে কিন্তু তখন আর কোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল না। কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আমাদের শুধু একটা মিটিং হতো, সেখানে আমরা শুধু জানিয়ে দিতাম যে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। তারা শুধু বলতো হ্যাঁ, এভাবে করলে বেটা হয়।’

২৪ জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘এখানে কিন্তু শিক্ষকরা তাদের নিয়মিত সাহায্য করেছে। তাদের খোঁজখবর নিয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, আমার জানামতে শিক্ষকদের মধ্যে উনি প্রথম ওপেনলি বলেন, এই সরকারের ইমিডিয়েটলি ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। এটা তো সাংঘাতিক একটা সাপোর্ট। আর আমাদের শিক্ষার্থীরা পুলিশের গুলি, টিয়ারগ্যাস খাওয়ার পরও দমে যায়নি। তারা বলেছে তাও আসবো আমরা।’

জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ গেছে ৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর। সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তারা মাঠে নেমেছেন শিক্ষার্থী পরিচয়ে। তবে বিপ্লব শেষে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের সংখ্যার কোটায় বেসরকারি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটা খুবই নগণ্য।

কেন্দ্রীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মিশু আলী সুহাস বলেন, ‘যত যৌক্তিক দাবি আদায় হয়, তা কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণকেন্দ্র থেকেই শুরু হয়। এটার জন্য তাদের অবশ্যই ক্রেডিট দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একটা পর্যায়ে সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। সব কাজ ক্যান্সেল করে তারা রাজপথে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে তাদের মেরুদণ্ড বলতে হবে।’

বেশ কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভ্যাটবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন সবশেষ এই সরকার পতনের আন্দোলনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি মস্তিষ্ক হয়ে থাকে তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন এই আন্দোলনের মেরুদণ্ড। এবং শিক্ষার্থীরা বলছে ভবিষ্যতে যেকোনো অন্যায় অবিচার যদি হয়ে থাকে তাহলে আবারও রাজপথে নামতে প্রস্তুত তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের অন্য সংবাদ