ঢাকা ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশ সংস্কারের ১৮ মাস পর নির্বাচনের পরিকল্পনা ড. ইউনূসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও দেশ সংস্কার করার ১৮ মাস পরে দেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ও দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশকে সহায়তায় আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া জুলাই-আগস্টের গণহত্যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তদন্ত করে বিচার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ড. ইউনুস। জাতিসংঘে বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এদিকে, আজ (শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

২০১৪ সালে ১৫২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে, আর ২০২৪ সালে ডামি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন করে দেশে বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেষমেষ আগস্টে পতন হয় শেখ হাসিনার। দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে এবার জাতিসংঘে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিইবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বৈঠকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ইউনুস। এসব শেষ করার ১৮ মাস পর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানান প্রধান উপদেষ্টা। কথা হয় দেশ পুনর্গঠনে জো বাইডেনের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়েও। এদিন বৈঠক হয় ইউরোপিয়ান কমিশনের সাথেও। বৈঠকে দু’পক্ষই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত ও দুর্নীতি দূর করতে সহায়তায় আশ্বাস দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘টাকাগুলো কীভাবে ফেরত আনা যায় সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এটা কিন্তু কষ্টসাধ্য বিষয়। এই বিষয়ে স্যার সবার সাথে কথা বলছেন। আজকেও বড় ইস্যু ছিল এটা যে ব্লিঙ্কেনের সাথের এই বৈঠক। এবং যুক্তরাষ্ট্র তার পুরো সাপোর্ট দেয়ার কথা বলেছে। বিদেশে বাংলাদেশের যে টাকা পাচার হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের টাকা, তাদের ট্যাক্সের টাকা কীভাবে দেশে ফেরত আনা যায় এবং দেশের পুনর্গঠনে এই টাকা কীভাবে নিয়োজিত করা যায়।’

এদিন ড. ইউনুস বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী কাউন্সিলের সাথেও। সেখানে ইউনুস দৃঢ় কণ্ঠে জানান, ব্যবসা বাণিজ্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামীর অর্থনীতি হবে দুর্নীতি মুক্ত, শ্রমিক পাবে তার ন্যায্য অধিকার। তাই নতুন বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ইকোনমিক কো-অপারেশন, ট্রেড, রোহিঙ্গা ইস্যু, কাউন্টার টেরোরিজম, লেবার ইস্যু, এন্টি করাপশন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এদিন প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেসের সাথেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান গুতেরেস। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটের সঙ্গেও এদিন একান্তই বৈঠক করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। সেখানে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতাকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মাধ্যমে বিচার করা যায় সেই সহযোগিতা চান ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস।

শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের জন্য প্রাথমিকভাবে যে কাজটা করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের সাথে কথা হয়েছে। স্যারের (য. ইউনূসের) ইনভাইটেশনের পরে জাতিসংঘ একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন পাঠিয়েছে। সেই ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন কাজ করুক, তারা তাদের রিপোর্টটা দিক। কী হলো? কেন হলো? কারা এটার সঙ্গে জড়িত? আমরা তো সবাই জানি। কিন্তু জাতিসংঘ তো তারা একটা সিস্টেমেটিক রাস্তায় কাজ করে। ইনভেস্টিগেশন করবে, সেখানে দেখবে কারা কারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, কার অর্ডারে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক একটা গণহত্যা হয়েছে। এটা তাদের রিপোর্টে আসুক। তারপর পরবর্তী বিষয় যে এটা আইসিসি তে যাবে নাকি এটা ডোমেস্টিকে যাবে। সেটা তো পরের বিষয়, আগে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন কাজ করছে, তারা গত এক, দুই সপ্তাহজুড়ে কাজ করছে। আরও কাজ করুক, তাদের পুরো রিপোর্টটা হোক।’

এছাড়া ড. ইউনুসের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশকে পানি নিষ্কাশন, বন্যা মোকাবেলা ও কৃষিতে সহায়তার আশ্বাস দেন নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশ সংস্কারের ১৮ মাস পর নির্বাচনের পরিকল্পনা ড. ইউনূসের

