শ্রমিক অস্থিরতায় টালমাটাল তৈরি পোশাক শিল্প
- আপডেট সময় : ০২:২৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
টানা কয়েক মাস ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, পটপরিবর্তন আর শ্রমিক অস্থিরতায় তৈরি পোশাক শিল্পে যে নেতিবাচক ধাক্কা লেগেছে, যা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। একদিকে অনেক ক্রেতাই ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে, হারাতে হয়েছে বছরের সবচেয়ে বড় আদেশ। অন্যদিকে নতুন আদেশও মিলছে না অনেক কারখানার। এ থেকে উত্তরণে নীতি-সহায়তা চান পোশাক মালিকরা। তবে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়াকে অযৌক্তিক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
ছাত্র আন্দোলনে গেল জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশ যখন উত্তাল, তখনও শান্ত শীর্ষ রপ্তানি আয়ের পোশাক খাত।
এরপর গেল ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া আর পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতা নেয় অন্তবর্তী সরকার। আস্থা ফিরতে থাকে পোশাক খাতে। হঠাৎ ১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামে পোশাক শ্রমিকরা। সব দাবি মানা হলেও দীর্ঘ এক মাসে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারের ১ হাজার ২৮৩টি কারখানার মধ্যে ৬৬টি কারখানা বিভিন্ন কারণে এখনও বন্ধ।
এসময় কারখানা ভাঙচুর আর উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক পোশাক মালিক। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের তথ্য বলছে, বড় দুই বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পোশাক রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ইইউতে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ইউরোস্ট্যাট ও অটেক্সার তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউর ব্যবসায়ীরা পোশাকের আমদানি কমিয়েছেন ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ রপ্তানি হারিয়েছে ৪.৮৪ শতাংশ। ইতিবাচক ধারায় আছে শুধু কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও মরক্কো। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ক্রয়াদেশ কমিয়েছেন ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশ রপ্তানি হারিয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের রপ্তানি বাড়লেও বাকিদের কমেছে।
এতো গেল জুলাই পর্যন্ত হিসাব। আগস্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কি অবস্থা? আগস্ট সেপ্টেম্বরের প্রকৃত রপ্তানি তথ্য না পাওয়া গেলেও রপ্তানিকারকরা বলছেন, এসময় কমেছে ক্রয়াদেশ। তবে ক্রয়াদেশ বাতিল নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যদিও হারাতে হয়েছে বছরের সবচেয়ে বড় আদেশ।
বিজিএমইএ পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘অর্ডার যে কমছে সেটার বড় সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয়রা। ৭০ মিলিয়ন পিচ অর্ডার থাকে যেটা সম্পূর্ণটা ভারতে চলে গিয়েছে। ৪-৬ বিলিয়ন ডলার আমরা রপ্তানির নেগেটিভ দেখতে পাবো।’
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘বলার মতো অর্ডার ক্যান্সেল হয়নি যেটা হয়েছে বায়াররা ডিসকাউন্ট ও এয়ারে নিবে। এইসময়ে ক্যান্সেল করে না কারণ তাদের স্টোরে পণ্য তুলতে হয় যদি খুব বেশি দেরি না হয় বা সিজন না মিস হয়। ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ক্যান্সেল করে না তারা যা করে অর্ডারগুলো এয়ারে বা ডিসকাউন্টে নেই।’
ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা অন্যদেশে চলে যাওয়া নিয়ে ব্যবসাায়ীদের মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকলেও বিমানে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া নিয়ে একমত তারা। ক্রেতা ধরে রাখতে ক্ষতি জেনেও বিমানেই শিপমেন্ট করছেন তারা।
ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘দেরি হওয়ার কারণে আমাদের বিমানে অর্ডারগুলো পাঠাতে হচ্ছে। এতে খরচটা বেড়ে যাচ্ছে।’
তবে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়াকে অযৌক্তিক বলছেন অর্থনীতিবিদরা। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাড়তি মূল্যস্ফীতি, মার্কিন নির্বাচন আর বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দাকে দায়ী করছেন তারা।
সিপিডি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ বেকারত্ব। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাড়তি মূল্যস্ফীতি কারণে অর্ডার কম আসছে।’
তবে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে এ খাতে সরকারের বাড়তি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।