ঢাকা ০৪:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে শক্ত নীতিমালার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৭৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত দেশে পাওয়ারপ্ল্যান্ট নির্মাণ হয়েছে ১২৫টি। সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ পুরোপুরি ব্যবহার না হলেও চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ গুণতে হবে আরও এক যুগ। আওয়ামী সরকারের আমলে যে লুটপাটের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে সেখান থেকে বের হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শক্ত নীতিমালা তৈরির পরামর্শ জ্বালানি সংশ্লিষ্টদের।

২০০৯ সালে দেশের ২৭টি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট, যে সেবার আওতায় ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ।

সরকার গঠনের ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ইশতেহার ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন। তিন মেয়াদের ক্ষমতায় বাস্তবায়ন হয়েছে গোঁজামিলের ইশতেহার, ১২৫টি পাওয়ারপ্ল্যান্ট নির্মাণের আড়ালে লুটপাটের অভিযোগ হাজার হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বর্তমানে ১৫২টি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে গ্রীড-ননগ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ৩১ হাজার মেগাওয়াট। অথচ প্রচণ্ড গরমেও দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়ায় ১৮ হাজার মেগাওয়াটে। ১৩ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন সক্ষমতা থাকতেও লোডশেডিং করতে হয় অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট।

২০০৮-৯ থেকে ২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত দরপত্র ছাড়াই লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এসব বিদ্যুৎ প্রকল্পের, অবকাঠামোগত ব্যয় ধরা হয়েছে ইচ্ছেমতো, দফায় দফায় হয়েছে চুক্তি নবায়ন। আবার নির্মাণ ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে ব্যাংকঋণ।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা, ১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি , ১৯-২০ অর্থবছরে ১১ হাজার কোটি, ২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪২ লাখ ও ২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট রয়েছে এ খাতে। সব মিলিয়ে গত ১৬ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ডলার ও তার সমমূল্যের টাকায় দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশ চলে গেছে দেশের বাইরেও।

হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান ২০১০ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বাতিল হয় আলোচনার পর্যায়ে থাকা অন্তত ৭৮ প্রকল্প।

তবে বড় বিনিয়োগ হয়ে থাকলে পর্যালোচনার সুযোগ রেখেছে সরকার। জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বরং লুটপাটের রাস্তা তৈরি করতে ভুল পরিকল্পায় এগিয়েছে বিগত সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিশেষ আইন-২০১০ পর্যালোচনায় গঠন হয়েছে জাতীয় কমিটি। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এ আইনের অধীনে সব প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের দরকারে সব প্রকল্প পর্যালোচনা করে স্থায়ী নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে এ খাতের দুর্নীতি বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় যে-সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চলমান রয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা পুরোপুরি না মিটলেও সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ টানতে হবে অন্তত ২০৪৭ সাল পর্যন্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে শক্ত নীতিমালার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত দেশে পাওয়ারপ্ল্যান্ট নির্মাণ হয়েছে ১২৫টি। সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ পুরোপুরি ব্যবহার না হলেও চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ গুণতে হবে আরও এক যুগ। আওয়ামী সরকারের আমলে যে লুটপাটের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে সেখান থেকে বের হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শক্ত নীতিমালা তৈরির পরামর্শ জ্বালানি সংশ্লিষ্টদের।

২০০৯ সালে দেশের ২৭টি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট, যে সেবার আওতায় ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ।

সরকার গঠনের ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ইশতেহার ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন। তিন মেয়াদের ক্ষমতায় বাস্তবায়ন হয়েছে গোঁজামিলের ইশতেহার, ১২৫টি পাওয়ারপ্ল্যান্ট নির্মাণের আড়ালে লুটপাটের অভিযোগ হাজার হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বর্তমানে ১৫২টি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে গ্রীড-ননগ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ৩১ হাজার মেগাওয়াট। অথচ প্রচণ্ড গরমেও দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়ায় ১৮ হাজার মেগাওয়াটে। ১৩ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন সক্ষমতা থাকতেও লোডশেডিং করতে হয় অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট।

২০০৮-৯ থেকে ২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত দরপত্র ছাড়াই লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এসব বিদ্যুৎ প্রকল্পের, অবকাঠামোগত ব্যয় ধরা হয়েছে ইচ্ছেমতো, দফায় দফায় হয়েছে চুক্তি নবায়ন। আবার নির্মাণ ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে ব্যাংকঋণ।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা, ১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি , ১৯-২০ অর্থবছরে ১১ হাজার কোটি, ২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪২ লাখ ও ২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট রয়েছে এ খাতে। সব মিলিয়ে গত ১৬ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ডলার ও তার সমমূল্যের টাকায় দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশ চলে গেছে দেশের বাইরেও।

হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান ২০১০ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বাতিল হয় আলোচনার পর্যায়ে থাকা অন্তত ৭৮ প্রকল্প।

তবে বড় বিনিয়োগ হয়ে থাকলে পর্যালোচনার সুযোগ রেখেছে সরকার। জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বরং লুটপাটের রাস্তা তৈরি করতে ভুল পরিকল্পায় এগিয়েছে বিগত সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিশেষ আইন-২০১০ পর্যালোচনায় গঠন হয়েছে জাতীয় কমিটি। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এ আইনের অধীনে সব প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের দরকারে সব প্রকল্প পর্যালোচনা করে স্থায়ী নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে এ খাতের দুর্নীতি বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় যে-সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চলমান রয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা পুরোপুরি না মিটলেও সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ টানতে হবে অন্তত ২০৪৭ সাল পর্যন্ত।