আপডেট সময় : ০৫:১৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও দেশ সংস্কার করার ১৮ মাস পরে দেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ও দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশকে সহায়তায় আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া জুলাই-আগস্টের গণহত্যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তদন্ত করে বিচার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ড. ইউনুস। জাতিসংঘে বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এদিকে, আজ (শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

২০১৪ সালে ১৫২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে, আর ২০২৪ সালে ডামি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন করে দেশে বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেষমেষ আগস্টে পতন হয় শেখ হাসিনার। দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে এবার জাতিসংঘে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিইবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সাথে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বৈঠকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ইউনুস। এসব শেষ করার ১৮ মাস পর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানান প্রধান উপদেষ্টা। কথা হয় দেশ পুনর্গঠনে জো বাইডেনের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়েও। এদিন বৈঠক হয় ইউরোপিয়ান কমিশনের সাথেও। বৈঠকে দু’পক্ষই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত ও দুর্নীতি দূর করতে সহায়তায় আশ্বাস দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘টাকাগুলো কীভাবে ফেরত আনা যায় সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এটা কিন্তু কষ্টসাধ্য বিষয়। এই বিষয়ে স্যার সবার সাথে কথা বলছেন। আজকেও বড় ইস্যু ছিল এটা যে ব্লিঙ্কেনের সাথের এই বৈঠক। এবং যুক্তরাষ্ট্র তার পুরো সাপোর্ট দেয়ার কথা বলেছে। বিদেশে বাংলাদেশের যে টাকা পাচার হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের টাকা, তাদের ট্যাক্সের টাকা কীভাবে দেশে ফেরত আনা যায় এবং দেশের পুনর্গঠনে এই টাকা কীভাবে নিয়োজিত করা যায়।’

এদিন ড. ইউনুস বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী কাউন্সিলের সাথেও। সেখানে ইউনুস দৃঢ় কণ্ঠে জানান, ব্যবসা বাণিজ্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামীর অর্থনীতি হবে দুর্নীতি মুক্ত, শ্রমিক পাবে তার ন্যায্য অধিকার। তাই নতুন বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ইকোনমিক কো-অপারেশন, ট্রেড, রোহিঙ্গা ইস্যু, কাউন্টার টেরোরিজম, লেবার ইস্যু, এন্টি করাপশন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এদিন প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেসের সাথেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান গুতেরেস। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটের সঙ্গেও এদিন একান্তই বৈঠক করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। সেখানে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতাকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মাধ্যমে বিচার করা যায় সেই সহযোগিতা চান ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস।

শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের জন্য প্রাথমিকভাবে যে কাজটা করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের সাথে কথা হয়েছে। স্যারের (য. ইউনূসের) ইনভাইটেশনের পরে জাতিসংঘ একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন পাঠিয়েছে। সেই ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন কাজ করুক, তারা তাদের রিপোর্টটা দিক। কী হলো? কেন হলো? কারা এটার সঙ্গে জড়িত? আমরা তো সবাই জানি। কিন্তু জাতিসংঘ তো তারা একটা সিস্টেমেটিক রাস্তায় কাজ করে। ইনভেস্টিগেশন করবে, সেখানে দেখবে কারা কারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, কার অর্ডারে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক একটা গণহত্যা হয়েছে। এটা তাদের রিপোর্টে আসুক। তারপর পরবর্তী বিষয় যে এটা আইসিসি তে যাবে নাকি এটা ডোমেস্টিকে যাবে। সেটা তো পরের বিষয়, আগে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ড ডিভিশন কাজ করছে, তারা গত এক, দুই সপ্তাহজুড়ে কাজ করছে। আরও কাজ করুক, তাদের পুরো রিপোর্টটা হোক।’

এছাড়া ড. ইউনুসের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশকে পানি নিষ্কাশন, বন্যা মোকাবেলা ও কৃষিতে সহায়তার আশ্বাস দেন নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের।