ভারী বৃষ্টিপাতের বন্যায় বিপর্যস্ত ভারত-নেপাল
- আপডেট সময় : ১২:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
বর্ষা মৌসুমের শেষ দুই সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও নেপাল। বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপ থাকার কারণে নেপাল-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। ভারতের বিহারে নদীর পানি আশঙ্কাজনক বাড়তে থাকায় জারি আছে বন্যা সতর্কতা। ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ বাসিন্দার পুনর্বাসন নিয়ে উদ্বেগে রাজ্য সরকার। এছাড়া, নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যা ১৯০ ছাড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ ৩২ জন।
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর একটি কাঁচা বাজারের দৃশ্য এটি। টানা দু’দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে শহরের অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক। জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ আছে অধিকাংশ হাসপাতাল, বাজারঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভূমিধসে ভিত নড়ে গেছে অসংখ্য বসতবাড়ি ও দোকানপাটের। অধিকাংশ বাড়ির ভেতরে কাদা পানি জমে থাকায়, থাকার জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে স্থানীয়দের।
বন্যার কারণে আমাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এখানে কাজ করতে এসেছি। একটা ভাড়া বাসায় থাকতাম। সব শেষ হয়ে গেছে। বন্যায় আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আর কি বলবো? বাসা ভাড়া বাকি, সন্তানের স্কুলে বেতন দিতে পারছি না।
রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে অন্তত ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। গত কয়েক বছরে এত বড় দুর্যোগ দেখেননি উপত্যকাটির বাসিন্দারা। বন্যা ও ভূমিধসে শুধু কাঠমাণ্ডুতেই মারা গেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গেল সপ্তাহে কাঠমাণ্ডুতে ২৪ ঘণ্টার যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে তা বিগত এক দশকের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও নেপাল সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলটি ভারতের। বর্ষা মৌসুমে শেষ সপ্তাহে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার ‘হট স্পট’ বলা হচ্ছে এই এলাকাটিকে। গত ৩ দিন ধরে ভারতের বিহার, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও নেপালে নদীর পানি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিহারের ধারভাঙ্গা ও সিতামারহি জেলার কোসি ও বাগমতি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইতে থাকায় সোমবার রাজ্যটিতে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মুজাফফারপুরে কাটরা বাকুচি পাওয়ার গ্রিড। এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে ৪৫ হাজার বসতবাড়ি। পানিতে ঘর ভেসে যাওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ১ লাখ বাসিন্দা।
পাওয়ার গ্রিড বন্ধ তাই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আমার বাড়িতে সম্পূর্ণ অন্ধকার। ঘরে পানি ঢুকে গেছে। গোয়ালঘরে বাছুরগুলো কাতরাচ্ছে, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। বন্যায় আমাদের সব ভেসে গেছে।
বোট অ্যাম্বুলেন্স ও বেশ কয়েকটি নৌকা ভাড়া নিয়ে সর্বাত্মক উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে বিহারের রাজ্য প্রশাসন। স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্র।
বিহারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সন্তোষ কুমার সুমন বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের ফোন আসলেই আমরা ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। বেশ কিছু নৌকা ভাড়া নেয়া হয়েছে। বোট অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্যে বন্যার্তদের উদ্ধার অভিযান চলছে পুরোদমে। শুকনো খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পরিদর্শন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে পানি সম্পদ বিভাগ।’
বৃষ্টিপাত থেমে গেলেও বন্যা ও ভূমিধসের ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিহার রাজ্য সরকার। কেন্দ্র থেকেও দেয়া হয়েছে সহায়তার আশ্বাস। তবে অক্টোবরের ৪ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কিছু রাজ্যে আগাম বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় দুর্যোগের স্থায়িত্ব আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।