০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংস্কার-পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি বাজার দরে

রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এর প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে তারা জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। সবজির পাশাপাশি স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারেও। প্রতিদিনের দরকারি পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে।

দুই সপ্তাহ পর এখনও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকার নির্ধারিত ডিম ও মুরগির দাম। বরং ডিম ডজনে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১৮ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক লাফে অন্তত ৬০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ। এছাড়া ইলিশের সরবরাহ ভালো হলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বাসাবো ও খিলগাঁও, গুলশান, মালিবাগ, মিরপুর এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, করলা, বেগুন, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সব ধরনের শাক-সবজি সরবরাহ রয়েছে। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, পাতা কপি, শিমও রয়েছে বাজারে। এসব সবজির অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং বন্যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বৃষ্টি হলে বাজারে সবজি আসে কম। যে কারণে দাম একটু বেশি। তাছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন।

বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি প্রতি কেজি কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ১০০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির মধ্যে শিমের কেজি ২৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা।

লেবুর হালি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলুর কেজি ৬০ টাকা।

গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩১০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা।

এসব বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। মুরগির এক ডজন লাল ডিম ১৬০ টাকা, হাঁসের ডিমের ডজন ১৯০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকা।

বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, আদা ৩৫০ টাকা, রসুন ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাসাবো বাজারের বিক্রেতা রফিকুল বলেন, শীতের আগে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে হয়তো দাম কমে আসবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, চাষের কই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায়, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, গলসা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, টেংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, চাপিলা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। আকারভেদে ইলিশের কেজি ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালীর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব বলেন, বাজারে এমন কোনো মাছ নেই যেটার দাম বাড়তি নয়। কোনো মাছই কেনা যায় না অতিরিক্ত দামের কারণে। ইলিশ মাছ তো কেনা দূরের কথা, বর্তমানে পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছ কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ কখনো দেখা যায় না। প্রতিদিন বাজারে আসলে মাছের দাম শুনে হতাশ হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের।

মাছের বেশি দামের বিষয়ে উত্তর বাড্ডা বাজারের বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, মাছের দাম বাড়তি এটা নতুন কিছু না। দুই বছর আগে যখন মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, তখন থেকেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। আসলে আমাদের পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে মাছ কিনে আনতে হয়। আমাদের কেনা দাম বেশি, তাই খুচরা বাজারে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। পাঙাস, তেলাপিয়া, কই, রুই, কাতলার দাম মোটামুটি একই রকম থাকলেও অন্যান্য মাছের দাম কমে-বাড়ে করে। আগে যেখানে একজন ক্রেতা দুই কেজি মাছ কিনেছে, এখন দাম বাড়তির কারণে তারা এক কেজি মাছ কেনে। আবার অনেকে তার চেয়েও কম কেনে। ফলে আমাদের ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে।

এসব বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিত্যপণ্যের বাজারদর বিশ্লেষণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত সপ্তাহ জুড়ে আটা (প্যাকেট), পাম অয়েল (লুজ), রাইস ব্রান তেল (১ লিটার বোতল), পাম অয়েল সুপার, ডাল (দেশি), ডাল (নেপালী), মুগ ডাল (মান ভেদে), ছোলা (মান ভেদে), পেঁয়াজ (দেশি), রসুন (দেশি), শুকনা মরিচ (আমদানি), হলুদ (আমদানি), আদা (আমদানি), দারুচিনি, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, ডানো, চিনি, আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বেড়েছে।

এর বিপরীতে খোলা ও প্যাকেট ময়দা, সয়াবিন তেল (লুজ), সয়াবিন তেল (বোতল), সয়াবিন তেল (বোতল), অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ (আমদানি), শুকনা মরিচ (দেশি), হলুদ (দেশি), জিরা, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড), ফ্রেশ, মার্কস গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও দাবি করা হয় সংস্থারটির পক্ষ থেকে।

খিলগাঁও বাজারে কথা হয় সালাউদ্দিন নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে নানা অজুহাতে। কখনও বৃষ্টি, কখনও হরতাল-অবরোধ, কখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে। এগুলো যে শুধু অজুহাত তা এখন সবাই বুঝে গেছে।

তিনি বলেন, আগে গরুর মাংস কিনতে চিন্তা করতে হতো। এখন ডিম কিংবা সবজি কিনতে চিন্তা করতে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তের ভাগ্য। এসব নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ হয় না।

