পোশাক খাতে অতি নির্ভরশীলতা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সতর্কতা
- আপডেট সময় : ১১:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে
বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৬ ভাগই অর্জিত হয় পোশাক খাত থেকে। দেশের তৈরি পোশাক যতটা এগিয়ে এসেছে তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি অন্যান্য রপ্তানি পণ্য। এতে পোশাক খাতের উপর তৈরি হয়েছে একক নির্ভরশীলতা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পোশাক খাতের উপর অতি নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে বয়ে আনতে পারে মারাত্মক পরিণতি।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের জয়যাত্রা শুরু আশির দশক থেকে। তখন কর্মসংস্থানের নিম্নহারের মাঝে স্বল্পশিক্ষিত লাখো নারী-পুরুষের বেকারত্ব ঘোচে। এর ফলে পোশাক শিল্প আবির্ভূত হয় অনন্য বাতিঘর হয়ে। সেই শিল্প দুই দশকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে। তবে এ শিল্পের ওপর গেল কয়েকবছর ধরে মাঝে মাঝেই আসছে নানামুখী আঘাত ও বিপর্যয়।
বহুমুখী সংকটে বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে পোশাক খাতের ৪৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা এবং গেল বছর ৫৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতটি। ইউরোপ-আমেরিকা অঞ্চল থেকে রপ্তানি আয় যেমন কমছে, তেমনি নতুন রপ্তানি আদেশও কমছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি গণআন্দোলন এবং প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের নেতিবাচক প্রভাব।
এরমধ্যে নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রতিযোগিতা- যার মধ্যে রয়েছে ভারতের নতুন করে এই পোশাক খাতে গুরুত্ব দেয়া। এতে তাদের বেড়েছে ক্রয়াদেশও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা আরএমজিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে এভাবে কাজ করছি। তার যে ইনসেনটিভ ছিল সেগুলো ধীরে ধীরে উঠিয়ে নেয়ার একটা প্রকোপ চলছে। আমরা যখন সে প্রক্রিয় উঠিয়ে নেয়া শুরু করেছি ঠিক সে সময় ভারত সরকার বাজার দখলের জন্য তারা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। গত মাসের কথা বললে, বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্য বলছে, গেল অর্থবছরের ১১ মাসে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার ৮৫১ মিলিয়ন ডলার, এরপর রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
যেখান থেকে বছরে আয় হয়েছে প্রায় ৯শ ৬২ মিলিয়ন ডলার, কৃষিজাত পণ্য থেকে ৮শ ৪৭ মিলিয়ন ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রায় ৭শ ৮৫ মিলিয়ন ডলার, হোম টেক্সটাইলে প্রায় ৭শ’ ৭৭ মিলিয়ন ডলার, তুলা ও তুলাজাত পণ্য প্রায় ৫শ ০৩ মিলিয়ন ডলার, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টে প্রায় ৪শ ৮০ মিলিয়ন ডলার, পাদুকা শিল্পে প্রায় ৪শ ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, হিমায়িত মাছে প্রায় ৩শ ৪৫ মিলিয়ন ডলার।
পোশাক শিল্পে ভর করেই মূলত টিকে আছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও অর্থনীতি কেন শুধু তৈরি পোশাক নির্ভর? আর অন্যান্য শিল্পই বা কেন পারছে না গার্মেন্টসের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে? পোশাক খাত থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে সরকারই বা কি ভাবছে?
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটা বা দুইটার পণ্যের ওপর আমাদের যে নির্ভরশীলতা এটা আমাদের কমাতে হবে। আমরা সাতশো থেকে আটশোর মত পণ্য রপ্তানি করে থাকি। সবগুলো পটেনশিয়াল না। যেগুলো পটেনশিয়াল সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ করেছি।’
পোশাক খাত বাংলাদেশের জন্য সোনার ডিম পারা হাঁসের মতো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতি থেকে ঝুঁকি কমাতে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের কোনো বিকল্প নেই। এই খাতের উপর অতিনির্ভরতা ভবিষ্যতে দেশের পুরো অর্থনীতিকেই ফেলতে পারে গভীর সংকটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক বাজারে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে, সেখানে এই খাতের ওপর অতি-নির্ভরতা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।