আগামী তিন দিনে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। ফলে এই সময়ের মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চর ও নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রহমানের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া ধরলা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (>৮৯ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কমে এসেছে। এতে আগামী ৩ দিন পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। এর প্রেক্ষিতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চর এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে রংপুর বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর (আপার আত্রাই, পুনর্ভবা, আপার করতোয়া, টাঙ্গন ও যমুনেশ্বরী নদী) পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি ইছামতি-যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন পর্যন্ত রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে বর্তমানে রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও এর ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অবস্থায় আগামী ৫ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও এর ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২ দিন পর্যন্ত গঙ্গা নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া পরবর্তী ৩ দিন গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের আত্রাই, বাঙালি, করতোয়া ও ছোট যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি মহানন্দা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের এসব নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন এসব নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সঙ্গে পরবর্তী ২ দিন পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার প্রেক্ষিতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এছাড়া সিলেটের অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর (মনু, ভুগাই, সোমেশ্বরী ও ধলাই নদী) পানি সমতল বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি খোয়াই ও যাদুকাটা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। এছাড়া সারিগোয়াইন ও কংস নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন এসব নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। সেই সঙ্গে পরবর্তী ২ দিন সিলেট বিভাগের এসব নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে মুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পাশাপাশি গোমতী, ফেনী, হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি সমতল বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। এছাড়া মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন এসব নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া পরবর্তী ২ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, গোমতী ও ফেনী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আর এই সময়ে হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বঙ্গোপসাগর এলাকায় কোনো লঘুচাপ না থাকায় আগামী ৩ দিন পর্যন্ত বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোয় স্বাভাবিক জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।