আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অসবর নিয়েছেন ২০২১ সালে। এরপর চালিয়ে যাচ্ছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। গত বছর আইপিএল থেকেও বিদায় নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। বাকি ছিল কেবল ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল অধ্যায়)। টুর্নামেন্টের চলতি মৌসুম শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, মৌসুম শেষে পাকাপাকিভাবে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানবেন আগামী মাসে ৪১ এ পা দিতে যাওয়া এ অলরাউন্ডার।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার সিপিএলের সেন্ট লুসিয়া কিংসের বিপক্ষে ম্যাচের সপ্তম ওভারে ফাফ ডু প্লেসির ক্যাচ নিতে গিয়ে কুঁচকিতে চোট পান ব্রাভো। সেদিন পরে আর বল পারেননি ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের এ অলরাউন্ডার। এমনকি ব্যাটিংয়েও নেমেছিলেন ১১ নম্বরে। দুই বল খেলার পরই মাঠের বাইরে যেতে বাধ্য হন তিনি।
মাঠ ছাড়ার সময় আবেগী ব্রাভোর চোখে জল ছলছল করছিল। হয়তো তখনই বুঝে গিয়েছিলেন সম্ভাব্য পরিণতির কথা। হয়েছেও সেটাই। চোটের কারণে মৌসুম শেষ হয়ে গেছে ব্রাভোর। সেটি নিশ্চিত হতেই সব ধরনের ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের এক পোস্টে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রাভো।
সিপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে সফলতম খেলোয়াড়দের একজন ব্রাভো। ৪০ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন। এরমধ্যে ত্রিনবাগোর হয়েই জিতেছেন তিনবার। ১০৭ ম্যাচের সিপিএল ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১২৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে ১২৯.৩৩ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১ হাজার ১৫৫ রান করেছেন ব্রাভো।
শুধু সিপিএলেই নয়, ব্রাভোকে টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা বললেও বোধহয় ভুল হবে না। স্বীকৃত ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডার। সব ধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৫৮২ ম্যাচে ৬১৩ উইকেট শিকার করেছেন ব্রাভো। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাভোর গাওয়া ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানটি বেশ আলোচনা ছড়িয়েছিল।
খেলোয়াড়ি জীবনের পাশাপাশি গত এক বছর ধরে কোচিংয়ের দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন ব্রাভো। এ সময়ে আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের পাশাপাশি চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গেও কাজ করেছেন। এবার অবসর ঘোষণার পরই আইপিএলের আরেক দল কোলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে বিদায়ী বার্তায় ব্রাভো লিখেছেন, ‘আজ আমি সে খেলাটিকে বিদায় জানাতে চাই, যা আমাকে সবকিছু দিয়েছে। ৫ বছর বয়স থেকেই জানতাম, আমি এটা খেলতে চাই। আর এটা আমার ভাগ্যেই লেখা ছিল। আমার অন্য কিছুতে আগ্রহ ছিল না এবং আমার পুরো জীবন এ খেলায় উৎসর্গ করেছি। বিনিময়ে আমি ও আমার পরিবার যে স্বপ্নের জীবন চেয়েছিলাম, সেটা পেয়েছি। সে কারণে (ক্রিকেটের প্রতি) আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’
২০০৪ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ব্রাভোর। থামলেন দীর্ঘ দুই দশক পর। এ নিয়ে ব্রাভো লিখেছেন, ‘পেশাদার ক্রিকেটে ২১ বছরের অবিশ্বাস্য এক যাত্রা, যা ছিল উত্থান-পতনে ভরপুর।’
ব্রাভো যোগ করেন, ‘আমার হৃদয় চালিয়ে যেতে চায়, কিন্তু শরীর ব্যথা ও ধকল আর সহ্য করতে পারছে না। আমি নিজেকে এমন অবস্থানে ঠেলে দিতে পারব না, যেখানে সতীর্থ, ভক্ত কিংবা যে দলের প্রতিনিধিত্ব করছি, তারা আমার জন্য হতাশ হবে। তাই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খেলাটি থেকে অবসর ঘোষণা করছি। আজ চ্যাম্পিয়ন বিদায় জানাচ্ছে।’