ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধের হুংকার তেহরানের
- আপডেট সময় : ০২:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে
৩১ অক্টোবর ২০২৩ থেকে থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর, এই গেল ১১ মাসে ইসরাইলি হামলায় নিহত হন, ফুয়াদ শোকর, ইসমাইল হানিয়া এমনকি হাসান নাসরাল্লাহর মতো হিজবুল্লাহ ও হামাসের অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা। বিশেষ করে জুলাইয়ে খোদ ইরানের ভূমিতেই হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইসরাইলকে চরম শাস্তি দেয়ার হুংকার দেয় তেহরান। যদিও দৃশ্যত কোন হামলা বা প্রতিশোধ নিতে দেখা যায়নি ইরানকে।
তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জবাবে ইসরাইলকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরান। সম্প্রতি লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা নিহত হওয়ার পর আবারও প্রতিশোধের হুংকার তেহরানের। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমাদের সাথে সরাসরি বড় ধরনের সংঘাতে জড়ানোর আশঙ্কা থাকায় ইসরাইলে হামলার আগে ইরানকে অন্তত দু’বার ভাবতে হবে।
হাসান নাসরাল্লাহ’র মৃত্যুতে প্রজাতন্ত্রের ক্ষোভ, তুর্কিয়ে বা মিশরের সহমর্মিতা, এমনকি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কণ্ঠে প্রতিশোধের আগুন- কোনো কিছুতেই মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য ধরে রাখার রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারছে না ইরান। বরং, বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের যুদ্ধ লেবাননের সাথে নয়। তাদের প্রতিপক্ষ মূলত হিজবুল্লাহ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়ায় আন্তর্জাতিক আইনেও ইসরাইলকে আটকানো যাবে না। বরং ইরান বুঝে শুনে পদক্ষেপ না নিলে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রের থেকে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
স্টিমসন সেন্টারের ফেলো কাওয়া হাসান বলেন, ‘ইরান কৌশলগত কারণে বিপাকে আছে। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কূটনৈতিকভাবে এমন জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশটি। তাদের অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। তবে কখন, কোথায় এবং কীভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত- ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে তা ঠিক করতে হবে। ইরান বড় ধরনের কোনো হামলা করলে, ইসরাইলের পাশাপাশি পশ্চিমাদের সাথে সংঘাতে জড়ানো আশঙ্কা আছে। এমনটা হলে, মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে।’
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগলিক দূরত্বের কারণে বৈরুতে সরাসরি সেনাবাহিনী পাঠানোর পথে হাঁটবে না তেহরান। সেনা সহায়তা দেয়া ছাড়া ইরানের এমন আলাদা কোনো সক্ষমতা নেই, যা এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহ’র কাজে আসতে পারে। আর সশস্ত্র যোদ্ধাদের বৈরুতে পাঠালে লেবাননে সরাসরি সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারে তেল আবিব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হামাস নেতা হানিয়া ও হিজবুল্লাহ নেতার মৃত্যুর পর এ ধরণের কোনো পদক্ষেপ নেয়াটা ইরানের জন্য চূড়ান্ত বোকামি হবে। কারণ ইরান তার প্রভাবশালী নেতাদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখবে- সে প্রশ্নই সবার আগে সামনে আসছে।
ইউএস এয়ার ফোর্সের সাবেক জেনারেল ডেভিড ডেপটুলা বলেন, ‘একটা বিষয় নিয়ে কেউই তেমন কিছু বলছেন না। সেটা হচ্ছে, এই মুহূর্তে ইরানের নেতাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। তারা একপ্রকার মৃত্যুর নোটিশ হাতে নিয়ে ঘুরছেন। বিশেষ করে হাসান নাসরাল্লাহ’র মৃত্যুর পর এটা পরিষ্কার ইরান পাল্টা হামলা করলে, এর পরিণতির জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ইরান সমর্থিত দুই সশস্ত্র সংগঠনের নেতার ওপর ইসরাইল যেভাবে চড়াও হয়েছে তাতে করে তেহরানের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সব মহলে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বিষয়টা দূর থেকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ইসরাইলের সাথে সংঘাতে জড়ালে তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। বরং, কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেয়াটাই বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে- এমন অভিমত তাদের।