আওয়ামী লীগকে ছাড়া প্রকৃত সংস্কার এবং নির্বাচন অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। বুধবার রয়টার্স এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।
জয় রয়টার্সকে জানান, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট।
গত আগস্টে ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানান জেনারেল ওয়াকার। আর এ কারণেই শেখ হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে যেতে হয়। জেনারেল ওয়াকার সম্প্রতি রয়টার্সকে বলেছেন, আগামী ১ বা দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা উচিত।
গত মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও উপদেষ্টা জয় রয়টার্সকে বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি যে অন্তত আমরা এখন নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে তার একটি ধারণা পাচ্ছি। অবশ্য আমরা আগেও এমন পরিস্থিতি দেখেছি যেখানে অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার ধারণ করে।’
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থানগুলোর কথা তুলে ধরেন জয়। এরমধ্যে সবশেষ সামরিক অভ্যুত্থানটি হয় ২০০৭ সালে। সে সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় ২ বছর বাংলাদেশ শাসন করে। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন এবং প্রায় ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকে পুলিশের মনোবল এখনও ফেরেনি। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেনারেল ওয়াকার জানিয়েছেন, তিনি প্রত্যেক সপ্তাহেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করছেন এবং সেনাবাহিনীও তার (ড. ইউনূস) সঙ্গেই আছে।
বাংলাদেশের দুইটি প্রধান দল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি, উভয়ই গত আগস্টে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারকে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অনির্বাচিত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির ক্ষমতায় আছে। নির্বাচনের আগে তারা বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এটি কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে এ সংক্রান্ত কোনো সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়নি।
গত বুধবার ড. ইউনূসের কার্যালয় জানিয়েছে, সংস্কার বিষয়ে গঠন করা ৬টি কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘সংস্কার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো এবং ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি।
ওয়াশিংটনে বাস করা জয় জানান, ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশটির আগামীর পথ চলা নিয়ে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন রাজনৈতিক দলকে ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংস্কার এবং নির্বাচন অসম্ভব।’
গত মাসে দেশ ছাড়ার পর থেকে শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাজারের বেশি প্রাণহানির অভিযোগে আওয়ামী লীগের বহু নেতা হয় গ্রেপ্তার হয়েছেন আর না হল আত্মগোপনে রয়েছেন।
জয় দাবি করেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, তিনি আগামী ৩ মাসের মধ্যে তার সুপারিশ জমা দেবেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা বা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।’
গত মাসে জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগও পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়।
মঙ্গলবার যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারেন– জয় জানান, ‘এটা তার ওপরই নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের নিরাপদে রাখতে চাই। ইউনূস সরকার তাদের ওপর যে নৃশংসতা চালিয়েছে তা আমি আমি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে চাই।’