০৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে

দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে শিশুদের আক্রান্তের হারও। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু, যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে। এদের বেশিরভাগই উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা নিম্নআয়ের পরিবারের। তাই সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মশা নিধনের কার্যকর পদক্ষেপের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শেহজাদের ডেঙ্গুজ্বর কতটা ভুগিয়েছে তাকে তা নিজ মুখে বর্ণনা দিয়েছে। শেহজাদ বলেন, ‘প্রথমে আমার জ্বর আসছিল। তারপর কিছু খেলেই বমি হতো। তারপর শরীর দুর্বল হলে হাসপাতালে ভর্তি করে আমাকে। সেখানে আমার শরীরে র‌্যাশ উঠেছিল। তারপর সেখানে আর রাখেনি। এখন অন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আমাকে।’

রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করা শেহজাদ কয়েকদিন জ্বর নিয়ে বাসায় ভোগে, এরপর একাধিক হাসপাতাল ঘুরে এখন চিকিৎসাধীন মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে। সবসময় আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকা সন্তানকে ডেঙ্গুতে কাবু হতে দেখে চিন্তিত তার মা।

শেহজাদের মা বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি, ওখানে যখন ওর ডায়রিয়া, বমি হচ্ছে সাথে র‌্যাশ উঠেছে তখন বলেছে তারা রাখতে পারবে না। বাচ্চার অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় তারা আমাকে এই ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলে।’

শেহজাদের মত আরও শিশু রয়েছে এই হাসপাতালে, যাদের মধ্যে অনেকেই জানে না ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তারা। এদের কারও হাতে আবার কারও পায়ে ক্যানুলা লাগিয়ে চলছে চিকিৎসা। পরিবারগুলো বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বমি, ডায়রিয়া এমনকি কোনো কোনো সময় শ্বাসকষ্টেও ভুগছে শিশুরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর মা বলেন, ‘পাতলা পায়খানা, বমি শুরু হয়েছে তখনই এখানে নিয়ে এসেছি। তারা আমাদের বলছে, ভর্তি রাখার জন্য। এর আগে আমরা কলেরাতে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে এখানে পাঠিয়েছে।’

ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পাশাপাশি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালসহ রাজধানীর অনেক হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর সারাদেশে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত তিন হাজার ৩৩৯ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে এই সংখ্যা এক হাজার ৩৪০ জন।

এদিকে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। যাদের মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি।

একজন রোগী বলেন, ‘টেস্ট করার পর বলছে যে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। প্লাটিলেট ছিল ২১ হাজার। আগে যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, সেখানে আমাকে রাখবে না সেজন্য আমাকে এখানে ট্রান্সফার করে দিয়েছে।’

শুধু ডেঙ্গু রোগই নয়, শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেকোনো রোগের চিকিৎসায় কালক্ষেপণ ঝুঁকিপূর্ণ মন্তব্য করে চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু নিরাময়ের জন্য সবার আগে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা।

ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘শিশুদের ইমিউনিটি একটু দুর্বল থাকে। ফলে শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকির হার অনেক বেশি। সেজন্য শিশুদের জ্বর হলে এই সময়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের চিকিৎসা করতে হবে। হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত।’

চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে এডিস মশা নিধনের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।

শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে

আপডেট : ০১:০৮:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে শিশুদের আক্রান্তের হারও। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু, যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে। এদের বেশিরভাগই উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা নিম্নআয়ের পরিবারের। তাই সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মশা নিধনের কার্যকর পদক্ষেপের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শেহজাদের ডেঙ্গুজ্বর কতটা ভুগিয়েছে তাকে তা নিজ মুখে বর্ণনা দিয়েছে। শেহজাদ বলেন, ‘প্রথমে আমার জ্বর আসছিল। তারপর কিছু খেলেই বমি হতো। তারপর শরীর দুর্বল হলে হাসপাতালে ভর্তি করে আমাকে। সেখানে আমার শরীরে র‌্যাশ উঠেছিল। তারপর সেখানে আর রাখেনি। এখন অন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আমাকে।’

রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করা শেহজাদ কয়েকদিন জ্বর নিয়ে বাসায় ভোগে, এরপর একাধিক হাসপাতাল ঘুরে এখন চিকিৎসাধীন মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে। সবসময় আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকা সন্তানকে ডেঙ্গুতে কাবু হতে দেখে চিন্তিত তার মা।

শেহজাদের মা বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি, ওখানে যখন ওর ডায়রিয়া, বমি হচ্ছে সাথে র‌্যাশ উঠেছে তখন বলেছে তারা রাখতে পারবে না। বাচ্চার অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় তারা আমাকে এই ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলে।’

শেহজাদের মত আরও শিশু রয়েছে এই হাসপাতালে, যাদের মধ্যে অনেকেই জানে না ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তারা। এদের কারও হাতে আবার কারও পায়ে ক্যানুলা লাগিয়ে চলছে চিকিৎসা। পরিবারগুলো বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বমি, ডায়রিয়া এমনকি কোনো কোনো সময় শ্বাসকষ্টেও ভুগছে শিশুরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর মা বলেন, ‘পাতলা পায়খানা, বমি শুরু হয়েছে তখনই এখানে নিয়ে এসেছি। তারা আমাদের বলছে, ভর্তি রাখার জন্য। এর আগে আমরা কলেরাতে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে এখানে পাঠিয়েছে।’

ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পাশাপাশি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালসহ রাজধানীর অনেক হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর সারাদেশে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত তিন হাজার ৩৩৯ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে এই সংখ্যা এক হাজার ৩৪০ জন।

এদিকে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। যাদের মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি।

একজন রোগী বলেন, ‘টেস্ট করার পর বলছে যে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। প্লাটিলেট ছিল ২১ হাজার। আগে যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, সেখানে আমাকে রাখবে না সেজন্য আমাকে এখানে ট্রান্সফার করে দিয়েছে।’

শুধু ডেঙ্গু রোগই নয়, শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেকোনো রোগের চিকিৎসায় কালক্ষেপণ ঝুঁকিপূর্ণ মন্তব্য করে চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু নিরাময়ের জন্য সবার আগে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা।

ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘শিশুদের ইমিউনিটি একটু দুর্বল থাকে। ফলে শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকির হার অনেক বেশি। সেজন্য শিশুদের জ্বর হলে এই সময়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের চিকিৎসা করতে হবে। হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত।’

চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে এডিস মশা নিধনের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।