কোন স্ট্যাটাসে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান? এ প্রশ্নে আইনজীবীরা বলছেন, তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছে নয়াদিল্লি। নইলে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পরই তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতো তাঁরা। আর বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাঁকে দেশে ফেরানোর প্রসঙ্গে ভারতের আইনজ্ঞদের দাবি, সেটি প্রযোজ্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে। রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য নয়।
ছাত্র-জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের সঙ্গে সই হওয়া সংশোধিত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী, কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট থাকা ব্যক্তিরা একে অন্যের দেশে ভিসা ছাড়াই থাকতে পারেন ৪৫ দিন। তবে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সে মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে ১৮ সেপ্টেম্বর।
এ ছাড়া গত মেয়াদের সব কূটনৈতিক পাসপোর্ট অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে থাকছেন কোন মর্যাদায়? তবে সেটি রাজনৈতিক আশ্রয় না শরণার্থী, তা নিয়ে নীরব ঢাকা-দিল্লি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সময়ের মেয়াদটা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও অনেকেই অনেক দেশে থাকছেন। আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইনি।’
তবে আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, শেখ হাসিনাকে ভারতে স্বাগত জানানো হয় সরকারিভাবে। ঢাকার চোখে তিনি পালিয়ে গেছেন আর ভারতের বক্তব্য, সেখানে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান শেখ হাসিনা। তাতে দিল্লীও রাজি হয়েছে। এসবই প্রমাণ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবেই দেখছে মোদি সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত তো তাঁকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু তা না করে শেখ হাসিনাকে সেখানে রেখে দেয়া হয়েছে সেটাই প্রমাণ করে ভারত তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি মর্যাদা সেখানে দিয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া শেখ হাসিনার ভারত ছেড়ে অন্য দেশে যাবার সুযোগ নেই।’
এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ দেড় শ’র বেশি মামলা হয়েছে সারা দেশে। বিচার শুরু হলে বন্দি-বিনিময় চুক্তির আওতায় তাঁকে ফেরাতে চাইবে ঢাকা। ভারতের আইনজীবী একে অসম্ভব বললেও, সম্ভব বলছেন দেশের আইনজীবীরা।
ভারতের আইনজীবী সুব্রত মুখার্জি বলেন, ‘ফেরত পাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না কারণ বন্দি বিনিময় চুক্তি শুধু অপরাধীদের বেলায় প্রযোজ্য। রাষ্ট্র প্রধানদের ক্ষেত্রে নয়। শেখ হাসিনাকে এই আইনে ফেলা যাবে না।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘ন্যূনতম এক বছরের সাজা হতে পারে এমন মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেই ভারত বা বাংলাদেশকে পলাতক বন্দি হস্তান্তর করতে হবে। সব ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই চুক্তি প্রযোজ্য, রাষ্ট্র প্রধানরাও এর আওতায় পড়ে তেমনই শেখ হাসিনাও।’
আর বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখছে দিল্লি। এ ক্ষেত্রে সামনে রাখছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐতিহাসিক সর্ম্পককে।