গাজা ও লেবাননের পর এবার ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় ইয়েমেনে মারা গেছেন ৪ জন। এদিকে, লেবানন জুড়েও হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। এতে নতুন করে মারা গেছেন অন্তত তিনজন। এছাড়াও রোববার একদিনেই দেশটিতে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেছে ১০৫ জনের। এছাড়া, সীমান্তের কাছে সামরিক সরঞ্জামসহ সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এড়াতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
ইসরাইলি আগ্রাসন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হামাসের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তাদের হামলায় প্রাণ গেছে ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ। ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করে যাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহসহ ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এগিয়ে এসেছে ইরানও।
এ অবস্থায় ইসরাইলি বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র মোড় নেয় লেবাননের দিকে। পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে হতাহত হন লেবাননের কয়েক হাজার বাসিন্দা। এ ঘটনায় হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে চলে পাল্টাপালটি আক্রমণ। গেল শুক্রবার ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণ হারান হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এতেই ক্ষান্ত হয়নি নেতানিয়াহুর বাহিনী।
দক্ষিণ লেবানন থেকে শুরু করে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত চলছে তাদের আগ্রাসন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে লেবাননজুড়ে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে হাজারের ওপর। এছাড়াও, দেশটির সীমান্তের কাছে সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। যেকোনো সময় লেবাননের ভেতরে স্থল অভিযান শুরু করতে পারে নেতানিয়াহু বাহিনী- এমন আতঙ্কে লেবানন ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি লেবানিজ।
'আমাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। কখন কি পরিস্থিতি হয় আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।'
'আমরা এই যুদ্ধ ও সংঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। লেবানন একটি স্বাধীন দেশ, দখলের দেশ নয়।'
'ইসরাইল কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না। তারা একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়েছে।'
এদিকে, গেল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তারা এই হামলা চালায়। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই লোহিত সাগরে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালিয়ে প্রতিবাদ করে আসছে তারা।
জবাবে ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলে হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনী জানায়, রাস ইসা ও হুদেইদা সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পে হামলা চালিয়েছে তারা। একাধিক যুদ্ধবিমানের সহায়তায় এ হামলা চালায় তেল আবিব। এতে, এরইমধ্যে ৩ বিদ্যুৎ প্রকৌশলীসহ কয়েকজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
ইয়েমেনে ইসরাইলের এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের পরমাণু শক্তিধর দেশ ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরির জন্য ইসরাইলকে দায়ী করছে তেহরান।
ইরানের কৌশলগত বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দুষ্কৃতিকারী ইসরাইলি বাহিনী এক বছর ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এবার লেবাননের দিকে চোখ দিয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তারা তাদের অমানবিক আগ্রাসন চালিয়ে যাবে।'
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতা নিরসনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে প্রয়োজনীয় যা কিছু করার তার সবকিছুই তিনি করবেন বলেও জানান বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত অবশ্যই এড়াতে হবে। এটি সত্যিই প্রয়োজন। ইতোমধ্যে মার্কিন দূতাবাসের সব কর্মীদের বিষয়ে সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছি। আমরা ফ্রান্সসহ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।'
বিশ্বনেতাদের চাপেও দমানো যাচ্ছে না নেতানিয়াহুকে। এমন পরিস্থিতিতে সংঘাতে না জড়িয়ে কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপের তাগিদ বিশ্লেষকদের।