সংস্কার-পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি বাজার দরে

আপডেট : ০৪:৫২:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এর প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে তারা জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। সবজির পাশাপাশি স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারেও। প্রতিদিনের দরকারি পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে।

দুই সপ্তাহ পর এখনও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকার নির্ধারিত ডিম ও মুরগির দাম। বরং ডিম ডজনে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১৮ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক লাফে অন্তত ৬০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ। এছাড়া ইলিশের সরবরাহ ভালো হলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বাসাবো ও খিলগাঁও, গুলশান, মালিবাগ, মিরপুর এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, করলা, বেগুন, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সব ধরনের শাক-সবজি সরবরাহ রয়েছে। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, পাতা কপি, শিমও রয়েছে বাজারে। এসব সবজির অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং বন্যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বৃষ্টি হলে বাজারে সবজি আসে কম। যে কারণে দাম একটু বেশি। তাছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন।

বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি প্রতি কেজি কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ১০০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির মধ্যে শিমের কেজি ২৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা।

লেবুর হালি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলুর কেজি ৬০ টাকা।

গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩১০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা।

এসব বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। মুরগির এক ডজন লাল ডিম ১৬০ টাকা, হাঁসের ডিমের ডজন ১৯০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকা।

বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, আদা ৩৫০ টাকা, রসুন ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাসাবো বাজারের বিক্রেতা রফিকুল বলেন, শীতের আগে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে হয়তো দাম কমে আসবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, চাষের কই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায়, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, গলসা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, টেংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, চাপিলা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। আকারভেদে ইলিশের কেজি ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালীর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব বলেন, বাজারে এমন কোনো মাছ নেই যেটার দাম বাড়তি নয়। কোনো মাছই কেনা যায় না অতিরিক্ত দামের কারণে। ইলিশ মাছ তো কেনা দূরের কথা, বর্তমানে পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছ কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ কখনো দেখা যায় না। প্রতিদিন বাজারে আসলে মাছের দাম শুনে হতাশ হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের।

মাছের বেশি দামের বিষয়ে উত্তর বাড্ডা বাজারের বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, মাছের দাম বাড়তি এটা নতুন কিছু না। দুই বছর আগে যখন মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, তখন থেকেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। আসলে আমাদের পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে মাছ কিনে আনতে হয়। আমাদের কেনা দাম বেশি, তাই খুচরা বাজারে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। পাঙাস, তেলাপিয়া, কই, রুই, কাতলার দাম মোটামুটি একই রকম থাকলেও অন্যান্য মাছের দাম কমে-বাড়ে করে। আগে যেখানে একজন ক্রেতা দুই কেজি মাছ কিনেছে, এখন দাম বাড়তির কারণে তারা এক কেজি মাছ কেনে। আবার অনেকে তার চেয়েও কম কেনে। ফলে আমাদের ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে।

এসব বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিত্যপণ্যের বাজারদর বিশ্লেষণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত সপ্তাহ জুড়ে আটা (প্যাকেট), পাম অয়েল (লুজ), রাইস ব্রান তেল (১ লিটার বোতল), পাম অয়েল সুপার, ডাল (দেশি), ডাল (নেপালী), মুগ ডাল (মান ভেদে), ছোলা (মান ভেদে), পেঁয়াজ (দেশি), রসুন (দেশি), শুকনা মরিচ (আমদানি), হলুদ (আমদানি), আদা (আমদানি), দারুচিনি, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, ডানো, চিনি, আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বেড়েছে।

এর বিপরীতে খোলা ও প্যাকেট ময়দা, সয়াবিন তেল (লুজ), সয়াবিন তেল (বোতল), সয়াবিন তেল (বোতল), অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ (আমদানি), শুকনা মরিচ (দেশি), হলুদ (দেশি), জিরা, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড), ফ্রেশ, মার্কস গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও দাবি করা হয় সংস্থারটির পক্ষ থেকে।

খিলগাঁও বাজারে কথা হয় সালাউদ্দিন নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে নানা অজুহাতে। কখনও বৃষ্টি, কখনও হরতাল-অবরোধ, কখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে। এগুলো যে শুধু অজুহাত তা এখন সবাই বুঝে গেছে।

তিনি বলেন, আগে গরুর মাংস কিনতে চিন্তা করতে হতো। এখন ডিম কিংবা সবজি কিনতে চিন্তা করতে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তের ভাগ্য। এসব নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ হয় না।